E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘আমি টার্গেট ছিলাম কিন্তু তারা নিলয়কে হত্যা করেছে’

২০১৫ আগস্ট ০৯ ১৪:৪২:০৫
‘আমি টার্গেট ছিলাম কিন্তু তারা নিলয়কে হত্যা করেছে’

নিউজ ডেস্ক : 'হত্যাকারীদের লক্ষ্য ছিলাম আমি। কিন্তু আমি জার্মানিতে চলে আসায় তারা নিলয়কে (নীলাদ্রি চ্যাটার্জি) খুন করেছে। সে আমার খুব ঘনিষ্ঠ ছিল। সবসময় সমর্থন দিত আমাকে। একমাত্র সে আমাকে সবসময় সতর্ক করে বলত, বিদেশে চলে যাও, তা না হলে তোমাকেও তারা খুন করবে। নিলয়ের হত্যার খবর পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি আমি।'

নীলাদ্রি হত্যার পর টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জার্মানিতে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্লগার ও প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদের ছেলে অনন্য আজাদ এ কথা বলেন। মুক্তমনা ও অসাম্প্রদায়িক নীলাদ্রি চ্যাটার্জি নিলয় নীল নামে ব্লগে লিখতেন। গত শুক্রবার রাজধানীতে গোড়ানে তার ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তাকে।

অনন্য আজাদকে উদ্ধৃত করে গতকাল শনিবার দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইটে কয়েক মাস আগে অনন্য আজাদকেও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। মৌলবাদীরা যে ৮৪ জন নিরীশ্বরবাদী বাংলাদেশি ব্লগারের তালিকা (হিটলিস্ট) করেছে সেই তালিকায় অনন্য আজাদের নামও রয়েছে।

অনন্য বলেন, 'নিলয় প্রতিভাবান ব্লগার ছিল। সে বিপদে ছিল। আগেই আমাকে সে এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল। নিলয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিল, কেউ তাকে অনুসরণ করছে। এ কারণে সহযোগিতা পেতে সে থানাতেও গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ তাকে সমর্থন বা নিরাপত্তা দেয়নি। তাই তার অস্তিত্ব মিলিয়ে গেল।'

অনন্য আক্ষেপ করে বলেন, বাংলাদেশে এখন শর্তহীনভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। যদি বাংলাদেশে বাঁচতে চান তাহলে আপনার মুখ বন্ধ রাখতে হবে। নিজের কলমটি ভেঙে মগজ ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলতে হবে। অন্ধ, মূক ও বধির হলে বাংলাদেশে ঝুঁকিমুক্ত হয়ে বসবাস করতে পারবেন। কেননা সে দেশে কোনো 'বাকস্বাধীনতা' নেই।

নীলাদ্রি হত্যার পর বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিন তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিদেশে থাকলেও বর্তমানে কোন দেশে রয়েছেন তা জানাননি তসলিমা।

ভারাক্রান্ত মনে তসলিমা বলেন, 'শুক্রবার দিনটি ছিল মুক্তমনা লেখকের জন্য আরেকটি বেদনার দিন। তসলিমা বলেন, 'নিলয়ের সঙ্গে আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতবিনিময় হতো। কিন্তু অভিজিৎ রায়কে হত্যা করার পর সে লেখালেখি বন্ধ করে দেয়। এক সময় সে গ্রামে চলে গিয়েছিল বলে শুনেছিলাম। কিন্তু ঢাকায় ফিরে আসার পর তাকে আবার টার্গেট করা হয়।'

তিনি বলেন, 'ওরা নিরীশ্বরবাদী ব্লগারদের হত্যা করছে। বিশেষ করে যারা হিন্দু ধর্মাবলম্বী পরিবার থেকে এসেছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা প্রথমে হত্যা করল অভিজিৎ রায়কে। এরপর অনন্ত বিজয় দাস এবং শেষে নিলয়কে।'

অনন্য আজাদ জানিয়েছেন, তিনি চলতি বছরের ২৯ জুন ঢাকা ছেড়ে জার্মানিতে এসেছেন। জীবননাশের হুমকি পাওয়া অন্য ব্লগারদের মতো তিনিও এসব হত্যার বিচার চেয়েছেন। অনন্য প্রশ্ন করেন, 'কেন বাংলাদেশ সরকার ব্লগারদের রক্ষায় এগিয়ে আসছে না? কেন প্রধানমন্ত্রী মৌলবাদীদের সমর্থন দিচ্ছেন?' অনন্য বাংলাদেশে ফিরে যেতে চান। কিন্তু সেটা কখন সম্ভব তা তিনি জানেন না।

অনন্য আজাদ অনুতাপ করে বলেন, 'গত জুনে ভারত আমাকে ভিসা দেয়নি। জার্মানিতে এসে তিনি ব্লগ লেখা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বলেন, এটা প্রমাণিত যে, বাংলাদেশ এখন আর ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র নয়। বর্তমানে এবং আগামীতেও দেশটি ইসলামী মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসেবেই থাকবে।'

মৌলবাদীদের হিটলিস্টের এক নম্বরে আছেন আরিফুর রহমান। তিনি এখন লন্ডনে বসবাস করছেন। নীলাদ্রি চ্যাটার্জির হত্যার খবর শুনে তিনি গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছেন।

লন্ডনে বসবাসরত আরিফুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, 'আমরা দুই দিক থেকেই চাপে রয়েছি। কারণ মৌলবাদী এবং সরকার দু'পক্ষই আমাদের ভয় পায়।'

লন্ডনে বসবাসরত অপর এক বাংলাদেশি ব্লগার সুশান্ত দাসগুপ্ত নীলাদ্রি হত্যার ঘটনায় খুব ভীতসম্ভ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। আগামীকাল সোমবার তার ঢাকা সফরের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এ ঘটনার পর সুশান্ত তার পূর্বনির্ধারিত সফরসূচি বাতিল করেছেন।

তিনি বলেন, 'আমার নামটিও আমার জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা আমি আমার ব্লগ ডটকম পরিচালনা করি। হিন্দু পরিবারে আমার জন্ম। আমার একটি কমিউনিটি ব্লগও আছে। যেটি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সমর্থক এবং সে নিয়ে ব্লগে লেখালেখি করি। সব মিলিয়ে আমি সাংঘাতিক সংকটে পড়েছি।'

মাহমুদুল হক মুনশি ঢাকা থেকে জানান, ব্লগাররা এখানে মারাত্মক বিপদে রয়েছেন। সরকারকে দেওয়া 'হিটলিস্ট' থেকে মৌলবাদীরা একে একে ব্লগারদের নির্মমভাবে হত্যা করছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকার মূলত কিছুই করছে না।'

(ওএস/এএস/আগস্ট ০৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test