E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার হুমকি ও ব্যাংক হ্যাকিংয়ের দায়ে বাংলাদেশি যুবকের কারাদন্ড

২০১৬ জুলাই ২০ ১৩:২৩:২০
যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার হুমকি ও ব্যাংক হ্যাকিংয়ের দায়ে বাংলাদেশি যুবকের কারাদন্ড

মিনারা হেলেন,নিউ ইয়র্ক : যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার হুমকি ও ব্যাংক হ্যাকিংয়ের দায়ে এক বাংলাদেশি যুবককে দুই বছরের কারাদন্ড দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। অনলাইনে হোয়াইট হাউজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে বোমা হামলা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের হুমকির ভূয়া তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্তির মামলায় স্থানীয় সময় সোমবার ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল আদলতের বিচারক র‌্যান্ডোলফ ডি মোস এ রায় প্রদান করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গনমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনের বাসিন্দা প্রবাসী মীর ইসলাম (২২) নামের বাংলাদেশি এ যুবক ‘জোস দ্য গড’ (Josh The God) নাম ব্যবহার করতেন। এছাড়াও তাদের একটি সংঘবদ্ধ চক্র মিলে ইউজিনাজি ডটকম (UGNazi.com) নামে একটি হ্যাকিং ওয়েবসাইট চালু করেন। যার মাধ্যমে শুধু ইউরোপের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৮০ মিলিয়ন ডলার চুরি করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৫০ হাজার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য রয়েছে। এ চক্রটি সর্বমোট ৪৩ কোম্পানির মোট ২০৫ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন খবরে উল্লেখ করা হয়।

ইন্টারনেটে নিউ ইয়র্কসহ অ্যারিজোনা, ওয়াশিংটন ডিসি, ভার্জিনিয়া ও ম্যারিল্যান্ড ইত্যাদি স্থানে তার অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়ে পুলিশের জরুরি নম্বর ৯১১ এ ফোন করে বিভিন্ন সময়ে বোমা হামলাসহ নানা ধরনের ভূয়া সংবাদ পুলিশকে জানিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন। গত বছরের ২৩ এপ্রিল সে হোয়াইট হাউজে বোমা হামলার হুমকি দেন বলে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে ২০১৩ সালের ২৭ এপ্রিল ম্যারিল্যান্ডের মন্টগোমারি কাউন্টির পুলিশকে জানানো হয় যে, বেথেস্ডাস্থ কংগ্রেসনাল কান্ট্রি ক্লাবের সন্নিকটে সিএনএন হোস্ট উল্ফের বাসায় এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। ২০১৩ সালের ৪ এপ্রিল ৯১১ এ ফোন করে জানানো হয় যে, ন্যাশনাল রাইফেলস্ এসাসিয়েশনের একটি প্রকল্পে নেতৃত্বদানরত ডব্লিউ এল নাকি তার স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করেছেন। একই বছরের ২২ মার্চ ৯১১ এ ফোন করে মীর ইসলাম অবহিত করেন যে, ইউনিভার্সিটি অব আরিজোনা ক্যাম্পাসে বোমা ফুটেছে এবং গোলাগুলি হচ্ছে। ক্যাম্পাসে এক বন্দুকধারি অবস্থান নিয়েছে। যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই গুলি করছে।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে কমপক্ষে ৫০টি ফোন করে বিব্রত করা হয় এফবিআই, সিআইএ এবং পুলিশ প্রশাসনকে। কোন কোন স্থানে ‘সোয়াট’ টিমকেও অভিযান চালাতে হয়েছে। মিশিগানের কংগ্রেসম্যানের বাসায় সন্ত্রাসী হামলা, ন্যাশনাল রাইফেল্স এসোসিয়েশনের প্রধান ওয়াইন লা পিয়েরের বাসায়, আরিজোনা ইউনিভার্সিটিতে বন্দুক হামলার কথা জানায় পুলিশকে। শুধু তাই নয়, ‘আন্ডারগ্রাউন্ড নাজি’ নামক একটি গ্রুপের পরিচয়ে সে অনেক মানুষের সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর চুরি করে তা অনলাইনে ছড়িয়ে দেন। মীর ইসলামের এমন অপকর্মের সহযোগী হিসেবে আরো ৪ যুবককে গ্রেফতার করা হয় ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চল, ভার্জিনিয়ার ফ্রেডারিকবার্গস এবং ফিনল্যান্ড থেকে।

২০০০ সালে মা-বাবার সাথে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন মীর ইসলাম। তখন তার বয়স ছিল ৬ বছর। গত বছরের জুলাই মাসে গ্রেফতারের পর থেকেই তাকে কারাগারে রাখা হয়। গত বছর ৬ জুলাই মাসে তিনি ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে নিজের দোষ স্বীকার করেন। অন্যের গোপন তথ্য চুরি করা, অনলাইনের অপব্যবহার-প্রতারণা, অন্যের সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বরের অপব্যবহার, কম্পিউটার প্রতারণা, এফবিআইসহ কেন্দ্রীয় সরকারের লোকজনকে অপদস্ত করা, আন্ত-স্টেট হুমকি-ধমকি প্রদানসহ গুরুতর কয়েকটি অপরাধে এই দোষ স্বীকার করেছিলেন। দীর্ঘ এক বছর পর তাকে গত সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেডারেল জজ র‌্যান্ডোলফ ডি মোস ২৪ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেন। এ দন্ডভোগের পর তাকে আরো ৩ বছর কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারিতে থাকতে হবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

আদালতের মাননীয় বিচারক এ রায়ের বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করেন ওয়াশিংটন ডিসির ইউএস এটর্নী চ্যানিং ডি ফিলিপস, আরিজোনা অঙ্গরাজ্যের ইউএস এটর্নী জন এস লিয়োনার্দে এবং এফবিআইয়ের ওয়াশিংটন ফিল্ড অফিসের সহকারি পরিচালক পোল এম এব্যাটে। মাননীয় বিচারককে মীর ইসলামের আইনজীবী দাবি করেন যে, তার মক্কেল মানসিকভাবে অসুস্থ।

দৈনিক ২৪ ঘন্টা কম্পিউটার গেমে লিপ্ত থাকার মধ্য দিয়ে এমন কান্ড ঘটিয়েছেন। তাকে কম শাস্তি দেয়া হলে পরবর্তীতে তার চিকিৎসা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে উল্লেখ করেন তার আইনজীবি।




(বিপি/এস/জুলাই ২০,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test