E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আয়লানের ডাকেই ঘুম ভাঙত বাবার, আয়লানের ঘুম ভাঙাবে কে!

২০১৫ সেপ্টেম্বর ০৪ ১৬:৪৬:০১
আয়লানের ডাকেই ঘুম ভাঙত বাবার, আয়লানের ঘুম ভাঙাবে কে!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তিন বছরের ছোট্ট শিশু আয়লান আর আট বছরের শিশু গালিবের ডাকেই প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙত বাবা আবদুল্লাহ কুর্দির। চোখ মেললেই শুরু হতো তিনজনের খেলা। এমন সুন্দরভাবেই সকালটা শুরু হতো বাবা আর দুই ছেলের। অথচ আজ এ সবই শুধু স্মৃতি।

ছোট্ট সেই আয়লানের নিথর দেহ গত বুধবার পাওয়া গেছে সাগরতীরে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া তাঁর ওই ছবিতে দেখা গেছে, তুরস্কের অন্যতম অবকাশ যাপন কেন্দ্র বোদরামের সৈকতে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে আয়লান। পরনে শখের লাল টি-শার্ট আর নীল প্যান্ট। ছবিটি কাঁদিয়েছে গোটা বিশ্বকে। পাশাপাশি সমালোচনার ঝড় বইছে ইউরোপের অভিবাসন নীতি নিয়ে।

গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে সিরিয়া ছেড়ে এখন ইউরোপের দিকে ছুটছে দেশটির হাজার হাজার মানুষ। নৌকায় করে সাগর পাড়ি দিয়ে পৌঁছাচ্ছেন তুরস্ক, ইতালি কিংবা গ্রিসে। এমনি একটি নৌকা বুধবার গ্রিস আর তুরস্কের মাঝামাঝি সাগরে ডুবে গিয়ে মারা যায় ১২ জন সিরীয় নাগরিক। এঁদেরই একজন ছোট্ট আয়লান।

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আয়লানের বাবা আবদুল্লাহ কুর্দ নৌকাডুবির সেই ভয়াবহ সময়ের কথা বলছিলেন।

বাবা বলেন, গ্রিসের কস দ্বীপ ছাড়ার একটু পরেই বড় একটি ঢেউ আছড়ে পড়ে নৌকাটির ওপর। যাত্রীদের কারও কথা না ভেবেই নৌকা থেকে নেমে সাঁতরাতে থাকেন মাঝি। এ সময় প্রাণপণে স্ত্রী ও সন্তানদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু পারেননি। মরিয়া হয়ে একসময় তিনি নিজেই নৌকাটি চালানোর চেষ্টা করেন। আর তখনই আছড়ে পড়ে আরেকটি ঢেউ। ততক্ষণে সব শেষ। নিজে কোনোমতে প্রাণে বাঁচলেও একে একে সাগরে ভেসে যায় তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলে।

পরে তুরস্কের পুলিশ সাগর থেকে লাশগুলো উদ্ধার করে।

ছেলেদের কথা বলতে গিয়ে দুঃখেও মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে বাবা আবদুল্লাহ কুর্দের। বলেন, ‘আমার বাচ্চারা ছিল অসাধারণ। ছোট্ট আয়লান ছিল খুব দুষ্টু। প্রতিদিন সকালে দুই ভাই আমার ঘুম ভাঙাত। তারপর শুরু হতো আমার সঙ্গে খেলা।’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘এখন সব শেষ।’

এই মর্মান্তিক ঘটনার পর মানবপাচারকারী সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে তুরস্কের পুলিশ। দেশটির সংবাদ সংস্থা দোগান বলছে, তাঁরা চারজনই সিরিয়ার নাগরিক।

আয়লানের এ ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ এরদোয়ান। জি ২০ সম্মেলন ডেকেছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এরদোয়ান বাণিজ্যিক নেতাদের বলেন, ভূমধ্যসাগর এখন অভিবাসীদের কবরে পরিণত হয়েছে। ইউরোপকেই এই শিশুর মৃত্যুর দায় নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। জার্মানির শ্রমমন্ত্রী আদ্রেয়াও ইউরোপের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ইউরোপ অভিবাসন প্রত্যাশী সংকট মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নকেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

(ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test