E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রবাসে আওয়ামী উৎকন্ঠা-১

২০১৭ জুন ০৪ ১৬:৫৭:১৭
প্রবাসে আওয়ামী উৎকন্ঠা-১

মাহবুব আরিফ


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি দেশেরই নয় একটি দলেরও প্রধান বটে  , প্রবাসে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে হোটেলের লবীতে আওয়ামী প্রেমীদের ভীষণ সমাগম  কিন্তু তার আশপাশের কতজন যে সেলফি প্রেমিক তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জানা আছে কি, এই সেলফি যে দুর্নীতি একটি মাধ্যম হতে পারে তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানেন কি ? সেলফি তুলে অনেকেই দলীয় প্রভাব বিস্তার ও ক্ষমতার দাম্ভিকতা প্রকাশ করেন তা কি মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর অজানা ?

এ বিষয়ে খানিক আলোকপাত করার প্রয়োজন বোধ করছি, প্রধানমন্ত্রী ও নেত্রীর অজান্তে অনেক ঘটনা ঘটে যায় যা কিনা বাংলাদেশী প্রবাসী অনেককেই ব্যথিত করে, তাতে অবশ্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কতটুকু আসে আর যায় বলা যায়না কারণ ঐ একটাই প্রবাসে বিএনপি জামাতের স্লোগানের ভীরে আওয়ামী যেন কোন ঠাসা হয়ে না যায় , শোরগোলে হয়তো আওয়ামী লীগের ঢোলটাই বাজে বেশী, দলের নেতারা খুশীতে একটু গদ গদ থাকেন বৈকি শুধু বাংলাদেশী প্রবাসীদের ইজ্জত চলে যায়|

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইউরোপ সফর আসেন আবার ভবিষ্যতেও আসবেন, একাধারে তিনি রাষ্ট্রীয় সফরে প্রবাসে আসলেও তিনি আবার আবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীও বটে| প্রধানমন্ত্রীর এই আসা যাওয়ার পথে প্রবাসীদের মাঝে আনন্দ আর উদ্দীপনার কোনই অভাব থাকে না কিন্তু যখন এই আনন্দ আর উদ্দীপনার পেছনে প্রবাসী আওয়ামী লীগ সংগঠনগুলোর মাঝে কোন্দল আর উত্তেজনা বিরাজ জনিত কারণে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যায় তখন দেশের মান সম্মান ভূলুণ্ঠিত হয়| প্রবাসে প্রবাসীরা নিজ দেশের রাজনৈতিক দলের সমর্থক হিসাবে আদর্শের উপর আস্থা রেখে সংগঠন করবে সেটাই স্বাভাবিক কিন্তু তা গঠিত করার নির্দেশনাবলী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ষাটের ধারাতে পরিষ্কার ভাবেই উল্ল্যাখ করা আছে| এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয়রা কতটুকু ওয়াকিবহাল তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে| মাঝে মাঝেই এই কোন্দল হানাহানি মারামারিতে রূপান্তরিত হয়ে অনেক হতাহতের ঘটনাও ঘটে , প্রবাসে পুলিশী সহযোগিতায় তা নিয়ন্ত্রণ করা হয় |

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিয়েনা সফরে তেমনটি একটি ঘটনা ঘটে যায় যা কিনা বাংলাদেশের পত্র পত্রিকাতে কখনই লেখা না হলেও প্রবাসী পত্রিকাগুলোতে মাঝে মাঝে ফলাও করে প্রকাশ করা হয়| সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ নামে একটি সংগঠন যার কোন সুনির্দিষ্ট গঠনতান্ত্রিক নিয়মাবলী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে আছে কিনা আমার জানা নাই তবে এ নিয়ে প্রবাসী আওয়ামী সমর্থকদের মাঝে কোন্দলের অভাব ঘটছে না | নাগরিক সম্বর্ধনার নামে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনাতে সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নেত্রীর পাশে বসার এবং বক্তব্য দেয়ার সুযোগ সুবিধা নিয়ে বিশাল এক কোন্দল ঘটে যা কিনা পরবর্তীতে হাতাহাতি থেকে মারামারির পর্যায়ে চলে যায়, ততক্ষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১০ নাম্বার মহা বিপদ সংকেত থাকা কালীন বিধায় দ্রুত তাঁর বক্তব্য শেষে সভা স্থল ত্যাগ করেন|

প্রবাসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমর্থনে কি ভাবে সংগঠন তৈরি করতে হবে তা স্পষ্টভাবেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ষাটের ধারাতে উল্লেখ করা আছে| প্রবাসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি সংগঠন ও তার সম্মেলন উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আশীর্বাদ বা শুভ কামনায় একটি শুভেচ্ছা দিয়ে দিলে ক্ষতিটা কোথায়, প্রবাসে প্রগতিশীল সুষ্ঠ কর্মকান্ডকে উৎসাহ দিতে একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা বাণী নিশ্চয়ই দিতে পারেন, এটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে এই শুভেচ্ছা বাণী কোন দলীয় প্রধানের শুভেচ্ছা বাণী নয়, তদ্রুপ সুইডেন আওয়ামী প্রেমীদের স্বতস্ফুর্ত উদ্দীপনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাণী একটি আশার আলো দেখায়, সুষ্ঠ আওয়ামী সাংগঠনিক কর্মকান্ডে এ ধরনের শুভেচ্ছা বাণী প্রবাসীদের নিঃসন্দেহে উত্সাহিত করে, light at the End of tunnel বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের প্রবাসে কোনই শাখা, অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন থাকে না | কাজেই এ ক্ষেত্রে উক্ত শুভেচ্ছা বাণীকে দলীয় বাণী হিসাবে বিবেচনায় না এনে একজন রাষ্ট্র প্রধানের শুভেচ্ছা বাণী হিসাবেই ধরে নেয়াও যায়| প্রবাসে বিভিন্ন দেশে এইরূপ আওয়ামী লীগের আদর্শের সংগঠন তৈরি করার পর দ্বিতীয় বা তৃতীয় পক্ষের অনুমোদনের অপেক্ষায় বসে থাকে, একটি অনুমোদনের কাগজ যে কোথায় পাওয়া যায় বা কে এই অনুমোদন দেবে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের কেন্দ্রীয় সংগঠনের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সেই অনুমোদন দেবার অধিকার রাখে কিনা তা জানার আগ্রহ আমার বহু কালের | বিভিন্ন দেশের আওয়ামী পদবীর তকমা গায়ে লাগিয়ে বিভিন্ন ভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ব্যাখ্যা প্রদান করেন যা কিনা আদৌ সঠিক বা সত্য নয় | সঠিক ধারাটি ব্যক্ত করতে কেউই সামনে এগিয়ে আসেন না |

এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোকপাত করতে চাইলে মুক্তমনা হিসাবে প্রবাসে উঠতি অতি দেশ প্রেমিক আওয়ামী লীগের নেতাদের চক্ষু শূলে পরিনত হতে হয়, এক একজন প্রবাসে আওয়ামী লীগের তকমা লাগিয়ে রাজা বাদশাহর মুকুট পড়ে চেতনার বুলি আওউড়াতে থাকেন, চেতনা আজকাল যেন পাইকারি দরে কিনতে পাওয়া যায় তাই এর ব্যবসাও প্রবাসে বেশ রমরমা| সত্যি বলতে কি, বঙ্গবন্ধুর চেতনা ভাবনার লাইসেন্স নিয়ে তিনারা প্রবাসে এই হানাহানি, কোন্দল আর মারামারির পরিবেশ সৃষ্টি করলেও দেখার বা বলার কেউই নাই| প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরে বিভিন্ন দেশ থেকে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের এতো বেশী আগমন ঘটে যা কিনা পৃথিবীর কোন দেশের প্রধানমন্ত্রীর বেলায় ঘটেনা, আসলে এর পেছনে কারণটা কি বোঝার চেষ্টা করছি অনেকদিন যাবৎ, প্রবাসে এইসব নেতা কর্মীরা কি দলীয় সুবিধা ভোগ করেন? তারা কি দুর্নীতি পরায়ণ? তারা কি দেশের টাকা বিদেশে পাচার করতে একটি মাধ্যম হিসাবে কাজ করেন? তাদের সাথে রাজনৈতিক নেতা কর্মী, সংসদ, সরকারী আমলা, মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদের এতো সখ্যতা কিসের?

এবার মূল কোথায় আসি, আমরা কি প্রবাসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের উপর ভিত্তি করে প্রবাসে কোন সংগঠন বা রাজনৈতিক দল গঠন করার অধিকার রাখি কিনা ? এক্ষেত্রে বলতে গেলে বলতে হয় আমরা তা অবশ্যই পারি এবং সেটার জন্যে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্রের অপেক্ষায় বসে থাকার প্রয়োজন নেই, স্ব স্ব দেশের নিয়মেই তা করতে পারি| এ ক্ষেত্রে দলের প্রধান যদি কোন দেশের একটি প্রবাসী গোষ্ঠীকে সম্মেলন বা সংগঠন তৈরির বিষয়ে সঠিক ভাবে জ্ঞাত থাকেন, তবে তা যথেষ্ট নয় কি, দলের প্রধানের বিশ্বাসই প্রাধান্য পাবে বেশী, এখানে অনুমোদনের প্রশ্ন অবান্তর, অন্তত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে এমন কিছু আমি খুজে পায়নি, অনেকেই বলেন দলের প্রধান নাকি চুপে চুপে কানে কানে তিনাদের সর্ব ইউরোপের আওয়ামী লীগের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি পরিষ্কার ভাবে সাধারণ মানুষদের জানিয়ে দিতে পারেন যে কোন কথাটি সত্যি, তবে অধমের বুঝতে সুবিধা হবে|

বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে রাষ্ট্রীয় অতিথিদের নিরাপত্তা জনিত কারণে যে কোন ধরনের জন সমাবেশে রাষ্ট্র প্রধানদের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, বিশেষ করে ইউরোপের সব দেশেই তা কঠিন ভাবেই নিয়ন্ত্রিত, এর মাঝেই যখন কেউ কেউ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্যে ইউরোপে ইফতারি বানাতে বসে যায় তখন বিষয়টা হাস্যকর পর্যায়ে চলে যায় | ভাবখানা এমন যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রধান সরকারী সফরে এসে প্রবাসী কোন নেতার ইফতারির দাওয়াত নিয়ে প্রটোকল নিয়ে আসবেন|

প্রবাসে আওয়ামী লীগের নামে যেসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যায় তা নিয়ে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে একটি তদন্ত কমিটি বহালের দাবী জানাই, আমাদের অবশ্যই স্বচ্ছতার স্বার্থে ঘটনার সত্যতা জানার অধিকার আছে| প্রবাসে আওয়ামী লীগের নেতা মানেই কি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে একটি নির্বাচনী টিকেট? প্রবাসে এইসব আওয়ামী নামধারী নেতাদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু? বিগত পনেরো বিশ বছরে প্রবাসে আওয়ামী লীগের এইসব নেতা নামধারীদের অবদান কতটুকু? প্রশ্ন আছে অনেক, পরবর্তীতে আমি আবার আসবো |

লেখক : সুইডেন প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test