E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তীব্র গরমে চাপের মুখে ফ্রান্সের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো

২০২২ আগস্ট ১৭ ০০:৩১:৪৯
তীব্র গরমে চাপের মুখে ফ্রান্সের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউরোপের অন্য দেশগুলোর মতো কয়েক সপ্তাহ ধরে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পুড়ছে ফ্রান্সও। এতে দেশটিতে নদীগুলোর পানি কমে গেলেও পারমাণবিক বিদ্যুৎনির্ভরতা বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকে সরে আসার কোনো লক্ষণ নেই ফরাসি সরকারের। ফ্রান্সের জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশই পূরণ হয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ থেকে। বিশ্বের আর কোনো দেশ পারমাণবিক বিদ্যুতের ওপর এতটা নির্ভরশীল নয়। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহের টানা গরমে ফ্রান্সের পারমাণবিক চুল্লিগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে। খবর ডয়েচে ভেলের।

ফ্রান্সের ৫৬টি পারমাণবিক চুল্লি রয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি চুল্লি পরিকল্পিত অথবা অস্বাভাবিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

এসব পারমাণবিক চুল্লি ঠান্ডা করতে সাধারণত নদীর পানি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তা করতে গিয়ে নদীর পানির তাপমাত্রা যেন নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম না করে, সে বিষয়ে আইন রয়েছে দেশটিতে। তবে চলমান সংকটের কারণে অন্তত আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেই আইন প্রয়োগ স্থগিত করেছে ফরাসি সরকার।

এতে ফ্রান্সের নদীগুলোর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। যেমন- দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গ্যারন নদীর পানির তাপমাত্রা প্রায় ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশকর্মী জ্য-পিয়ের ডেলফু। তিনি বলেন, বাস্তুতন্ত্রের ওপর ভয়ংকর প্রভাব ফেলবে জেনেও তারা কীভাবে চুল্লিগুলো চালু রাখে, আমি বুঝি না।

ডেলফু বলেন, তীব্র গরমে গ্যারন নদীর পানিপ্রবাহ প্রতি সেকেন্ডে ৫০ ঘনমিটারের নিচে নেমে গেছে, যা স্বাভাবিক সময়ে কয়েক হাজার থাকে। এর পরিস্থিতি আরও খারাপ করছে গলফ্যাশ পারমাণবিক চুল্লি। কারণ চুল্লি ঠান্ডা করতে আট ঘনমিটার পানি দরকার৷ কিন্তু শীতলীকরণ প্রক্রিয়া শেষে মাত্র ছয় ঘনমিটার পানি নদীতে ছাড়া হচ্ছে। বাকিটা বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যচক্রের ওপর প্রভাব পড়ছে। উষ্ণ পানি মাইক্রোঅ্যালজি (ক্ষুদ্র শৈবাল) ধ্বংস করে দেয়। এই অ্যালজিগুলো ছোট মাছের খাবার। আবার ছোট মাছ হচ্ছে বড় মাছের খাবার। এছাড়া উষ্ণ পানিতে ব্যাকটেরিয়া বেশি থাকে। ফলে এই পানিকে পানযোগ্য করতে বেশি রাসায়নিক ব্যবহার করতে হয়।

এ বিষয়ে ফ্রান্সের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী সংস্থা ইডিএফ’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংস্থাটির মুখপাত্র জানান, এখন পর্যন্ত পারমাণবিক চুল্লির কারণে আশপাশের জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

প্যারিস ইউনিভার্সিটি ডোফাইনের ক্লাইমেট ইকোনমি ডিরেক্টর আনা ক্রেটি জানান, বর্তমান পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সংস্কার ও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ফ্রান্স দেড়শ বিলিয়ন ইউরো বা ১৪ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য এমন বরাদ্দ না করলেও এ খাতের উন্নয়নে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমাতে নতুন আইন করছে ফরাসি সরকার।

ইউরোপের মধ্যে ফ্রান্সই একমাত্র দেশ, যে ২০২০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে ইইউ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। ২০২০ সালের মধ্যে সদস্য দেশগুলোর জ্বালানি চাহিদার ২৩ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে মেটানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ফ্রান্স তা করতে পেরেছে মাত্র ১৯ শতাংশ।

(ওএস/এএস/আগস্ট ১৭, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test