E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মী নেবে গ্রিস, সংসদে বিল পাস

২০২২ জুলাই ২৩ ১৫:১১:৪৩
১৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মী নেবে গ্রিস, সংসদে বিল পাস

মতিউর রহমান মুন্না, এথেন্স (গ্রিস) থেকে : বাংলাদেশ থেকে কৃষিখাতে পাঁচ বছরের জন্য কর্মী নেয়ার সমঝোতা চুক্তিটি গ্রিক সংসদে অনুমোদন হয়েছে। দেশটিতে পাঁচ বছরের জন্য ১৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মীকে ভিসা দেওয়া হবে। প্রতি বছরে ৪ হাজার কর্মী করে মৌসুমি কর্মভিসায় আনা হবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক বিল পাসের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার হবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি।

সংসদে মন্ত্রী বলেন, আমাদের শ্রম বাজারে প্রত্যেক বছরে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার শ্রমিকের প্রয়োজন তাই আমরা বৈধভাবে মৌসুমি ভিসা প্রদান করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শ্রমিক আনবো।

চুক্তি অনুযায়ী বছরে নয় মাস কাজ ও তিন মাস দেশে কাটানোর শর্তে ৫ বছরের মৌসুমি ভিসায় বাংলাদেশ থেকে শিগগিরই এ কার্যক্রম শুরু হবে। প্রতিবছর ৪ হাজার করে মোট ১৫ হাজার কৃষি শ্রমিক আনা হবে। বাংলাদেশ থেকে কৃষি ও পশুপালনের জন্য মৌসুমি ভিসায় এসব শ্রমিক নিয়োগ হবে।

মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে কৃষি মালিকরা চাহিদা অনুসারে একাধিক কৃষি শ্রমিক আনার জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রত্যেক কর্মী একজন মালিকের আওতায় কাজের চুক্তি অনুযায়ী নয়াদিল্লির গ্রিক দূতাবাস থেকে ৫ বছরের ভিসা নিয়ে গ্রিসে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে নির্দিষ্ট মালিকের অধীনেই তিনি শুধুমাত্র কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশ থেকে ভিসায় আসা কর্মীদের প্রতি বছর ৯ মাস কাজ করার পরেই পরবর্তী ৩ মাস বাধ্যতামূলক বাংলাদেশে যেতে হবে। যাতে তারা পরিবারের সাথে মিলিত হতে পারেন। যদি কেউ নয় মাস কাজ করে পরবর্তী তিন মাস দেশে না যান তাহলে তাদের ভিসা পরবর্তী বছরের জন্য নবায়ন হবেনা। এছাড়াও এ ভিসায় সেঙ্গেনভূক্ত দেশ গ্রিসে আসার পরও তারা ইউরোপের অন্য কোন দেশে যেতে পারবেন না। এমনকি গ্রিসেও আজীবন থাকার জন্য তাদেরকে কোন স্থায়ী বৈধতা দেওয়া হবেনা। কোন কর্মীর দেশ থেকে নিজ পরিবার আনার কোন ধরনের সুযোগ থাকছে না এই ভিসায়। ৫ বছর শেষে তাদের গ্রিস থেকে চলে যেতে হবে। তবে পরবর্তীতে নির্দিষ্ট মালিকে অধীনে আবারো ভিসা নিয়ে গ্রিসে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে বলে জানান নোতিস মিতারাচি ।

সংসদে তিনি আরো বলেন- এখানে আসা কর্মীরা গ্রিক শ্রম আইন অনুসারে অন্যান্য সকল সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
পাশাপাশি গ্রিসে থাকা অবৈধ ১৫ হাজার অভিবাসীদের ৫ বছরের ভিসা প্রদান করে একই আইনে বৈধতার আওতায় আনা হবে বলে জানা যায়। এ ক্ষেত্রে অবৈধ অভিবাসীরা বৈধ হয়ে কৃষি শ্রমিক হিসেবে বছরে নয় মাস কাজ করার সুযোগ পাবেন এবং নিজ দেশে তিন মাস বাধ্যতামূলক যাতায়াতের জন্য সুযোগও থাকবে এতে। তবে কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং কারা এই বৈধতার আওতায় আসবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু এখনো জানা যায়নি।

গ্রিসের অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী আরো উল্লেখ করেছেন, এই মুহূর্তে গ্রিক অর্থনীতিতে বিপুল সংখ্যক জনবল প্রয়োজন। বিশেষত কৃষি খাতে, গার্হস্থ্য কাজ, পর্যটন এবং নির্মাণে খাতে প্রচুর কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, মানবসম্পদ নিয়োগ অবশ্যই আইনিভাবে হওয়া উচিত। মানবপাচার চক্র যেন কোনোভাবেই সুযোগ নিতে না পারে সেক্ষেত্রে নজর রাখতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে এই সমঝোতা স্মারক চুক্তিটি বৈধ অভিবাসন পদ্ধতির সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে আরো একটি বড় পদক্ষেপ এবং দেশের শ্রমিক সংকটের চাহিদা পূরণ করবে।

উল্লেখ্য- গ্রিসে বসবাস করা অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া দ্রুত এগোতে এবং বৈধ অভিবাসনের দরজা খুলে দিতে চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সমঝোতা স্মারক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন গ্রিসের অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ। নানা জল্পনা কল্পনার পর দুই দেশের মধ্য হওয়া এই সমঝোতা স্মারক বিলটি অবশেষে গত বৃহস্পতিবার ২১ জুলাই গ্রিক সংসদে পাস হয়েছে।

এ প্রক্রিয়ায় অভিবাসী আনা ছাড়াও গ্রিসে বসবাসরত অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে এই চুক্তিটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে টিভিতে সরাসরি বক্তব্য দিয়েছেলেন গ্রিসের অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি।

এদিকে চুক্তিটি সংসদে অনুমোধন হলেও কোন পক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগ করা হবে তা এখানো নির্ধারন হয়নি। তবে খুব দ্রুতই গেজেট আকারে প্রকাশ হবে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া কী হবে সেই বিষয়টি দুই দেশ মিলে ঠিক করবে।

এতে কোন মধ্যসত্ত্বভোগী থাকবে না জানা গেছে। আগ্রহী ব্যক্তি যেন কোনোভাবে দালাল বা প্রতারকের খপ্পরে না পড়েন সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে দু দেশের সরকারের পক্ষ থেকেই জানানো হয়েছে।

(এম/এসপি/জুলাই ২৩, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test