E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রবাসে আওয়ামী উৎকন্ঠা-২

২০১৭ জুন ০৫ ১৬:০৯:০৯
প্রবাসে আওয়ামী উৎকন্ঠা-২

মাহবুব আরিফ


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বহর নিয়ে প্রবাসে সরকারি সফরে আসেন আর ভবিষ্যতেও আসবেন| সরকারি কর্মকাণ্ডের মাঝে এইসব সফরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ও তার সঙ্গে আসা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি-বর্গরা নানান ধরনের চুক্তি, আলোচনা, সভা ও সেমিনার নিয়ে ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করেন|

প্রবাসের কোন দেশে বাংলাদেশী প্রবাসীরা তাদের প্রিয় নেতা নেত্রীদের সান্নিধ্য পাবার প্রত্যাশা করেন আর এটাই স্বাভাবিক, তাই প্রবাসে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে বিভিন্ন দেশে নাগরিক বা গণ সম্বর্ধনার আয়োজন করা হয়, এরূপ কয়েকটা অনুষ্ঠানে আমারও যাবার সুযোগ ঘটে আর এই সুযোগ গ্রহণের পেছন নিজের নামের পেছনে প্রবাসী আওয়ামী সংগঠনের একটি তকমা আমার গায়েও লাগানো আছে| কার্যত যে বিষয়টা লক্ষণীয় যে, এই নাগরিক সম্বর্ধনার আড়ালে আয়োজকরা হচ্ছেন উক্ত দেশের আওয়ামী লীগ সংগঠনের হোমরাচোমরা বা নেতা কর্মী শ্রেনীর|

যেহেতু বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের প্রবাসী কোন শাখা, অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন থাকেনা তাই পর্দার আড়ালে নাগরিক বা গণ সম্বর্ধনার নামে চলে প্রবাসী আওয়ামী কর্মীদের বিশাল কর্মযজ্ঞ. বিভিন্ন দেশের আওয়ামী কর্মীরা সেই শহরের বিভিন্ন হোটেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সমবেত হতে থাকেন, সেই সাথে বিরোধী দলের নেতা কর্মীরাও একি শহরে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধাচরণ করার লক্ষ্যে শ্লোগান সমাবেশ করার উদ্দেশে জমায়েত হয়| প্রধানমন্ত্রী ও তার দলের লোকজন পাল্টাপাল্টি ভাবে শ্লোগান ও সমাবেশ করে হোটেলের সম্মুখে এক বিকট পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, মুহূর্তের মাঝেই সকলে ভুলে যায় যে একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর আগমন সেই দেশের মাঝে কোন দলীয় কর্মসূচী নয়, এটা সম্পূর্ণ ভাবেই একটি সরকারি সফর|

এইতো গেল একটি চিত্র, তবে হোটেল ভেতরে মানে যে হোটেলে প্রধানমন্ত্রী তার বহর নিয়ে অবস্থান করেন সেখানে হচ্ছে আসল চিত্র, কেউ যদি নিজ চোখে সেই পরিস্থিতি না দেখে থাকেন তবে কেউ কোনদিন জানতেও পারবেন না যে প্রবাসে এই আওয়ামী লীগের সংগঠনগুলোর মাঝে কত ধরনের ভেদাভেদ আর কোন্দল যা কিনা পরবর্তীতে হানাহানি থেকে মারামারির পর্যায়ে চলে যায়| উদহারণ সরূপ বলা যেতে পারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে প্রবাসে প্রায় প্রতিটি দেশেই এই ঘটনা ঘটে যাচ্ছে| দেশের মান সম্মান এক্ষেত্রে কতটুকু ভূলুণ্ঠিত হলো সেটা দেখার কেউ না থাকলেও দলীয় ঢোলটা যে বাজে ভালো সে বিষয়ে সন্দেহ নাই | পরদিন সকালেই প্রবাসী স্থানীয় পত্র পত্রিকাতে এইসব ঘটনা ফলাও করে প্রকাশ করার পর বাংলাদেশী নাগরিকদের লজ্জার বিষয়টা কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অজানা?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিয়েনা আগমন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর হোটেল লবীতে প্রবাসী আওয়ামী লীগের সংগঠন গুলোর কোন্দল এতটাই তীব্র ভাবে পরিলক্ষিত হয় যা কিনা পরবর্তীতে হানাহানির পর্যায়ে চলে যায়| বাংলাদেশ সরকার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাছে শুধু প্রশ্ন করতে চাই যে, ঘটনাগুলো সম্পর্কে কি আপনাদের কোনই ধারণা নাই নাকি জেনেও না জানার ভান করা? সাধারণ বাংলাদেশী প্রবাসীদের মান সম্মান যেখানে ভূলুণ্ঠিত সেখানে সরকার নীরব ভূমিকা প্রবাসীদের নিদারুণ ভাবেই মর্মাহত করে|

বর্তমান সময়ে সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে নেতা কর্মীদের বহিষ্কারের নামে যে লঙ্কা কাণ্ড পত্র পত্রিকাতে প্রকাশিত হয় তা নিশ্চয়ই একটি দেশের জন্যে সুনাম বয়ে আনে না, এইসব ক্ষেত্রে দেখা যায় অনলাইন পত্রিকাগুলো প্রবাসী দলীয় রাজনীতিতে বিশাল ভূমিকা পালন করে|

প্রবাসে যে কোন দেশেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমনে প্রবাসীদের মাঝে আনন্দ উদ্দীপনা আর উৎসাহের অভাব থাকে না, সাধারণ প্রবাসীরা স্বাভাবিক ভাবেই সেই উত্সাহ প্রকাশ করতে বা তাদের প্রিয় নেত্রীর সান্নিধ্য আশা করতেই পারে কিন্তু প্রবাসে আওয়ামী সংগঠনগুলোর কোন্দলের কারণে সাধারণ প্রবাসীদের সেই আনন্দ ও উদ্দীপনায় ভাটা পরে|

কিছুদিন পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুইডেন আগমন উপলক্ষে সুইডেন আওয়ামী লীগের কর্মীদের মাঝে নাগরিক সম্বর্ধনার নামে হৈ হৈ কাণ্ড ব্যাপারের মত প্রস্তুতি পর্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে, কিন্তু এর পেছনে দলীয় কোন্দলের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে , প্রবাসের বিভিন্ন দেশে যেরূপ কোন্দল আর হানাহানি ঘটে যাচ্ছে, দেশের মান সম্মান যেভাবে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে সুইডেনও যে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না সেই নিশ্চয়তা কোথায়?

লেখক : সুইডেন প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test