E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রবাসে আওয়ামী উত্কন্ঠা - শেষ পর্ব

২০১৭ জুন ০৬ ২৩:৩৬:৪৮
প্রবাসে আওয়ামী উত্কন্ঠা - শেষ পর্ব

মাহবুব আরিফ


বিভিন্ন সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন আওয়ামী সমাবেশে আমারও যাওয়া আসা হয়েছে। তবে খুব যে একটা সুনাম কুড়াতে পেরেছি তা নয় কিন্তু একবার ইউরোপেরই এক শহরে প্রধানমন্ত্রীর হোটেলের লবীতে লোকজন সমবেত হয়ে কিছুক্ষণ পর পর গাদা গাদা লোক হুরোহুরি করে একবার এদিক কি ওদিক দৌড়া দৌড়িতে ব্যস্ত, বুঝতে পারলাম প্রধানমন্ত্রীর আসার সময়ে হয়ে গেছে আর তিনি এই পথ দিয়েই লিফটে করে হোটেলের কামরায় বিশ্রাম নিতে যাবেন।

প্রিয় নেত্রীকে এক নজর দেখার ইচ্ছা কার না হয় বলুন, প্রধানমন্ত্রীর দেহরক্ষীদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে আমিও লাইন ধরে সবার মাঝে দাড়িয়ে গেলাম, যদিও খুব লজ্জা হচ্ছিলো কারণ ক্লান্ত প্রধানমন্ত্রী প্রবাসে সরকারী সফরে দিনের কার্যক্রম শেষে নিশ্চয়ই বিশ্রাম নিতে কামরায় যাবেন আর আমি কিনা নীচে দাড়িয়ে এই ভিড়ের মাঝেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে জয় বাংলা চিৎকারে আকাশ বাতাস মুখরিত করে হোটেলের অন্যান্য বাসিন্দাদের বিরক্তির কারণ হবো ? একি একি একি, হঠাৎ একজন প্রধানমন্ত্রী পায়ের কাছে একেবারেই শুয়ে পড়ে গড়াগড়ি দিচ্ছেন, আমি ভাবছি লোকটার হয়তো এপিল্যাপ্সীতেআক্রান্ত হলো, ওহ নো , লোকটা আসলে একটা বিশেষ কায়দায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পায়ে কদমবুসির জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়লো। নিরাপত্তা রক্ষীদের প্রায় জ্ঞান হারাবার অবস্থা, ধরে বেধে লোকটাকে মেঝে থেকে টেনে হিচড়ে দাড় করানো হলো, পড়ে শুনেছি লোকটা নাকি ইউরোপের কোন একটা দেশের দীর্ঘ পনেরো বছর যাবত সভাপতি আর একবার হল্যান্ডের হ্যাগ শহরে একজন নেতা হোটেলের লবীর সিঁড়ির উপর দাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর ফেরার পথে আকাশ বাতাস কাপিয়ে চীৎকার করছে, আপা আমি সুইডেন, আপা আমি সুইডেন, এই যে আপা আমি সুইডেন, এই দিকে আপা, আমি সুইডেন, দেখেন আপা, আমি সুইডেন আপা।

আমার তখন ইচ্ছে হচ্ছিলো হোটেলের লবীর মেঝেটা ফাঁক হয়ে যাক আর আমি সেখানেই লজ্জায় ঢুকে যাই।

পরদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী তার সফরের গুরুত্বপুর্ণ সভায় উপস্থিত হতে একটু আগে ভাগেই হোটেল লবীর পাশেই ডাইনিং হলে নাস্তা করেই চলে যাবেন। উপস্থিত প্রায় শখানেক প্রবাসী নেতাদের একজন আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে শ্লোগান দিয়ে বসলো 'নেত্রী তুমি এগিয়ে চলো' প্রতিউত্তরে বিশাল আয়তনের হোটেলের লবীর ভেতরেই প্রায় শখানেক লোক চেঁচিয়ে উঠলো 'আমরা আছি তোমার পাশে' এভাবেই দুবার শ্লোগান দেবার পর পরই লবীর এক কোণে দেখতে পেলাম ভিনদেশী একজন বাবা আতংকগ্রস্থ তার তুই শিশু কন্যাকে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছেন আর তাদের আতংকগ্রস্থ মা লিফটের দরজায় দাড়িয়ে পালাবার পথ খুজছেন, উনারা ধরেই নিয়েছেন হয়তো বাংলাদেশ আজ এই মুহুর্তে এই হোটেলের লবীর ভেতর স্বাধীনতা অর্জন করেছে। হোটেলের কর্মচারীরা যথা সম্ভব তাদের হোটেলের ভিনদেশী অতিথিদের সান্তনা দেবার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, লজ্জায় আমার মাথা হেট্ হয়ে এলো।

