E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শেষ হলো মন্ট্রিয়লের একুশে বইমেলা

২০১৭ মার্চ ০১ ১৮:৩২:০০
শেষ হলো মন্ট্রিয়লের একুশে বইমেলা

সদেরা সুজন, কানাডা : গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০১৭ শনিবার কানাডা-বাংলাদেশ সলিডারিটির উদ্যোগে সফল ভাবে শেষ হলো কানাডার বৃহৎ লেখক,পাঠক মিলন মেলা, বইমেলা। সৃজনশীল সংগঠন কানাডা-বাংলাদেশ সলিডারিটির উদ্যোগে ৪১৯ সেন্টরক উইলিয়াম হিংস্টন ভবনে অনুষ্ঠিত হলো পঞ্চম একুশে বইমেলা কবিতা উৎসব ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।

বিগত চারটি সফল বইমেলার ধারাবাহিকতায় এবারও উইলিয়াম হিংস্টন ভবনের মূল লবি জুড়ে কবি লেখক, সাহিত্যিকদের সরব উপস্থিতি, বই প্রেমী পাঠক শ্রোতা আর সারিসারি বই, সুসজ্জিত বই ষ্টল, শিশু কিশোর-তরুনদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি, শহীদ মিনার, ফুল, বাংলাদেশের পতাকা, সাদা-কালো পোশাকের নরনারী, ক্যামেরা হাতে কানাডা এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রিন্টিং ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সরব তৎপরতা সব মিলে একুশের যে আবহ তৈরি হয়, কে বলবে স্থানটি দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দুরের মন্ট্রিয়ল নামের এক শহর। দিনব্যাপি বইমেলা আর সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক উৎসব ছিলো নানা আয়োজনে ভরপুর। সকাল থেকেই মেলায় অটোয়া টরন্টো, নিউইয়র্ক ও মন্ট্রিয়লের লেখক, সাহিত্যিক ও প্রকাশনী সংস্থা সমুহ তাদের ষ্টল সাজিয়ে বসেন। টরন্টোর এটিএন মেগা ষ্টোর ও নিউইয়র্কের মুক্তধারায় ছিল সবচেয়ে বেশী সংখ্যক বই। সব বয়সের এবং সব ধরনের বই এ দুটো ষ্টলে ছিল। একে একে ক্রেতা-দর্শকরা মেলায় আসতে থাকেন। ঘোরা ফেরা, আড্ডা, বইকেনা, পরিচিত স্বজনদের সাথে দেখা হওয়া সব মিলে তৈরি হয় এক উৎসব মুখর পরিবেশ। যদিও বাইরে ছিল শীতের ফেব্রুয়ারির তুমুল বৃষ্টি। প্রায় সারা দিনই বাইরের প্রবল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে মেলায় আসেন মন্ট্রিয়লের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ ও বই প্রেমীরা।

মেলার উদ্বোধন :
দুপুর দুইটায় মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বইমেলার প্রধান অতিথি আমেরিকা থেকে আগত লেখক সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস। সলিডারিটির সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া প্রধান অতিথি হাসান ফেরদৌস ও আমন্ত্রিত অতিথিরা সকলে মেলা প্রাঙ্গনে স্থাপিত হওয়া অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মেলার উদ্বোধন করেন। এসময় কন্ঠ শিরপঈ মাশিয়ার রহমান সোহেলের নের্তৃত্বে সমবেত ভাবে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো গানটি পরিবেশন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন টরন্টো থেকে আগত বাংলামেইল পত্রিকার সম্পাদক ও এনআরবি টিভির সিইও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শহীদুল ইসলাম মিন্টু, নিউইয়র্ক বইমেলার প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিৎ সাহা, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক লেখক তাজুল মোহাম্মদ, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহিবুর রহমান, ফ্রেঞ্চ স্কুল বোর্ড কমিশনার খোকন মনিরুজ্জামান, টরন্টোর বিখ্যাত বই প্রতিষ্ঠান এটিএন মেগা ষ্টোরের স্বত্তাধিকারী আনোয়ার শামসুদ্দোহা সহ অনেকেই ।

শিশু কিশোর প্রতিযোগিতা :
টরন্টো থেকে আগত চিত্রকর নূর জালালীর তত্ত্বাবধানে ত্রিশ জনেরও বেশী শিশু কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। দেড় ঘন্টা ব্যাপী প্রতিযোগিতায় ক ও খ গ্রুপের খুদে চিত্রকররা কাগজে রঙ পেন্সিল দিয়ে তুলে আনে বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের গ্রাম, ঋতু বৈচিত্র, শহীদ মিনার আর জাতীয় পতাকা। এ পর্বের প্রধান বিচারক ছিলেন নূর জালালী।

