E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মা-বাবা নেই, ঘর নেই

গাজার শিশুদের জন্য এবার অন্যরকম ঈদ

২০২৪ এপ্রিল ১১ ১০:২২:১৫
গাজার শিশুদের জন্য এবার অন্যরকম ঈদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রমজান মাসের শেষে সারা বিশ্বের মুসলিমরা যখন সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরে উদযাপনে মেতেছে, তখন মলিন মুখে সময় পার করছে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শিশুরা। তারা বলছে, তাদের কাছ থেকে ঈদের আনন্দ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, গাজা ভূখণ্ডে যত মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তাদের মধ্যে এক শতাংশ শিশু অনাথ হয়েছে অথবা তাদের দেখাশোনা করার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক কেউ নেই।

এমন কোনো ক্যাম্প নেই, যেখানকার শিশুরা একজন বা বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছে। যেমন- ১১ বছরের লায়ান ও তার ১৮ মাস বয়সী বোন সিয়ার। তাদের পরিবারে একমাত্র তারাই এখন বেঁচে রয়েছে।

পরিবারের বাকি সদস্যরা গত অক্টোবরে বোমা হামলা থেকে বাঁচতে রাফাহর আল আহলি হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেসময় তারা নিহত হন।

লায়ান সেই রাতে পরিবারের ৩৫ সদস্যকে হারায়। তাদের মধ্যে বাবা–মা এবং পাঁচ ভাই-বোনও ছিলেন।

‘আমাদের পরিবার হাসপাতালে পৌঁছানোর মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করে। আমি জেগে উঠে দেখি, পরিবারের সদস্যরা টুকরো টুকরো হয়ে গেছেন।

গাজা শহরের জনাকীর্ণ হাসপাতালে এই হামলায় শত শত লোক নিহত হন। এ ঘটনায় ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ এবং ইসরায়েল একে অপরকে দায়ী করেছিল।

বর্তমানে লায়ান তার আন্টি এবং বড় কাজিন আলীর সঙ্গে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের একটি তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে।

যুদ্ধে সবকিছু নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আগে শিশুটি ঈদের আগে বাবা-মায়ের সঙ্গে নতুন জামা কিনতে যেত। তারা ঈদে বিস্কুট বানাতো, যা স্থানীয়ভাবে ‘মামোল’ নামে পরিচিত। সবাই মিলে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ করতো।

কিন্তু এ বছর আর কোনো পারিবারিক জমায়েত হবে না। ‘এই ঈদে কেউ আমাদের দেখতে আসবে না,’ বলছিল ১১ বছরের লায়ান।

যুদ্ধের কারণে কয়েক হাজার লোক তাদের চাকরি হারিয়েছে। অর্থস্বল্পতায় থাকলেও ২৪ বছর বয়সী আলী এই মুহূর্তে লায়ান ও তার বোনের দেখাশোনা করছেন। তিনি নিজের সামর্থ্যের মধ্যে তাদের ও অন্য কাজিনদের পোশাক ও খেলনা কিনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

যুদ্ধের আগে গাজা শহরের নিকটবর্তী জৈতুনে লায়ানের কাজিনরা তাদের পরিবারের অন্যান্য ৪৩ সদস্যের সঙ্গে একটি ভবনে থাকতেন। এখন যারা বেঁচে রয়েছেন, তারা দক্ষিণ গাজার একটি তাঁবুতে থাকেন।

লায়ানের মতো তার আরেক কাজিন ১৪ বছর বয়সী মাহমুদও যুদ্ধে অনাথ হয়েছে। মাহমুদ তার বাবা-মা ও বেশিরভাগ ভাই-বোনকে আল আহলি হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার একই ঘটনায় হারিয়েছে।

যখন ওই হামলা হয় তখন সে বাইরে পানি আনতে গিয়েছিল। ‘আমি ফিরে এসে দেখি সবাই মৃত। যা দেখলাম তাতে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম, বলছিল মাহমুদ।

যুদ্ধের আগে মাহমুদ বডি বিল্ডিং চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখতো এবং মিশরে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতিও নিচ্ছিল। এখন তার একমাত্র স্বপ্ন উত্তর গাজায় নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়া।

সে বলে, এই ঈদে কোনো আনন্দ নেই। আমরা আগে ঈদের সময় রাস্তায় বাতি জ্বালাতাম। কিন্তু এখন সাজসজ্জা হিসেবে বড়জোর তাঁবুতে একটি দড়ি ঝুলাতে পারি।

ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ৪৩ হাজারের বেশি শিশু বাস করে, যাদের একজন বা বাবা-মা উভয়ই নেই।

সঠিক পরিসংখ্যান বের করা কঠিন, কিন্তু ইউনিসেফ ধারণা করছে, গাজা ভূখণ্ডে অন্তত ১৭ হাজার শিশু সঙ্গীহীন অবস্থায় রয়েছে অথবা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১১, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test