২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে শহরতলীর অদূরে সুইডেন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নাগরিক সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে নতুন কিছু সহ সভাপতি দেখে আমার মাথা তো চড়ক গাছ! হঠাৎ এই নতুন কিছু সহ সভাপতি দেখে বুঝতে পারলাম উনারা বেশ মোটা অঙ্কের টাকার অনুদানে অনুষ্ঠানের প্রথম সারিতে বসে সেলফি তোলার সুযোগ নেবেন, তাদের মাঝে কয়েকজন নাকি সহসাই নতুন রেস্তোরা কিনছেন অন্য একজন সহ সভাপতি তো বিভিন্ন দেশে ঘুরে ফিরে রঙে ঢংয়ে সেলফি দিয়েই বেড়াচ্ছেন তিনি সুইমং গাঁওউনকে স্লিপিং গাঁওউন বানিয়ে হোটেলের তুলতুলে বিছানায় শুয়ে বসে ফেইসবুকে ছবি আপলোড দিয়ে হুলুস্থুলু কান্ড বাধিয়েছেন। আমার মেজাজটাও এমনিতেই খিট মিটে হয়ে গেল, একজনের জ্বালায় বাঁচি না আরও তিনজন হাজির। কেউ কেউ বলেন আমার বক্তব্য আর ভাষণ নাকি খুব উচ্চ মার্গীয়, নিজের এই সুনাম শুনে ইচ্ছে করছে বাবার কথাটা আসলে কতটাই মিথ্যে। আমার ইংরেজীতে রচনা পড়া শুনে কতবার যে বাবা আমার কান মলে দিয়েছেন তার হিসেব আমার জানা নাই। আজ বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো আমার না, যারা আমার প্রশংসা করছেন নিশ্চিতভাবে তাদেরই কান মলে দিতেন।

ঘটনাটা বলছি শুনুন, বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস বেলজিয়াম আওয়ামী লীগ আয়োজিত বাংলাদেশ এন্ড জিরো টলারেন্স এবাউট টেরোরিজম নামে কি যেন এক সেমিনারে আয়োজকরা আমাকে আমন্ত্রণ জানায়। আর সেই সেমিনারে বক্তাদের ইংরেজী শুনে মনে হচ্ছিলো আমি শেক্সপিয়ারের রোমিও জুলিয়েট নাটকের নতুন ভার্সন শুনছি। বার বার মনে হচ্ছিলো এই মহা মার্গীয় পরিবেশে আমার কিইবা বলার আছে, সুশীল কুশিলের ভীড়ে আমার অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। আজকে একজন ফোন করে জানালেন, সুইডেনে প্রধানমন্ত্রী আসবেন তাই অন্য পক্ষের আয়োজকরা আমাকে তাদের পক্ষে যোগদান করার জন্যে একটা পদ খালি রেখেছেন, চাইলেই পদ নিয়ে কাজে নেমে পরতে পারি। জিজ্ঞাস করলাম, তা আপনি কোন পদে আছেন, তিনি জানালেন আপাতত তিনি অর্থমন্ত্রী, তবে সহসাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে যাবেন, কেন জিজ্ঞাস করতেই উত্তর দিলেন ইউরোপের সব দেশের রাজধানীর নামগুলো মুখস্থ হয়ে গেলেই অর্থমন্ত্রীর পদটাও খালি হবে চাইলে ওটাও নিতে পারি। প্রবাসে আওয়ামী লীগ রাজনীতির আংশিক রঙ্গিন বক্স অফিস হিট সিনেমার অংশ বিশেষ মানে ট্রেইলর শুনলাম।

