E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আমার জীবনের অবিস্মরণীয় ঘটনা

২০১৪ আগস্ট ২০ ১৪:২৪:২২
আমার জীবনের অবিস্মরণীয় ঘটনা

প্রবীর বিকাশ সরকার : মানুষের জীবনে কখন কার সঙ্গে কার সাক্ষাৎ ঘটবে আগে থেকে বলা অসম্ভব। স্বপ্ন দেখা বা পরিকল্পনা করেও ঈপ্সিত মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয়ে ওঠে না জীবদ্দশায়। আসলে মানুষের অজানা নিয়তি তাকে সেদিকেই নিয়ে যায়। এটাকেই আমরা বলি অদৃষ্ট। এভাবে অদৃষ্টের কারণেই আমার জীবনে অনেক বিদগ্ধ ব্যক্তির হাতের স্পর্শ লাভ করেছি। যাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে বা কথা হবে স্বপ্নেও কখনো ভাবিনি।

তার প্রধান কারণই হচ্ছে সামাজিক অবস্থান। আমার যে সামাজিক অবস্থান একজন সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ হিসেবে সেই অবস্থানে থেকে আমার চেয়ে বহুগুণ ঊর্ধ্বে আসীন কোনো উচ্চপদস্থ ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়াটা বামুনের চাঁদ ধরার মতোই অলৌকিক ঘটনা বটে!

জাপানে দীর্ঘদিন বসবাসের ফলে দেশ-বিদেশে খ্যাত অনেক ব্যক্তির সঙ্গেই অপ্রত্যাশিতভাবে সাক্ষাৎ হয়েছে। তাঁদের মধ্যে জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আবে শিনজোও অন্যতম প্রধান। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়ে যায় অপ্রত্যাশিতভাবেই। এবং শুধু তাই নয়, কপালগুণে সেদিন একই জায়গায় আরও দুজন বিশিষ্ট মানুষের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তাঁরা হলেন জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাতোয়ামা ইউকিও এবং ‘পদ্মভূষণ’ সম্মানপ্রাপ্ত ভারতের তথ্যপ্রযুক্তির জনক (আইটি) সত্যনারায়াণ গঙ্গাধর পিত্রদা ওরফে সাম পিত্রদা।


এঁরা বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি তথাপি অনেকেই আমরা তাঁদের কথা জানি না। যেমন সাম পিত্রদার নাম আমি কখনো এর আগে শুনিনি ২০১১ সালের অনুষ্ঠানের পূর্ব পর্যন্ত। জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবে শিনজোওর নাম যেভাবে আমরা দেশে-বিদেশে শুনতে বা জানতে পারছি ঠিক সেরকম নাম শোনা যায় না হাতোয়ামা ইউকিওর। অথচ তিনি শুধু জাপানের রাজনৈতিক জগতে একজন উজ্জ্বল তারকাই নন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার থেকে তাঁর উত্থান ঘটেছে এবং পাশাপাশি ভুবনখ্যাত একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতার বংশধরও বটেন!

প্রভূত প্রভাবশালী খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে যে নিজে কিছু একটা হয়ে গেলাম এমন নচ্ছার ভাববার কোনো ভিত্তি নেই, কারণও নেই। তবে এইসব মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে পরে একটা অনুপ্রেরণা ও কিছু একটা করার আকাক্সক্ষা খুঁজে পাওয়া যায়। যাঁরা আপন দেশ-জাতি এবং সমগ্র মানবসভ্যতার জন্য কাজ করছেন তাঁদের দেখে তো আমরাও কিছু কাজ সীমিত ক্ষমতার মধ্যে করতে পারি! স্বপ্ন দেখতে পারি! এইজন্যই এঁরা সাধারণ মানুষের জীবনে স্বপ্নের মানুষ হিসেবে পরিদৃষ্ট।

আমি যখন জাপানে আসি ১৯৮৪ সালে তখন জাপানের ক্ষমতাসীন দল এলডিপি তথা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। এই দলটি ৫০ বছর সরকার পরিচালনা করেছে এবং আধুনিক আজকের জাপানকে গড়ে তুলেছে। সেই দলটি মাঝখানে কয়েক বছরের জন্য ক্ষমতা হারালে পরে দলপ্রধান হিসেবে আবে শিনজোও ২০০৬ সালে ক্ষমতায় আসেন এবং প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু মাত্র বছর খানেকের মাথায় তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন, প্রকাশ্যে স্বাস্থ্যগত কারণে হলেও অন্তরালে অন্যান্য কারণ বিদ্যমান ছিল। ২০১২ সালে পুনরায় তিনি নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন এবং প্রধানমন্ত্রী হন। এমন ঘটনা একেবারে বিরল না হলেও বিরল বলা যায় জাপানের মতো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর য়োশিদা শিগেরু পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তাঁর পরে হাতোয়ামা ইচিরোও তিনবার এবং কিশি নোবুসুকে দুবার। এই ধারাবাহিকতায় আবে শিনজোও হচ্ছেন চতুর্থ।


