E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জীবিত দেশে যেতে চেয়েছিলেন কবি শহীদ কাদরী

২০১৬ আগস্ট ২৯ ১৬:২৩:১৭
জীবিত দেশে যেতে চেয়েছিলেন কবি শহীদ কাদরী

নিউইয়র্ক থেকে এনা : বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শহীদ কাদরি। উচ্চ রক্তচাপ ও তাপমাত্রা জনিত কারণে গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় কবি শহীদ কাদরীকে গত ২২ আগস্ট ভর্তি করা হয় নর্থ শোর হাসপাতালে। বেশ কয়েকদিন কবিকে আইসিইউতে রাখা হয়। তার অবস্থার উন্নতি হলে তাকে গত ২৭ আগস্ট কেবিনে হস্তান্তার করা হয়। ডাক্তার কবি পত্নী রীনা কাদরীকে জানিয়েছিলেন, ২৯ আগস্ট তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে। সেই দিন কবি তার স্ত্রী নীরা কাদরীকে বলেছিলেন। এবার তিনি বাংলাদেশে যাবেন।

১৯৮৭ সালে দেশ ত্যাগের পর তিনি মৃত্যুর একদিন আগে বাংলাদেশে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। ভাগ্যের কী পরিহাস দীর্ঘ ৩৪ বছর পর অভিমান ভুলে বাংলাদেশে যাচ্ছেন লাশ একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি শহীদ কাদরী। গত ২৮ আগস্ট সকাল ৭ টায় লং আইল্যান্ডের নর্থ শোর মেডিকাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্নাল্লিাহে........... রাজিউন) মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তার মৃত্যুতে নিউইয়র্কসহ দেশ ও প্রবাসের শিল্প-সাহিত্য জগতে নেমে আসে শোকের ছায়া। দীর্ঘ সময় ধরে নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় বসবাসকারি প্রবাসী কবি শহীদ কাদরী ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন, আবার এই মাসে চলে গেলে সবাইকে ছেড়ে।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গার পর তার পরিবার স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে আসেন। ১৪ বছর বয়সে শহীদ কাদেরীর প্রথম কবিতা ‘এই শীতে’ বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

কাকতালীয়ভাবে সেদিনই তার মা মারা যান। ১৯৭১ সালে শহীদ কাদরী বিয়ে করেন নাজমুন নেসা পিয়ারীকে। ঠিক তার কয়েক বছর পর বন্ধুদের উপর অভিমান করে কবি শহীদ কাদরী ১৯৭৮ সালে দেশ ত্যাগ করে লন্ডনে চলে যান। সেখানে ৫ বছর থাকার পর চলে যান জার্মানিতে। জার্মানিতে তিন মাস থাকার পর চলে আসেন আমেরিকায়। আমেরিকায় তিনি নতুন সঙ্গী হিসেবে বেছে নেন তার এক ভক্ত নীরাকে। নীরা কাদরি নাম সেই নারী এবং সহধর্মীনি হিসেবে সদ্য প্রয়াত কবির শেষ দেখভালে দায়িত্বে ছিলেন।

এদিকে গত ২৮ আগষ্ট সন্ধ্যায় সদ্য প্রয়াত কবি শহীদ কাদরীর মরদেহ বিকেলে নিয়ে আসা হয় বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যামইকার মুসলিম সেন্টারে। প্রিয় কবিকে এক নজর দেখতে সেখানো জড়ো হয়েছে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসা কবি প্রেমী ও শুভানুধ্যায়ীরা।

দীর্ঘদিন দূরারোগ্য ব্যাধিতে থাকাবস্থায় নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিতে হয়েছে তাঁকে। অসম্ভব মানষিক শক্তির কবি জীবনের সাথে হেরে গেলেন। সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। জ্যামাইকার মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত বাদ মাগরিবের এ জানাজায় অংশ নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। কবি একমাত্র সন্তান আদনান কাদরিও শত শত মানুষের সাথে জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। সারাক্ষণ পাশে ছিলেন বাবার লাশের সাথে। আগামী ২৯ আগস্ট রাতে এমিরার্টেসে একটি ফ্লাইটে কবির মরদেহ বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর কবিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন ও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান। তারা আরো জানান, প্রয়াত কবির সকল ব্যয়ভার বহন করবে বাংলাদেশ সরকার। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্দেশ দিয়েছেন।

তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা। কবি শহীদ কাদরীর অনবদ্য এই পংক্তি লাইন শুনেনি এমন মানুষ কমই আছে বাংলায়। মাত্র ৪টি কাব্য গ্রন্থের মাধ্যমে কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান পাওয়া কবি, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন অনেকটা স্বেচ্ছায় নির্বাসিত হয়ে । এমনকি ২০১১ সালে একুশে পদক পাওয়ার পরও দেশে যাননি তিনি। দেশ প্রচন্ড ভালবাসতেন। যে কারণে আমেরিকার পাসপোর্ট নেননি। জীবিত অবস্থায় বহু অনুষ্ঠানে কবি বলেছিলেন, আমার দেশ বাংলাদেশ। আরো বলেছিলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো দেশত্যাগ করা।
তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা, ভয় নেই, এমন দিন এনে দেব, দেখ সেনাবাহিনী মাচপাস্ট করে নয়, শুধু গোলাপের তোড়া হাতে কুচক্ওায়াজ করবে, শুধু তোমাকেই স্যালুট করবে দিন রাত প্রিয়তমা।

বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় যুদ্ধ বিগ্রহ আর মানবিক বিপর্যয়ের চিত্রের বিপরিতে কবি লিখেছেন, সেনা বাহিনী বন্দুক নয়, গোলাপের তোড়া হাতেই তোমাকে কুচক্ওায়াজ করবে। ১৯৪৭ এর পরে বাংলা কবিতায় আধুনিক মনন ও জীবনবোধ সৃষ্টিতে যে কজন কবি উল্লেখযোগ্য তাদের মধ্য অন্যতম শহীদ কাদরী। ‘উত্তরাধিকার’, ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’, ‘কোথাও কোন ক্রন্দন নেই’ ও ‘আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও’ নামে কবিতা গ্রন্থের সংখ্যা মাত্র ৪টি, কিন্তু তাতেই কবি পৌছে গেছেন কোটি বাংলাভাষাভাষীর হৃদয়ে। ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি ও ২০১১ সালে তাকে একুশে পদক দেয়া হয়। ২০১১ সালেই কবির হাতে একুশের পদক তুলে দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত তৎকালীন স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে মোমেন। বাংলাদেশ থেকে পদকটি নিয়ে এসেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম।

(এনা/এএস/আগস্ট ২৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test