E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে মুসলিম-আমেরিকানদের নিরাপত্তার দাবি

২০১৬ আগস্ট ২০ ২০:৪০:৪৫
নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে মুসলিম-আমেরিকানদের নিরাপত্তার দাবি

নিউইয়র্ক থেকে হাকীকুল ইসলাম খোকন : ৩৬ ঘন্টার মধ্যে ঘাতককে গ্রেফতারের জন্যে নিউইয়র্কের পুলিশ বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি ইমামসহ দুই বাংলাদেশীকে হত্যার মোটিভ উদঘাটিত না হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীসহ মুসলিম-আমেরিকানদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার ঘটেছে।

১৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের সামনে নিহত ইমাম আলাউদ্দিন আকঞ্জি (৫৫) এবং তার সহকারি থারা উদ্দিন (৬৪) এর স্বজনসহ জুইশ, খ্রিস্টান এবং মুসলিম কম্যুনিটির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এক সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগের কথা ব্যক্ত করেন। তারা মসজিদ এবং মুসল্লীগণের যাতায়াত পথে টহল পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি সিসিটিভির পরিমাণও বাড়ানোর আহবান জানান।

গত ১৩ আগস্ট শনিবার ভর দুপুরে যোহর নামাজ শেষে ওজনপার্কে আল ফোরকান মসজিদ থেকে পায়ে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে এক দৃর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন এই মসজিদের ইমাম মাওলানা আলাউদ্দিন আকঞ্জি এবং তার প্রতিবেশী থারা উদ্দিন। পরদিন রবিবার দিবাগত রাতে ঘাতক হিসেবে অস্কার মরেল (৩৫)কে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এ সময় অস্কারের বাসা থেকে পয়েন্ট ৩৮ ক্যালিবারের একটি রিভলবার ও গুলি বর্ষণের সময় পরা একটি শার্টও পুলিশ উদ্ধার করেছে। রিভলবারের ভেতর যে গুলি ছিল, একই ধরনের গুলি পাওয়া যায় ইমামের মাথায়।
এরফলে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, এই অস্কারই ইমামসহ দু’জনকে গুলি করে হত্যা করেছে।

হত্যাকাণ্ডের পর আশপাশের সিসিটিভিতেও অস্কারের ছবি দেখা যায়। এতদসত্বেও কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে হাজির করা হলে ১৮ আগস্ট বৃহস্পতিবারও অস্কার ঐ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বলে কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট এটর্নীর অফিস থেকে জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সকলেই দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেন যে, ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক ভাবে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে। এতদসত্বেও এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত অস্কারের বিরুদ্ধে ‘হেইট ক্রাইম’র ধারা যুক্ত করা হয়নি। এটি সত্যি দু:খজনক। মুসলমান বলেই ইমামসহ দু’জনকে পেছন থেকে মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে গুলি করা হয়।

এদিকে, বৃহস্পতিবার আরেকটি অনুষ্ঠানে মিডিয়ার মুখোমুখী হলে সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো ইমাম হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে বলেন, ‘রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের নিষিদ্ধ করার আহবান জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম আমেরিকানদের আক্রমণের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। মুসলিম কম্যনিটিতে ভীতির সঞ্চার ঘটেছে-এটি খবই সত্য। এবং এজন্যে মূলত: দায়ী হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।’ ‘ন্উিইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের গোয়েন্দারা সর্বাত্মকভাবে কাজ করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা হত্যার মোটিভ উদঘাটনে সক্ষম হয়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা মোটিভ সম্পর্কে নিশ্চিত না হবো, ততক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যাপারে কিছুই বলা সম্ভব নয়’-উল্লেখ করেন মেয়র। এ ব্যাপারে ট্রাম্পের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বক্তব্য জানতে ই-মেইল পাঠানো হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাত পর্যন্ত তারা জবাব দেননি।

অস্কারকে পুনরায় সোমবার কোর্টে পেশ করা হবে। তাকে জামিনহীন আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে।

এদিকে সিটি কাউন্সিলের বারান্দায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ইমাম আকঞ্জির জামাতা মোমিন আহমেদ অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলেন, ‘আমাদের হৃদয় ভেঙ্গে গেছে। তিনি ছিলেন অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় মানুষ। তবে আমি এবং পরিবারের সবাই নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি অস্কারকে গ্রেফতারের জন্যে। একইসাথে আমরা জানতে চাই হত্যার কারণ এবং ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

এ সময় থারা উদ্দিনের শ্যালিকা আফিয়া উদ্দিন বলেন, ‘আমার ৬টি শিশু সন্তানই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। বাসার বাইরে যেতে চায় না।’

সংবাদ সম্মেলন থেকে সকল ধর্মীয় জনগোষ্ঠিকে এহেন ধর্ম-বিদ্বেষমূলক আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানানো হয়।













(এইচআইকে/এস/আগস্ট ২০, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test