[০২]
এহেন প্রধানমন্ত্রী আবে শিনজোওর উত্থান ঘটেছে জাপানের কতিপয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের দুটি পরিবার থেকে এবং পিতৃ-মাতৃকুল উভয়েরই উত্তরাধিকারী তিনি। আবের পিতা এবং পিতামহ হচ্ছেন যথাক্রমে জাপানের প্রাক্তন প্রভাবশালী বিদেশমন্ত্রী আবে শিনতারোও এবং পিতামহ আবে কান ১৯৩৭-৪৬ পর্যন্ত ডায়েট তথা সংসদের প্রতিনিধিসভার সদস্য ছিলেন। তাঁরই পুত্র আবে শিনতারোও ছিলেন কট্টর ন্যাশনালিস্ট, এলডিপির অত্যন্ত প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ।

অন্যদিকে আবে শিনজোওর মাতামহ কিশি নোবসুকে আরও বেশি প্রভাবশালী এবং ন্যাশনালিস্ট ছিলেন। কিশির ছোটভাই সাতোও এইসুকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং ১৯৭৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। কিশি ১৯২০ সালে জাপান সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করেন টোকিও ইম্পেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেয়ার পর। যুদ্ধ চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী জেনারেল তোওজোও হিদেকির মন্ত্রীসভার মন্ত্রী ছিলেন। তথাকথিত ‘এ’ শ্রেণীভূক্ত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারাধীন ছিলেন কিন্তু রহস্যজনকভাবে মুক্তি পান। ১৯৪২ সালেই তিনি সংসদের নিম্নসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে জাপান সোস্যালিস্ট পার্টিতে যোগদান করলেও ছোটভাইয়ের পরামর্শে পরবর্তীকালে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। এই পার্টিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দুজন প্রধানমন্ত্রী যথাক্রমে য়োশিদা শিগেরু এবং হাতোয়ামা ইচিরোও। এই হাতোয়ামা ইচিরোওর পর পরবর্তীকালে দুদুবার প্রধানমন্ত্রী হতে সক্ষম হন কিশি। তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশে জন্ম এবং ভারতে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত একজন বাঙালির সঙ্গে সুগভীর হার্দিক বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। তিনি বিচারপতি ড.রাধাবিনোদ পাল টোকিও মিলিটারি ট্রাইব্যুনালের অন্যতম বিচারপতি ছিলেন এবং মিত্রশক্তি কর্তৃক যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত ২৮ জনকে নির্দোষ বলে রায় দিয়ে বিশ্বইতিহাস সৃষ্টি করেন। বিচারপতি পালের বিশাল রায়টি জাপানি ভাষায় প্রকাশিত হয় কিশির বদৌলতেই। যে কারণে কিশির দৌহিত্র আবে শিনজোও বিচারপতি পালের একনিষ্ঠ ভক্ত। ২০০৭ সালে তিনি কলকাতায় পালের পুত্র আইনজীবী প্রশান্ত পালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

আবে শিনজোও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর জাপানের অর্থনীতিতে এক নতুন গতি এনেছেন যাকে বলে ‘আবেনোমিক্স’। এই বছরের মে মাসে আবের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফর করেন। দুদেশের মধ্যে অর্থ-বাণিজ্য এবং উন্নয়নমূলক চুক্তি সম্পন্ন হয়। আবে ৬ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফর করবেন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, এশিয়ার আঞ্চলিক শান্তির বিষয়েও তিনি সোচ্চার। উত্তর কোরিয়ার গুপ্তদালাল কর্তৃক অপহরণকৃত জাপানি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার জন্যও তিনি দীর্ঘ বছর ধরে লড়াই করে চলেছেন। কট্টর জাতীয়তাবাদী হলেও তিনি মনেপ্রাণে আন্তর্জাতিকমনস্ক রাজনীতিবিদ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে গঠিত ‘আশিয়ান’ গোষ্ঠীতে তাঁর রয়েছে ব্যাপক প্রভাব এবং তাঁর প্রতি রয়েছে নেতৃবৃন্দের গভীর আস্থা। অন্যদিকে ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও আবের গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে বলে জানা যায়। আবে শিনজোও আমার খুব প্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং রাজনীতিবিদ।