শিশু কিশোর বর্ণ পরিচয় প্রতিযোগিতা :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট অধ্যাপক ড. শিশির ভট্টাচার্য্য’র তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণ পরিচয় প্রতিযোগিতা। ইংরেজ ভাষী মন্ট্রিয়লে জন্ম আর বেড়ে উঠা শিশু কিশোররা অংশ গ্রহন করে এ পর্বে। খুবই ব্যতিক্রমধর্মী পর্বটির বিচারক ছিলেন শিশির ভট্টাচার্য্য।

সৈয়দ শামসুল হক মঞ্চ :
এবারের বইমেলা উৎসর্গ করা হয় সদ্য প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক এর প্রতি। মঞ্চের নাম করনও করা হয় এই কবির নামে। সারা দিন সৈয়দ শামসুল হক মুক্ত মঞ্চে একে একে বক্তব্য রাখেন, অংকুর প্রকাশনীর পক্ষ থেকে দিলীপ কর্মকার, লেখক কবি হামোম প্রমোদ, কবি সুলতানা সাজী, কবি আব্দুল হাসিব, ম্যাকগীল বাংলাদেশী স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের পক্ষে হেমন্তি পল, কনকর্ডিয়া স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি অনিকা রহমান, প্রিন্টিং ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পক্ষ থেকে মুক্ত মঞ্চে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক কাজী আলম বাবু-নির্বাহী বাংলামেইল, সদেরা সুজন-সিবিএনএ মাইটিভি, তানভীর ইউসুফ রনী-ইটিভি, যমুনা টিভি, খালিদ হোসেন শাহীন-বাংলার কন্ঠ, টিভি এশিয়া, ইকবাল কবীর-টিভি এশিয়া, আর টিভি এন টিভি, বাংলাদেশ সোসাইটি অব মন্ট্রিয়লের সভাপতি কামাল চৌধুরী।

টরন্টোর এটিএন মেগা ষ্টোর বই উপহার দেয় ম্যাকগীল ও কনকর্ডিয়া শিক্ষার্থীদের। টরন্টোর প্রখ্যাত বই প্রতিষ্ঠান এটিএন মেগা ষ্টোর জনপ্রিয় সব বই নিয়ে উপস্থিত ছিলেন মন্ট্রিয়লের একুশে বই মেলায়। এটিএন এর স্বত্ত্বাধীকারী আনোয়ার শামসুদ্দোহা মেলায় ষ্টল সহ উপস্থিত থাকা ম্যাকগীল ও কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে একটি করে বই উপহার দেন।

তারুণ্যের জয় জয়কার :
সলিডারিটির এবারের পঞ্চম একুশে বইমেলা দিনভরই মুখরিত ছিল নতুন প্রজন্মের উজ্জ্বল উপস্থিতিতে। হাইস্কুল, আর কলেজ পড়ুয়া নতুন প্রজন্মের কিশোর তরুনরা সারাদিন শুধু মেলায় ছিলোনা, বরং বাংলা, ইংরেজী ফ্রেঞ্চ বই নিয়ে রীতিমত মেলায় ষ্টল সাজিয়ে বসেছিল। স্টলের নামছিলো ‘আমাদের প্রজন্ম’ আর সাজিয়েছিল বাংলা বর্ণমালা দিয়ে। নিঃসন্দেহে প্রবাসী মেলার জন্য এ ছিলো অনেক বাড়তি পাওনা।

সেমিনার :
সন্ধ্যা সাত টায় মূল মঞ্চে কানাডা-বাংলাদেশ সলিডারিটির সভাপতি জিয়াউল হক জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় একুশে সেমিনার। তথ্যবহুল ও প্রাঞ্জল সেমিনারের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর অধ্যাপক ড. শিশির ভট্টাচার্য্য। সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন লেখক হাসান ফেরদৌস, লেখক তাজুল মোহাম্মদ, সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম, অধ্যাপক আবু হোসেন জয়, ভিএজিবি সভাপতি শাহ মোস্তাইন বিল্লাহ, সিবিএস উপদেষ্টা খান সাইফুদ্দিন ও মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মুহিবুর রহমান।

একুশে সম্মাননা পদক :
প্রতিবারের মতো এবারও বইমেলা থেকে একুশে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এবারের একুশে সম্মাননা পদক দেওয়া হয় মন্ট্রিয়ল প্রবাসী লেখক তাজুল মোহাম্মদ কে। এ পদকটি সিবিএস সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ তার হাতে তুলে দেন।