প্রবাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে হৈ হৈ কাণ্ড রই রই ব্যাপার। প্রবাসী আওয়ামী পরিবারে একটা সাজ সাজ রব, ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশেই আওয়ামী সংগঠনগুলোর মাঝে একটা সাজ সাজ রবের সূচনা ঘটছে, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামীলীগ এমনকি অনেক দেশেই লীগ নামের অনেক সংগঠনই প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে মাস খানেক আগ থেকেই এই প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। এখানে বলে রাখা ভালো যে আমার জানা মতে শুধুমাত্র ছাত্রলীগ ও যুবলীগের গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রবাসে তাদের শাখা, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন করার বিধান থাকে যা কিনা আওয়ামী লীগ সংগঠনের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ্য করা নাই। তার মানে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের জাতিও নির্বাচনে অংশ গ্রহণকারী কোন রাজনৈতিক দলেরই তাদের গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রবাসে কোন শাখা সংগঠন থাকে না। কোন রাজনৈতিক দলের আদর্শ ও নীতি মেনে স্ব স্ব দেশের নিয়ম নীতি অনুসরণে প্রবাসে সংগঠন করতে কোনই বাধা থাকে না। সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ তদ্রূপ একটি সংগঠন যারা কিনা ইউরোপের অন্যান্য দেশের আওয়ামী লীগ সংগঠনগুলোর সমন্বয়কারী একটি সংগঠন, তাদের কাজ হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের আওয়ামী লীগের সংগঠনগুলোর কার্যক্রম ও কর্মসূচীকে সঠিক নির্দেশনা দেয়া। সর্ব ইউরোপিয়ান বয়োজেষ্ঠ নেতারা তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যান যেন ইউরোপের প্রতিটি দেশেই একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় থাকে।

বিষয়টি সম্পূর্ণভাবেই বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের প্রধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের নির্দিষ্ট কোন দেশের বা গঠনতন্ত্রের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়না, যতটুকু আমি বুঝতে পেরেছি এর একটা বিশেষ কারণ হচ্ছে যখন বাংলাদেশে দলের যে কোন ক্রান্তি লগ্নে প্রবাসে তথা ইউরোপের আওয়ামী পরিবার দলের স্বার্থে প্রবাসে তাদের কার্যক্রম সুচারু ভাবে এগিয়ে নিতে পারে। উদহারনস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময় প্রবাসীদের বিশেষ একটি ভূমিকা ছিল। সুইডেনের মাটি থেকেই আমাদের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক পদযাত্রা, সুইডেনর খেতু মিয়া ছিলেন সেই যাত্রার সহযোগী।

আমি বিগত ৩৩ বছর সুইডেনের আওয়ামী পরিবার ও পরিবেশের সাথে জড়িত, ভাত টিপলেই বুঝতে পারি কোনটা কাউয়া আর কোনটা মুরগী কিন্তু বোকা সেজে বসে থাকি। যাক এসব ইতিহাস অন্য একদিন করা যাবে ।