[৩]
আগেই বলেছি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাতোয়ামা ইউকিও জাপানের প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছেন। তিনি ১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদের প্রতিনিধিসভার সদস্য নির্বাচিত হন জাপান ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে। তাঁর পিতামহের পিতা হাতোয়ামা কাজুও ছিলেন মেইজি যুগে (১৮৬৮-১৯১২) ডায়েটের প্রতিনিধিসভার স্পীকার। তাঁর পুত্র হাতোয়ামা ইচিরোও ছিলেন প্রধানমন্ত্রী এবং এলডিপির প্রথম প্রেসিডেন্ট। তাঁর পুত্র হাতোয়ামা ইইচিরোও ছিলেন কিছু দিনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রী। এই ইইচিরোওর পুত্রই ইউকিও ২০০৯ সালে দীর্ঘ একচেটিয়া শাসকদল এলডিপিকে পরাস্ত করে প্রধানমন্ত্রী হন। আদৌ কট্টর জাতীয়তাবাদী তিনি নন যদিওবা কিন্তু ভারত-বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে জোরদার করার পক্ষপাতী। উল্লেখ্য যে, হাতোয়ামা পরিবারের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার কেনেডি বংশের দহরমমহরম সম্পর্ক বিদ্যমান পিতামহের যুগ থেকেই। শুধু যে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হাতোয়ামা বংশ জাপানে মর্যাদাসম্পন্ন তাই নয়, জাপানের আর্থ-বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা রেখে চলেছে যে প্রতিষ্ঠানটি তার অন্যতম উত্তরাধিকারীও। সেই প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে ব্রিজস্টোন কর্পোরেশন-জাপান বিশ্বের সবচে বৃহৎ টায়ার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান যার প্রতিষ্ঠাতা হলেন ইউকিওর মাতামহ ইশিবাশি শোওজিরোও। ইউকিওর অনুজ হাতোয়ামা কুনিও একজন সুপ্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদ, প্রধানমন্ত্রী আসোও তারোওর মন্ত্রীসভায় মন্ত্রী ছিলেন ২০০৯ সালে।

[৪]
সত্যনারায়াণ গঙ্গারাম পিত্রদার নাম শুনেছি এবং দেখা হয়েছে এই টোকিওতেই প্রথম। উড়িষ্যায় ১৯৪২ সালে জন্ম পিত্রদা ভারতসহ বিশ্বের অগ্রসর একজন ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী এবং নীতিকুশলী। ভারতে ও আমেরিকার শিকাগোতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী সাম পিত্রদা ভাবছিলেন কীভাবে ভারতে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করা যায় সেই ১৯৮১ সালের দিকে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে ভারতে ফিরে গিয়ে স্বায়ত্বশাসিত একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করান সি-ডট নামে। মূলত এটা ছিল গবেষণা ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা। মাতৃভূমির উন্নয়নকল্পে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে পুনরায় ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করে টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রটিকে উন্নত করার লক্ষ্যে আত্মনিয়োগ করেন। ইন্দিরা গান্ধী মারা যাওয়ার পর তাঁর পুত্র রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁর উপদেষ্টা নিযুক্ত হন জনতথ্য অবকাঠামো এবং উদ্ভাবন দপ্তরের ১৯৮৭ সালে। তিনিই প্রথম চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন টেলিকম কমিশন ইন্ডিয়ার। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সময়ে টেলিযোগাযোগ, জলশক্তি, স্বাক্ষরতা, রোগপ্রতিরোধ, দুগ্ধ খামার এবং বীজ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত ৬টি মিশনের উপদেষ্টার কাজ করেছেন। বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনোভেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পিত্রদা ১৯৯৫ সালে ওয়ার্ল্ড টেল তথা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।। ২০০৫-৯ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মনোমোহন সিংএর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল নলেজ কমিশনেরও চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। তিনি ভারতে আইটি তথা তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্পের জনক বলে পরিচিত। তিনি কমপক্ষে ১০০টি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনী পেটেন্টের কর্ণধার। তিনি সি-সাম নামক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আমেরিকার শিকাগো শহরে রয়েছে এর প্রধান দপ্তর, শাখা সমূহ রয়েছে মুম্বাই, সিঙ্গাপুর, টোকিও এবং গুজরাটের ভাদোদরা শহরে।



