E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হত্যাকারী শনাক্ত  

নিউ ইয়র্কে চাঞ্চল্যকর ফাহিম হত্যার কারণ খুঁজে পেয়েছে পুলিশ

২০২০ জুলাই ১৭ ১৪:২৬:২৭
নিউ ইয়র্কে চাঞ্চল্যকর ফাহিম হত্যার কারণ খুঁজে পেয়েছে পুলিশ

প্রবাস ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে চাঞ্চল্যকর ফাহিম সালেহ হত্যাকান্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ। একদিনের তদন্তে ফাহিমের হত্যাকারীকে শনাক্ত এবং খুনের কারন জানতে পেরেছেন পুলিশ। খুনিদের গ্রেপ্তারে জোর তৎপরতা চলছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে। গত বুধবার (১৫ জুলাই) ম্যানহাটনে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে খুন হন পাঠাও-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ (৩৩)। ব্যবসায়িক লেনদেনের জেরে ফাহিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ কিংবা হত্যাকারী গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু প্রকাশ করবে না।মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট নিউ ইয়র্ক পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এ ধরনের হত্যাকান্ডে দুটি লক্ষ্য থাকে। একটি হচ্ছে, মাফিয়া স্টাইলে অন্যদের ভয়াবহতার বার্তা দেওয়া। অন্যটি হচ্ছে ব্যক্তিকে একদম শেষ করে দেওয়া। শেষের যুক্তিটিই এখানে প্রাধান্য পাচ্ছে। হত্যাকারী ফাহিমের মরদেহ টুকরো টুকরো করে ব্যাগে ভর্তি করে। এ ফাঁকে ধুয়ে মুছে রক্ত পরিষ্কার করে। ঘটনাস্থলে তেমন রক্ত পাওয়া যায়নি। কেউ আসছে বা দরজায় বেল দিচ্ছে, এমন ঘটনার পর হত্যাকারী সাততলা অ্যাপার্টমেন্টের পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায়। এ জন্য তাকে চাবি ব্যবহার করতে হয়েছে। ফলে এ ধরনের এক্সিট পরিকল্পনা আগে থেকেই নেওয়া ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এর মধ্যে ইলেকট্রিক করাতে ও অন্যত্র আঙুলের ছাপ পেয়েছে পুলিশ। পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নামলেও নিউ ইয়র্ক নগরী সর্বত্র এখন সিসি ক্যামেরার আওতায়। এসব ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও চিত্র দেখে হত্যাকারীকে চিহ্নিত করা গেছে। অনেকটা করোনাভাইরাসের কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের মতো হত্যাকারীকে ধরে ফেলতে পারবে বলে নিউ ইয়র্ক পুলিশের পক্ষ থেকে আভাস দেওয়া হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক পুলিশ ফাহিম সালেহর অ্যাপার্টমেন্টের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ উদ্ধার করেছে। সেখানে দেখা যায়, সোমবার শেষবার তিনি বাসায় প্রবেশ করার পর আর বের হননি। এ সময় সন্দেহভাজন খুনি হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক ও স্যুট পরিহিত অবস্থায় ব্রিফকেস নিয়ে ফাহিম সালেহর পেছনে যেতে দেখা যায়। খণ্ড-বিখণ্ড করে হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজন খুনি ‘অত্যন্ত পেশাদার’ বলে মন্তব্য করেছে পুলিশ। নিউ ইয়র্ক পুলিশ (এনওয়াইপিডি) ম্যানহাটনের ইস্ট হাউস্টন স্ট্রিটসংলগ্ন ফাহিম সালেহর অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট থেকে মঙ্গলবার তার খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের পর এ তথ্য জানিয়েছে।

ওই ব্যক্তি ফাহিমের সঙ্গে ভবনের সপ্তম তলায় তার অ্যাপার্টমেন্ট পর্যন্ত যান। এই ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন খুনি হিসেবে ধারণা করছে এনওয়াইপিডি। সোমবার থেকে ফাহিম সালেহর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে নিউ ইয়র্ক পুলিশকে টেলিফোনে জানান তার বোন। পরে পুলিশ ওই অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে ফাহিমের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে।

এক পুলিশ কর্মকর্তা নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি নিউজকে বলেন, সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তির হাতে একটি ব্রিফকেস ছিল। তাকে অনেক পেশাদার মনে হয়েছে। বাসায় ওঠার জন্য লিফট থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালেহকে ওই ব্যক্তি আঘাত করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাঠাওয়ের এই সহ-প্রতিষ্ঠাতা আঘাত পেয়ে মেঝেতে পড়ে যান। তাকে হত্যার পর সন্দেহভাজন ঘাতক অন্য কোনও পথ ব্যবহার করে সেখান থেকে পালিয়ে গেছেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন নিউ ইয়র্ক পুলিশের গোয়েন্দা শাখা।

নিউ ইয়র্ক পুলিশের মুখপাত্র সার্জেন্ট কার্লোস নিভস বলেন, আমরা একটি ধড় পেয়েছি, যার শরীর থেকে হাত, পা, মাথা বিচ্ছিন্ন ছিল। সবকিছুই ঘটনাস্থলে পাওয়া গেছে। তবে এই হত্যাকাণ্ডের কোনও উদ্দেশ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

সৌদি আরবে জন্মের পর নিউইয়র্কে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই তরুণ মিলিওনেয়ার গত বছর ম্যানহাটনে ২ দশমিক ২৫ মিলিয়নে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন। এই বিলাসবহুল বাসা নিয়ে প্রতিনিয়ত ইন্সটাগ্রামে ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতেন তিনি।

পাঠাওয়ের আদলে নাইজেরিয়া এবং কলম্বিয়ায় এমন আরও দুটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কোম্পানির মালিক ছিলেন ফাহিম সালেহ।

সৌদি আরবে ১৯৮৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন ফাহিম। তার বাবা সালেহ উদ্দিন বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে আর মা নোয়াখালীর। ফাহিম পড়াশোনা করেছেন ইনফরমেশন সিস্টেম নিয়ে আমেরিকার বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে। থাকতেন নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে।

এদিকে ফাহিম সালেহ খুনের ঘটনায় শোকের ছায়া পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনও কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বিবৃতিও দেওয়া হয়নি। তবে খুনিকে ধরতে পুলিশ জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন।

(ওএস/এসপি/জুলাই ১৭, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test