E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

করোনা মহামারি সরকারি হিসাবের চেয়ে ভয়ঙ্কর, ব্যাখ্যা ইকোনমিস্টের

২০২০ সেপ্টেম্বর ২৫ ১৩:৩১:২৮
করোনা মহামারি সরকারি হিসাবের চেয়ে ভয়ঙ্কর, ব্যাখ্যা ইকোনমিস্টের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কয়েক মাস আগেই মাদ্রিদ-মার্সেইলের মতো শহরগুলো ভেবেছিল তারা করোনাভাইরাস অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। কিন্তু সেই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। আবারও রোগীদের ভিড় জমেছে শহরগুলোর হাসপাতালে, ভরে উঠছে আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র)। সংক্রমণ ঠেকাতে আবারও বিধিনিষেধ ফিরিয়ে আনছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। সবখানেই মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের গুঞ্জন।

আটলান্টিকের ওপারেই যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা গোটা ইউরোপের চেয়ে বেশি। ইতোমধ্যেই দুই লাখ প্রাণহানির ভয়ঙ্কর মাইলফলক পেরিয়ে গেছে তারা। ভারতে টানা চার সপ্তাহ ধরে প্রতি সাতদিনে পাঁচ লাখের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। আক্রান্তের সংখ্যায় যেকোনও দিন তারা যুক্তরাষ্ট্রকে পেরিয়ে শীর্ষে চলে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী সংক্রমণের অবস্থা আরও ভয়াবহ। প্রতিদিন যেভাবে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে তাতে অক্টোবরের আগেই মোট প্রাণহানি ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা; যা পুরো ২০১৭ সাল জুড়ে ম্যালেরিয়ায় (৬ লাখ ২০ হাজার), আত্মহত্যা (৭ লাখ ৯৪ হাজার) বা এইচআইভি/এইডসে (৯ লাখ ৫৪ হাজার) মোট প্রাণহানির চেয়েও বেশি। এই হিসাব খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।

তবে করোনায় প্রাণহানির এই সংখ্যা মোট শনাক্ত রোগীর তুলনায় মাত্র তিন শতাংশ। এপর্যন্ত পাওয়া হিসাবে বিশ্বজুড়ে ৩ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সরকারি হিসাবের এই সংখ্যাটি প্রকৃত আক্রান্তের তুলনায় একেবারেই নগণ্য বলা যায়। সার্স-কভ-২ আক্রান্ত অনেকেই অসুস্থ হন না। বহু মানুষ রয়েছেন যারা আক্রান্ত হলেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তাদের গোনা হয়নি।

অনেক বিতর্ক, অনেক ভুল থাকা সত্ত্বেও মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট কতজন আক্রান্ত হয়েছেন তা জানার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে ‘সেরোসার্ভে’। এটি একধরনের জরিপ যেখানে বিজ্ঞানী বা সরকারি কর্মকর্তারা আক্রান্তদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে অ্যান্টিবডির খোঁজ করেন।

তবে বিভিন্ন কারণে সেরোসার্ভের ফলাফল ভুল হতে পারে। পরীক্ষকদের হাতে অন্য ভাইরাসের অ্যান্টিবডি আসতে পারে। অনেক টেস্টেই সামান্য পরিমাণে অ্যান্টবডি থাকলে তা ধরা পড়ে না। অনেক মানুষ, বিশেষ করে তরুণদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়া ছাড়াই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই চলে। ফলে করোনায় আক্রান্ত হলেও পরীক্ষার ফলাফল ভুল নেগেটিভ আসতে পারে। সব মিলিয়ে প্রকৃত আক্রান্তের তুলনায় সেরোসার্ভেতে পাওয়া সংখ্যা পাহাড়ের বিপরীতে নুড়িপাথর বলা চলে।

আবার অনেক দেশেই সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না; যেমন- চীন। তাদের সরকারি হিসাবে দেখানো আক্রান্ত-মৃতের সংখ্যা বিশ্বাস করেন না অনেকেই। এরপরও সংক্রমণের হার, মৃত্যুহার, টেস্টের পরিমাণ- প্রভৃতি হিসাব করে সেরোপজিটিভিটি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।

সম্প্রতি ১৯টি দেশে ২৭৯টি সেরোসার্ভে পরিচালনা করে পাওয়া তথ্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে যখন মহামারি মাত্র শুরু হয়েছিল মনে করা হয়, সেসময়ই দৈনিক ১০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছিলেন। মে মাসে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় দৈনিক পাঁচ লাখে।

অনিশ্চয়তা ও সন্দেহ থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী এপর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ থেকে ৭৩ কোটির মাঝামাঝি। এটি বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬ দশমিক ৪ থেকে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ মাত্র। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও তাদের সেরোসার্ভের ফল প্রকাশ করেনি। তবে বিশ্বের অন্তত ১০ শতাংশ মানুষ প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করছে তারা।

সরকারি হিসাবগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যার পাশাপাশি মৃত্যুহারকেও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। কারণ, বহু মানুষ করোনা টেস্ট ছাড়াই মারা গেছেন। এক্ষেত্রে প্রকৃত মৃত্যুসংখ্যা জানার একটি উপায় হচ্ছে, গত বছর মৃতের সংখ্যার সঙ্গে এবছর মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যার তুলনা করা। সেক্ষেত্রে চলতি বছর বাড়তি প্রাণহানিগুলোই করোনায় মৃত্যু বলে ধরে নিতে হবে। সাধারণত সরকারি পরিসংখ্যানে মৃত্যুর কারণটি গোপন বা ভুল থাকলেও কেউ যে মারা গেছেন, সেটিতে অন্তত ভুল হয় না। দ্য ইকোনমিস্ট।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test