E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

চীনের ‘নতুন মহাপ্রাচীর’, নেপালে শঙ্কার ছায়া! 

২০২৪ অক্টোবর ১৪ ১৭:৩০:২৯
চীনের ‘নতুন মহাপ্রাচীর’, নেপালে শঙ্কার ছায়া! 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নেপালের হুমলা জেলায় চীনের বিরুদ্ধে সীমান্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় জনগণ বলছেন, চীনের এই কর্মকাণ্ড তাদের জমি ও জীবনযাত্রার ওপর হুমকি সৃষ্টি করছে। তিব্বত ও নেপালের মধ্যে থাকা এই সীমান্তে চীনা বাহিনী প্রাচীর ও কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নজরদারি ক্যামেরা ও সশস্ত্র প্রহরী। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এ খবর জানিয়েছে। এলাকাটি তিব্বতের উচ্চ মালভূমিতে অবস্থিত। সেখানে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থনে একটি বিশাল বার্তা লেখা রয়েছে: ‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টি দীর্ঘজীবী হোক’। এটি ৬০০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি পাহাড়ের ওপর খোদাই করা, যা মহাকাশ থেকে দৃশ্যমান।

নেপালের নেতারা এই সমস্যাগুলোকে স্বীকার করতে নারাজ। চীনের অর্থনৈতিক ও আদর্শিক প্রভাবের অধীনে থাকায়, নেপাল সরকার ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদনের সুপারিশ অগ্রাহ্য করেছে। ওই প্রতিবেদনে হুমলায় সীমান্ত লঙ্ঘনের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছিল।

২০২১ সালে নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, জরিপকারীরা ও পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি পরিদর্শন দল গঠন করা হয়। তারা ১৯৬০ সালের মানচিত্র ব্যবহার করে সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রতিবেদনে চীনের সামান্য অগ্রসরতার কথা উল্লেখ করা হয়। তবে এর চেয়েও বড় বিষয় ছিল চীনের ভৌগোলিক কৌশলগত উদ্দেশ্য নিয়ে উদ্বেগ।

চীনের সরকার নিজেদের শান্তির প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে। গত বছর চীনের ন্যাশনাল এথনিক অ্যাফেয়ার্স কমিশনের প্রধান প্যান ইউয়ে বলেন, ‘চীন কখনও প্রতিবেশী দেশগুলোকে উপনিবেশ বানায়নি।’

তবে ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা। ১৯৭৯ সালে চীন ভিয়েতনামে অস্থায়ীভাবে আক্রমণ চালায় এবং ভারত-চীনের মধ্যে সীমান্ত যুদ্ধ হয়েছে। তিব্বতের সুরক্ষা ও আধুনিকীকরণের নামে চীন সেখানে অবকাঠামো গড়ে তুলেছে।

হিলসার সীমান্তবর্তী এলাকা দুই দেশের পৃথক জগৎকে আলাদা করে রেখেছে। তিব্বতের দিকে আধুনিক ভবন ও সুরক্ষিত সড়ক থাকলেও নেপালের অংশে কাঠের ঘর ও বিদ্যুৎহীন অবস্থা বিরাজমান।

জেলার বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, সীমান্তের কয়েকটি স্থানে চীন নেপালের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে। তারা আরও জানিয়েছেন, চীনা নিরাপত্তা বাহিনী নেপালের তিব্বতি জনগণের ধর্মীয় স্বাধীনতা রোধ করছে, বিশেষ করে দালাই লামার ছবি প্রদর্শনে বাধা দিচ্ছে। এছাড়া, চীনা সুরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে তিব্বতের শরণার্থীদের নেপালে পালিয়ে আসা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

নেপালের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন.পি. সাউদ বলেন, ‘সীমান্তের বিষয় কোনও গোপনীয়তা নয়’। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

পরবর্তীতে নেপালের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরজু রানা দেবা বলেন, তিনি চীনের বেড়া স্থাপন বা হুমলার প্রতিবেদন সম্পর্কে অবগত নন।

ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের চায়না পাওয়ার প্রজেক্টের একজন ফেলো ব্রায়ান হার্ট বলেন, চীন যদি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ তৈরি করে সুবিধা নিতে থাকে, তাহলে তা অন্যান্য দেশকে হুমকির মুখে ফেলবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নেপালের উচিত সীমান্ত নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা পুনরায় শুরু করা এবং জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো খোলাসা করা। নেপালের মতো ছোট দেশগুলোর পক্ষে চীনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কঠিন, তবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সমর্থন পেলে এ ব্যাপারে সমাধানের পথে এগোনো সম্ভব হতে পারে।

(এসএস/এসপি/অক্টোবর ১৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test