E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান

২০১৫ আগস্ট ২৭ ১৭:৩৭:৩৭
সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিটে কি-নোট বক্তৃতায় বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রদানসহ প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ হাই কমিশন ও মিডাস টাস এশিয়া ইনস্টিটিউট (এমটিএ)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সিংগাপুরের দি ফুলারটন হোটেলে ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০১৫’-বিষয়ের উপর অনুষ্ঠিত সামিটে কি-নোট বক্তৃতায় একথা বলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করার কারণে অনেক দেশের বিনিয়োগকারীগণ এগিয়ে আসছেন। দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য গড়ে তোলা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতোমধ্যে জাপান, চীন এবং ভারতকে অর্থনৈতিক জোন গড়ে তুলতে জমি বরাদ্দ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে চট্রগ্রামে পাঁচশত একর জমির উপর নির্মিত রফতানি প্রত্রিয়াকরণ অঞ্চলের মধ্যে ২৫০ একর জমি কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন গড়ে তোলার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে যে কোন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীগণ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশকে একসময় তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। সে সময় বাংলাদেশের মাত্র ২৫টি পণ্য পৃথিবির ৬৮টি দেশে রফতানি করা হতো, মোট রফতানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন ৭২৯টি টি পণ্য পৃথিবির ১৯২টি দেশে রফতানি করছে, রফতানি আয় এখন ৩১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমাদের জিডিপিতে সার্ভিস সেক্টরের অবদান এখন ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং শিল্প খাতে ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা মোতাবেক রফতানি পণ্য সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন রফতানি বাজার সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে দেশের আইটি, চামড়া, ওষুধ, ফার্নিচার, জাহাজ নির্মাণকে আগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ববাজারে এ সকল পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে এখন বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, মুন্সিগঞ্জ জেলার বাউশিয়ায় ৪৯২ একর জমির উপর ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পাঁচশতটি তৈরি পোশাক কারখানা থাকবে, এখানে আড়াই লাখ শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পাবে। এখান থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরি পাশাক রফতানি করা সম্ভব হবে।

আগামী ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমান সরকার এর মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে একটি নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগ বান্ধব আকর্ষণীয় সুযোগ সুবিধা দিয়ে বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতি গ্রহণ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ এখন আকর্ষণীয় নিরাপদ বিনিয়োগ স্থান। এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার অনেকেই বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ শুরু করেছে। সরকার ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থনে আটটি রফতনি প্রক্রিয়া করণ অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ করছে। বর্তমানে দেশের রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলো রফতানিতে ১৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ অবদান রাখছে। বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ, দক্ষজনশক্তি, ট্যাক্স হ্রাস, পর্যাপ্ত শিল্পের কাঁচামাল যেমন চামড়া, পাট, হস্তশিল্প ইত্যাদি, স্বল্প মূল্যে দক্ষ যুব জনশক্তি, স্বল্পমূল্যে গ্যাস, পানি বিদ্যুতের সুব্যবস্থা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে।

পণ্য রফতানির জন্য নৌপথ, রেলপথ এবং আকাশ পথে সুব্যবস্থা আছে। ভারত, বাংলাদেশ, চীন, ভুটান, নেপাল মিলিতভাবে ইতোমধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বে অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি রফতানি সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি পণ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া, বেলারুশ, জাপান, নিউজিল্যান্ড, চিলি এবং নরওয়েতে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি রফতানি সুযোগ পাচ্ছে।

এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের তৈরি বেশির ভাগ পণ্যে ডিউটি ফ্রি বাজার সুবিধা দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপি গড় ৬ শতাংশ এর বেশি। দেশের রফতানি প্রবৃদ্ধি গত ১৫ বছরে গড়ে ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা বেড়েই চলেছে। চলতি অর্থবছর রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলাার এবং প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।


(ওএস/এএস/আগস্ট ২৭, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test