E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

যেখানে ঈর্ষা করবার মতো সামাজিক নিরাপত্তা!

২০১৭ এপ্রিল ২৫ ১৪:৪২:২২
যেখানে ঈর্ষা করবার মতো সামাজিক নিরাপত্তা!

আম্বিয়া অন্তরা


বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মা যখন সন্তানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, তখন তাঁদেরই রক্ত-শ্রমে গড়া সন্তানটি আনন্দদায়ক সেই স্মৃতি ভুলে বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেন। এটি পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে খুবই সাধারণ চিত্র  হলেও আমরা সেটা ভাবতেও কষ্ট পাই। আমার দাদা-দাদী ও বাবা-মায়েরা যখন ওই নির্ভরশীলতার বয়স ছুঁয়েছেন তখনও তাঁরা ছোট সন্তান কিংবা নাতি-পুতির বেড়ে ওঠায়  অবদান রেখে পারিবারিক বাঁধন শক্ত করেছেন। ছেলে-মেয়ে কিংবা নাতি-পুতিরা তাদের বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদির  অন্য এক বিশাল আত্মত্যাগের নতুন পর্বে পুলক ও স্বস্তি বোধ করেন। অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় নির্ভরশীল বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদি কখনোই পরিবারের বোঝা হতেন না; বরং উল্টোটাই হতেন, তাঁরাও পরিবারে  অনিবার্য হয়েই স্বস্তিতে থাকতেন। যদিও ইদানীং পুরনো সেই ঐতিহ্যের ধারা বেশ দ্রুতই পাল্টে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই বৃদ্ধ বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদিরা পরিবারে বোঝা হয়ে যাচ্ছেন; তৈরি হচ্ছে অমানবিক চিত্র। দেশের বাইরে অবশ্য সমাজব্যবস্থা ভিন্ন, রীতি-নীতিও ভিন্ন৷ তাদের সামাজিক মূল্যবোধও ভিন্ন।আপাত দৃষ্টিতে নির্ভরশীল বয়স্ক বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদির প্রতি সন্তান কিংবা নাতি-পুতির আচরণ নির্মম ও বেদনাদায়ক বলে মনে হলেও পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় বেশ শক্ত ও অনেক গভীর। এটা চোখে না দেখলে  বিশ্বাস করা কঠিন!

নিউইয়র্কে শরণার্থী কাউন্সিলের তিন মাস মেয়াদী জব প্রশিক্ষনের অংশ হিসেবে ২ দুই দিনের জন্য আমি ম্যানহাটন বৃদ্ধাশ্রমে গিয়েছিলাম। বৃদ্ধাশ্রমে ওই বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদির প্রতি সেবা-যত্ন দেখে আমারও ইচ্ছে হল, আহা! আমি কবে বৃদ্ধ হব! বৃদ্ধ বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদির সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, তারা সবাই এক সময় উচ্চপদে কর্মজীবী ছিলেন। সরকারকে নিয়মিত ট্যাক্স দিতেন। আর তাই তারা শেষ বয়সে এত শান্তি, স্বস্তি ও আরাম-আয়েশ করতে পারছেন। ভাবতে ভাবতে আমি অবাক হয়ে যাই, আপাত দৃষ্টিতে অমানবিক মনে হওয়া পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে এতোটাই গভীর সামাজিক নিরাপত্তা বলয়! স্বপ্ন দেখতে খুব ইচ্ছে করে, একদিন হয়তো আমাদের দেশেও এমন গভীর সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে উঠবে, উঠবেই।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test