E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লাহোরে দুটি গির্জায় বোমা হামলায় নিহত ১৫

২০১৫ মার্চ ১৬ ১১:৩৩:১৪
লাহোরে দুটি গির্জায় বোমা হামলায় নিহত ১৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের লাহোরে বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। রবিবার প্রার্থনার সময় দুটি গির্জার বাইরে ওই বোমা হামলার ঘটনা ঘটে ।

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে দুটি বোমা হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন নিহত ও ৭০ জন আহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। রবিবার শহরের খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত এলাকা ইউহানাবাদে প্রার্থনা চলাকালে দুটি গির্জার বাইরে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর এএফপি ও রয়টার্সের।
পুলিশ জানিয়েছে, পাশাপাশি অবস্থিত একটি ক্যাথলিক এবং একটি প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জাকে লক্ষ্য করেই ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিস্ফোরণের পরপরই ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা সন্দেহভাজন দুজনকে হত্যা করেছে। তালেবান থেকে দলছুটদের সংগঠন জামাতুল আহরার ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে। দুটি হামলাই আত্মঘাতী বলে ধারণা করা হচ্ছে। জামাতুল আহরারও ওই হামলাকে আত্মঘাতী বলে বর্ণনা করেছে।
আমির মাসিহ নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ঘটনার সময় আমি গির্জার কাছে একটি দোকানে বসেছিলাম। একটি বিস্ফোরণের পরপরই আমি দ্রুত ঘটনাস্থলের উদ্দেশে ছুটতে শুরু করি। এ সময় দেখি, একটি গির্জায় ঢোকার চেষ্টা করার সময় এক ব্যক্তির সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হচ্ছে। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি বিস্ফোরণ ঘটান। আমির মাসিহ বলেন, আমি দেখলাম ওই ব্যক্তির দেহের একাংশ শূন্যে উঠে গেছে। তিনি বলেন, প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনাটি আত্মঘাতী হামলা কি না, তা পরিষ্কার নয়।
ইউহানাবাদে সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রায় এক লাখ মানুষের বাস। এ ঘটনার পর শোকাহত ও ক্ষুব্ধ খ্রিষ্টান সম্প্রদায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
উদ্ধারকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা শুরু করায় মৃতের হার কম হয়েছে। নাবিলা ঘাজানফার নামে পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কমপক্ষে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
পাস্তর ডেভিড নামের স্থানীয় এক যাজক বলেন, একটি গির্জার প্রবেশপথে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তখন ওই গির্জায় প্রার্থনা চলছিল। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে অপর গির্জায় আরেকটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। গির্জার দুটি ভবনের দূরত্ব প্রায় আধা কিলোমিটার।
হামলার জন্য পুলিশ এবং প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সমালোচনা করে স্থানীয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের হাজার হাজার লোক স্থানীয় রাস্তায় বিক্ষোভ করেন। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে লাহোরের প্রাদেশিক সরকারকে জনগণ ও তাদের সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ওই হামলাকে খ্রিষ্টানদের ওপর ‘নির্যাতন’ বলে উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়ে পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, ভয়াবহ ওই হামলার ঘটনায় তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছেন। পোপ বলেন, এটা খ্রিষ্টানদের গির্জা, যেখানে খ্রিষ্টানদের নির্যাতন করা হয়েছে। আমার ভাইদের রক্ত ঝরেছে কারণ একটাই, তাঁরা খ্রিষ্টান। প্রথাগত ভাষণ শেষে ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে জনসম্মুখে তিনি এসব কথা বলেন।
পাকিস্তানের ১৮ কোটি মানুষের ২ শতাংশ খ্রিষ্টান। পবিত্র কোরআন ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অবমাননার অভিযোগে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের খ্রিষ্টানসহ অন্য সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অনেকেরই অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় সরকার বিশেষ কিছুই করতে পারছে না। হামলার পর রাজনীতিকেরা দ্রুত শোক ও নিন্দা জানালেও কার্যকর পদক্ষেপ এবং নিরাপত্তার উন্নতি ঘটানোর ব্যাপারে তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায় না।
(ওএস/পিবি/মার্চ ১৬,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test