অনেক কথাই আমার মনগড়া নয়, আমার মনেও মাঝে মাঝে নানা প্রশ্নের উদয় হয় যা কিনা আমি শুধুই ব্যক্তিগতভাবে আমার অতি শ্রদ্ধাভাজন সর্ব ইউরোপের একজন বয়োজেষ্ঠ নেতা শ্রী অনিল দাস গুপ্তের সাথে মাঝে মাঝেই আলোচনায় জানতে পারি। প্রবাসে আমি আওয়ামী লীগের হোমরা চোমরা পর্যায়ের কেউ না, সর্ব ইউরোপের আহত, হতাহত, হাট কাপানো, মাঠ কাপানো, ঘাট নাড়ানো সব নেতা কর্মীদের সাথে আমার বিশেষ কোন পরিচয় নাই। আমাকে হয়তো কেউ আজ পর্যন্ত চেনেও না, তবে বিশিষ্ট সেই মহান নেতা শ্রী অনিল দাস গুপ্তের সাথে আমার অনেক দিনের একটা ব্যক্তিগত পরিচয় আর তিনি পিতৃহারা আমার মতো একজন আওয়ামী ঘরে জন্ম নেয়া ছেলেকে অন্তর থেকেই ভীষণ ভালোবাসেন। সুযোগ পেলেই তিনি আমাকে লেখা লেখিতে উত্সাহ দেন, বিভিন্ন দেশে আওয়ামী সবামেশে দেখা হলে যদিও মতের দুরত্ব অনেক পাশে বসিয়ে আদর করে নাস্তা করাতে বসান। কিছুক্ষণ দেশ বিদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তর্ক বিতর্ক যা কিনা আমার জ্ঞানের পরিধির বিস্তৃত ঘটায়। আমি আবার নিজেকে হালকা পণ্ডিত ভাবতেও বেশ ভালোবাসি। বলতে গেলে প্রায়ই তাঁর সাথে আমার টেলিফোনে ইউরোপের আওয়ামী লীগ ও পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হয়, তিনিও প্রাণ খুলে গল্পের ছলে এখানকার আওয়ামী হওয়া বাতাসের খবরা খবর নিয়ে নেন। কে কোথায় আওয়ামী মুকুট পড়ে রাজা বাদশা সেজে বসেছেন, কে কোথায় কখন কি ভাষণ দিল আর এসব নিয়ে আমরা দুজনাতেই বেশ হাসাহাসি করি আর তা একান্তই ব্যক্তিগত পর্যায়ে।

৪জুন ২০১৭, সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ করেই শ্রদ্ধেয় শ্রী অনিল দাস গুপ্তের সাথে দীর্ঘ সময় টেলিফোনে কথা বলার পর মনটা ভীষণ কষ্টে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। বিষয়টা সত্যি আমাকে অনেকটা ভাবিয়ে তোলে, কথা বলার সময় বয়োজেষ্ঠ্য সেই নেতার গলাটাও বেশ ভার হয়ে আসছিলো। অনেকটা কষ্ট নিয়ে আক্ষেপের সুরেই আমাকে বললেন 'দেখো আরিফ, তোমার সাথে আমার পরিচয় দীর্ঘদিনের, আমি নিজে কোনদিন তোমার মতের সাথে আমার মতের অমিল হলেও দুর্ব্যবহার করিনি, তুমি আমার ছেলের বয়সী হলেও কোনদিন বকা দেয়নি। কিন্তু ভিয়েনাতে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে আমাকে দোষারোপ করা হয়েছে পত্র-পত্রিকাতে লেখালেখি হয়েছে যার কোন কিছুর সাথেই আমি জড়িত না, বঙ্গবন্ধু আমার আদর্শ আর তার কন্যাকে আমি অন্তর দিয়ে ভালোবাসি, ভিয়েনাতে ছেলের বয়সী কর্মীরা আমাকে দোষারোপ করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করলো, এমন কি আমার সাথে উদ্ধত আচরণ করতেও দ্বিধাবোধ করলো না'। দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে মনের কষ্টে আমার সাথে কথা বলতে পারছিলেন না, আমি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে টেলিফোন ছেড়ে দিয়ে আকাশ পাতাল অনেক কিছুর ভাবনার সাগরে ডুবে গেলাম, ধীরে ধীরে বাসার পথে হাটা দিলাম।

