E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘রপ্তানি বানিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় ল্যাটিন আমেরিকাকে আরো প্রায়োরিটি দিতে হবে’

২০১৪ অক্টোবর ১৫ ১৬:০০:২৩
‘রপ্তানি বানিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় ল্যাটিন আমেরিকাকে আরো প্রায়োরিটি দিতে হবে’

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)’র দেয়া সর্বশেষ তথ্য মোতাবেক, চলতি অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে লক্ষমাত্রার চেয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় হ্রাস পেয়েছে ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ, বৈদেশিক মুদ্রায় যা প্রায় ৪২ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ কমেছে শুধু আগস্টেই। রপ্তানী বানিজ্যের চলমান ঘাটতি মোকাবেলায় ব্রাজিলসহ ল্যাটিন আমেরিকান দেশগুলোকে আরো বেশি অগ্রাধিকার দেয়া অত্যাবশ্যক বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত মিজারুল কায়েস। এতদঞ্চলের অর্থনৈতিক পরাশক্তি ব্রাজিলের রাজধানীতে অতি সম্প্রতি রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এই পেশাদার কূটনীতিক।

১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে রাষ্ট্রদূত মিজারুল কায়েস বলেন, “রপ্তানির বাজার আরো যথাযথভাবে সম্প্রসারনকল্পে ল্যাটিন আমেরিকার বিশাল ভূখন্ডটি আমাদের জন্য আসলেই অপার সম্ভাবনাময় এবং ইতিমধ্যে ব্রাজিল সহ আশপাশের দেশগুলো থেকে আমরা সুফলও পেতে শুরু করেছি। সরকারের সুদূরপ্রসারী টার্গেটের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে ব্রাজিল এবং মেক্সিকোতে বাংলাদেশ দূতাবাস জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে”। তিনি আরো জানান, “নিকট ভবিষ্যতে আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়াতেও পূর্ণাঙ্গ বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে”।

উল্লেখ্য করা যেতে পারে, কানাডার অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে আর্জেন্টিনা এবং নিউইয়র্কের পারমানেন্ট মিশন থেকে পেরু ও চিলি দেখা হয়েছে এ অবধি। প্রতিবেশী এই দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের বহুপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত মজবুত করতে ব্রাজিলের বাংলাদেশ দূতাবাসের ওপর দায়িত্ব দেয়া হলে ল্যাটিন আমেরিকায় রপ্তানী বানিজ্যে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত মিজারুল কায়েস। তিনি বলেন, “চলতি বছর অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে মেইড-ইন-বাংলাদেশের যে জোয়ার সৃষ্টি হয়, এতে করে বিভিন্ন স্পোর্টস আইটেম তথা বাংলাদেশের তৈরী পোষাক অভাবনীয় প্রভাব বিস্তার করেছিল ব্রাজিলের বাজারে। মূলতঃ বিশ্বকাপের বেনিফিশিয়ারি ছিলাম আমরা”।

নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০১৬ সালে ব্রাজিলেই অনুষ্ঠিত হবে অলিম্পিক গেমস এবং এক্ষেত্রেও প্রোডাক্ট ভিত্তিক কাজ করে মেইড-ইন-বাংলাদেশের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর”। ব্রাজিল সহ ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের জয়েন্টভেঞ্চার বিনিয়োগের অত্যাবশ্যক বলে জানান ঝানু কূটনীতিক মিজারুল কায়েস। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওভারসীস ইনভেস্টমেন্ট ইস্যুতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে এবং আশা করছি এর সুফল আমরা অচিরেই দেখতে পাবো”।

তিন বছর আগে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে মিজারুল কায়েসের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ল্যাটিন আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ ৮টি দেশ সফর করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পাশাপাশি ঢাকার বানিজ্য, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও কৃষি মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিনিধিদলটির ঐ ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন’-এর সফলতার প্রেক্ষিতেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে এতদঞ্চলের প্রথম দুটি বাংলাদেশ দূতাবাস স্থাপিত হয় ব্রাজিল ও মেক্সিকোতে।

সফল কূটনীতিক মিজারুল কায়েস ল্যাটিন আমেরিকাকে ঘিরে এমন একসময় আশার বাণী শোনালেন যখন বিশ্ববাজারে দারুণ চাপের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের রপ্তানি বানিজ্য। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে বাংলাদেশ যে বড় ধাক্কাটি খেয়েছে, তার কুলকিনারা করতে এখনো ব্যাপক কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। শ্রমমান নিয়ে প্রশ্ন তুলে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পন্যের ওপর থেকে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেছে। বাংলাদেশকে ১৬টি শর্ত দেয়া হয়েছে এই সুবিধা পুনরায় পেতে। জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল হচ্ছে না শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত।

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি পরবর্তী বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ চলতি বছরের শেষ নাগাদ রিভিউ করার কথা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের তরফ থেকে। পন্যের গুণগত মানের অপ্রতুলতার কারণে পানের ওপর ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। বিশ্বের বড় ব্র্যান্ডের ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে চামড়া ক্রয় কার্যক্রম বাতিল করেছে পরিবেশের অভিযোগ তুলে। আন্তর্জাতিক বাজারে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি বাংলাদেশের চিংড়ি শিল্পও। বিশ্বব্যাপী আমদানীকারকরা প্রশ্ন উত্থাপন করেছে বাংলাদেশের চিংড়ির মান নিয়ে।

রপ্তানি বানিজ্যের সংকটময় এই সময় কাটিয়ে উঠতে, সেই সাথে ‘ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি’ সুনিশ্চিত করতে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে বাংলাদেশকে আরো আন্তরিক হবার তাগিদ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। ল্যাটিন আমেরিকাকে ‘প্রায়োরিটি’ দিয়ে ব্রাজিল ও মেক্সিকোতে দূতাবাসে লোকবলের ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়াতেও পূর্ণাঙ্গ বাংলাদেশ দূতাবাস যত দ্রুত সম্ভব আলোর মুখ দেখবে, এমন প্রত্যাশা ল্যাটিন আমেরিকা থেকেই।

(এএস/অক্টোবর ১৫, ২০১৪)




পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test