তিনি একসময় জাতিসংঘেরও উপদেষ্টা ছিলেন এবং ১৯৯২ সালে তাঁর লিখিত ‘সাম পিত্রদা: এ বায়োগ্রাফি’ বেস্ট সেলারের মর্যাদা অর্জন করে। দেশবিদেশে তিনি একাধিক পুরস্কার ও পদকে ভূষিত হয়েছেন। তার মধ্যে ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় পদক ‘পদ্মভূষণ’ অন্যতম।

উপরোক্ত এই তিন বিশিষ্ট মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে ২০১১ সালে টোকিওতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়া জাপান গ্লোবাল পার্টনারশিপ সামিট-২০১১’ এর অনুষ্ঠানে। এটা তিনদিনব্যাপী ব্যাপকারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সম্ভবত এই ধরনের সামিট আর হয়নি জাপানে কখনো। আমি তখন বাংলাদেশে কুমিল্লায়।

জাপান প্রবাসী বন্ধুবর রফিকুল আলমের মাধ্যমে এই সামিটে যোগ দেয়ার সুযোগ লাভ করি। সেই বছর ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবর্ষ। সামিটের মূল আয়োজক ইন্ডিয়া সেন্টার ফাউন্ডেশন-জাপান। রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে এই সামিট করা যাচ্ছে না কারণ আধুনিককালে ভারত-জাপানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পুরোহিত হচ্ছেন জাপানের মনীষী শিল্পাচার্য ওকাকুরা তেনশিন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁদেরকে স্মরণ না করে এই সামিট করলে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হবে। ডাক পড়ল আমার। কারণ আমি দীর্ঘদিন ধরে জাপান-রবীন্দ্রনাথ সম্পর্ক নিয়ে কাজ করছি। প্রচুর দলিলপত্র ও আলোকচিত্র আমার কাছে রয়েছে। এই বিষয়টি জানতেন রফিকের বন্ধু ইন্ডিয়া সেন্টারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সাকামোতো তোঅরু। তিনি রফিককে অনুরোধ করলেন প্রবীর সরকার যাতে রবীন্দ্র-ওকাকুরাকে নিয়ে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী করে, ব্যবস্থা আমরা করব। সেইসঙ্গে যদি এই বিষয়ে কোনো পান্ডুলিপি থাকে তাহলে স্মারক গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশ করা হবে।

রফিকের টেলিফোন পেয়েই আমি জাপানে ছুটে আসি, বিমানের টিকিটও পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সাতামোতোসান। আর এই সামিটেই জাপানের চারজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীসহ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী য়োশিহিকো নোদা আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। সাম পিত্রদা এসেছিলেন ভারত সরকারের প্রতিনিধি হয়ে। বাণিজ্যিক তারকা আম্বানিও এসেছিলেন। খ্যাতিমান অনেক ভারতীয় এই সামিটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জাপানি ও ভারতীয় বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখে অভিভূত হয়েছিলেন কারণ ৩৪টি ছবিই ছিল একেবারে প্রাচীন এবং দুর্লভ। তাঁদের সম্মানে নৈশভোজে আমিও সপরিবারে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম আর সেখানেই উপরোক্ত তিনজনের সঙ্গে পরিচয় ঘটে এবং আমার গ্রন্থ যেটা ইন্ডিয়া সেন্টার ফাউন্ডেশন-জাপান প্রকাশ করেছে ‘রবীন্দ্রনাথ টেগোর: ইন্ডিয়া-জাপান কোপারেশন পার্সপেক্টিভ’ সেটি উপহার প্রদান করি।


বন্ধুবর রফিকুল আলমের বদান্যতায় অবিস্মরণীয় এই ঘটনাটি ঘটে আমার জীবনে, তাকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।

লেখক : জাপান প্রবাসী ও গবেষক

আলোকচিত্র : প্রথম ছবি, তখন এলডিপি প্রধান বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী আবে শিনজোরও সঙ্গে লেখক। দ্বিতীয় ছবি, হাতোয়ামা ইউকিওর সঙ্গে রফিকুল আলম এবং লেখক। তৃতীয় ছবি, সাম পিত্রদার সঙ্গে লেখক।
(এএস/আগস্ট ২০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test