সেরা ষ্টল :
সিবিএস‘র একুশে বইমেলা থেকে প্রতিবছরই সেরা ষ্টল নির্বাচন করা হয় ও সেরা ষ্টলকে ক্রেষ্ট দেওয়া হয়। এবারের সেরা ষ্টলের ক্রেষ্টটি পান অটোয়ার কবি সুলতানা শিরিন সাজী। তার হাতে সেরা ষ্টলের কেষ্ট তুলে দেন প্রধান অতিথি হাসান ফেরদৌস।

অন্যান্য পদক :
অনুষ্ঠানে প্রধান আতথি হাসান ফেরদৌসকে সিবিএস সম্মাননা স্মারক প্রদান করে। এই স্মারকটি তার হাতে তুলে দেন বিশেষ অতিথি সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম মিন্টু। রাত আট টায় মূল মঞ্চে চিত্রাঙ্কন ও বর্ণ পরিচয় এ দুটি পর্বের দুই গ্রুপের বিজয়ীদের সার্টিফিকেট ও মেডেল দিয়ে পুরস্কৃত ও অভিনন্দিত করা হয়। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পর্ব দুটির সম্মানিত বিচারকদ্বয়।

বইমেলার সংকলনে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর বাণী :
বইমেলার সমন্বয়ক শামসাদ রানার সম্পাদনায় প্রতি বছর বই মেলায় একটি করে স্মরনিকা প্রকাশিত হয়। স্মরনিকায় প্রবাসী ও বাংলাদেশের লেখকদের লেখা থাকে । থাকে কানাডার রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা বানী। এবারের স্মরনিকায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাষ্টিন ট্রুডো বানী পাঠিয়েছেন। তিনি তার বানীতে মহান একুশের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও সলিডারিটির একুশে বইমেলার সফলতা কামনা করেন।

সাংস্কৃতিক পর্ব :
দিনব্যাপী বইমেলার শেষ আয়োজন অডিটোরিয়ামে রাতের সাংস্কৃতিক পর্ব। নান্দনিক এ পর্বে গান, নাচ কবিতা আর কথায় উঠে এসেছিলেি একুশের আবহ ও স্বদেশ প্রেম । বিনম্র শ্রদ্ধা ভালোবাসায় স্মরন করা হয়েছিল শহীদদের। শুরুতেই স্বাধীকারের দাবীতে আত্মত্যাগকারী সকল বীরদের স্মরনে ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ গানটির সাথে নৃত্য পরিবেশন করে প্রজন্মের নৃত্য শিল্পী মাহজাবীন মিথি। এরপর গান করে মনিশা কর্মকার। চিএন নাহার ও চারন নাহার দুই বোনের দ্বৈত গান ‘আমায় গেথে দাও না মাগো’ শ্রোতারা উপভোগ করেন। ‘মোদের গরব মোদের আশা’ গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করে ইতিশা চৌধূরী। এরপর ছিলো প্রজন্মের কিশোর, তরুন আবৃত্তিকার ও কন্ঠ শিল্পীদের দলীয় পরিবেশনা। গান, কবিতা ও ভাষা শহীদদের জীবনী নিয়ে ২০ মিনিটের আলেখ্যানুষ্ঠানটি তারা চমৎকার ভাবে পরিবেশন করে। সুন্দর সাবলিল বাংলা উচ্চারণ ও প্রানবন্ত উপস্থাপনায় অসাধারন এ পর্বটি দর্শক শ্রোতারা দারুন ভাবে উপভোগ করেন, মুগ্ধ হন, আনন্দিত হন। এ পর্বে ছিল - ইলমা খন্দকার, সায়ন্তন দাস শান, সারাহ শিকদার, ফাহিম হক, রোকসানা বিন্তী, জারা হোসেন, জারিন হক, আলভী ও অর্ক। এছাড়াও ছিলো বড়দের গীতি এতে কতিবা আবৃতি করেন সঞ্জিব দাস উত্তম, ফারাহ হোসেন ও শামসাদ রানা। গান করেন মনিকা মুনা, রুমা কর ও মৃণাল পিংকু। পুরো অনুষ্ঠানের তবলায় সঙগত করেন অনুপ কুমার মিঠু ও কি-বোর্ডে ছিলেন রিদম হাসান। দিনব্যপি বইমেলার সঞ্চালন ও সাংস্কৃতিক পর্বের উপস্থাপনায় ছিলেন শামসাদ রানা।

মিডিয়া পার্টনার :
দেশের আলো, বাংলামেইল, এনআরবি টিভি, সিবিএনএ, বেঙ্গলি টাইমস, টিভি এশিয়া, এনটিভি, এটিএন বাংলা, আরটিভি, ইটিভি, যমুনা টিভি, দেশদিগন্ত, মাইটভি, দেশবার্তা, বাংলার কন্ঠ।

(এসএস/এএস/মার্চ ০১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test