ইউরোপের এতো বড় একজন আওয়ামী সংগঠক ও নেতা হয়েও শ্রী অনিল দাস গুপ্তের অতি সাধারণ মানুষের মত মনের কষ্টগুলো অতি সাধারণভাবে আমাকে বলে গেলেন। মনটা তাই বিষণ্ণ হয়ে গেল, তিনি কোথায় কতুটুকু ঠিক কি বেঠিক সেটা ভাবছি না, তিনি যে মনে কষ্ট পয়েছেন সেই কষ্ট আমার হৃদয়টাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিল। শ্রী অনিল দাস গুপ্ত দীর্ঘদিন ইউরোপে আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডে জড়িত। বঙ্গবন্ধুর কন্যা দয়ের কাছে তিনি একজন শ্রদ্ধার পাত্র। বঙ্গবন্ধুর কন্যাদয় জার্মানিতে অবস্থান কালে তাদের সাহায্য ও ভালোবাসা দিয়ে তিনি এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। ইউরোপের অন্যান্য নেতা কর্মীদের আমি কোনভাবেই ছোট করছি না, তারাও আমার কাছে অতি শ্রদ্ধাভাজন মানুষ। প্রবাসে থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেকেরই অবদান অস্বীকার করা যায়না, অনেকেই বয়সে আমার চাইতে অনেক অনেক বড় কিন্তু প্রবাসে আওয়ামী লীগ করতে গিয়ে দলীয় কোন্দলের মাঝে নিজেদের সপে দিয়ে আজ দল কেন, পুরো জাতির ঐতিহ্যকে পদদলিত করতে দ্বিধাবোধ করছি না।

গুরুজনদের আমারা যখন বাসে আসন ছেড়ে দেই, বয়স্ক মানুষকে নিজের অন্তর দিয়ে শ্রদ্ধা করাই হচ্ছে আমাদের বাঙালী ঐতিহ্য। কিন্তু প্রবাসে আওয়ামী লীগের রাজনীতির নামে আজ আমরা একি করছি! সবই কি বিসর্জন দিতে বসেছি! পিতৃতুল্য মানুষদেরও অপদস্থ করতে কি আমাদের বিবেক আজ অন্ধ হয়ে যায়!

আমি জানি আমার কথায় ও আজকের লেখায় ইউরোপের আওয়ামী পরিবারের কোন্দলের মাঝে এক পক্ষ খুশী হলেও অন্য পক্ষ অখুশি হবে। একদিন হয়তো আমাকেও দলীয় কোন্দলের মাঝে অপদস্থ করতে অনেকেই দ্বিধা করবে না। বিগত দিনে আমিও নিদারুণভাবে অপদস্থ হয়েছিও। সুইডেনের আওয়ামী লীগের একজন স্ব-ঘোষিত রাজা জানতে চেয়েছেন, আমি কবে থেকে আওয়ামী লীগ করি, আমার আওয়ামী লীগের কোন সার্টিফিকেট আছে কি না! আমিও কোন্দলের শিকার, ভাগাভাগী রেষারেষিতে আমি নিজেও একটা গ্রূপের সাথে জড়িয়ে গিয়ে শুনতে হয় মুক্তমনা হয়ে মুক্তভাবে লেখালেখি করতে গেলে নকি আওয়ামী সংগঠন করা যাবে না।

'লে হালুয়া! তাহলে কি আমিও একজন আওয়ামী চিকাবাজ হয়ে যাবো!' হয়তো কিছুদিন পর দল ও পদের স্বার্থে আমার অবস্থান প্রবাসী আওয়ামী পরিবেশে নিকৃষ্ট জায়গায় স্থান পাবে কিন্তু হায় আমাকে যে সত্যটা জানাতেই হবে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রবাসে আসেন আবার আসবেন শতবার আসবেন। আমার অন্তর আত্মা আনন্দে উল্লাসিত হবে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশের শাসন ভার হাতে নিয়েছেন এটা আমার গর্ব, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রধান হিসাবে শেখ হাসিনার কোনই বিকল্প নেই। কিন্তু প্রবাসে আওয়ামী দলীয় কোন্দলের মাঝে আমারা যেন ভুলে না যাই তিনি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর মান সম্মান রক্ষা করা আমাদের নাগরিক ও নৈতিক দায়িত্ব।

প্রবাসে যে কোন দেশে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নাগরিক বা গণ সংবর্ধনার নামে দলীয় কোন্দল ও হানাহানি প্রবাসে আওয়ামী প্রেমীদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপর আস্থা অনেকাংশেই ভাটা পরে, তাই আমাদের আশা সর্ব বিষয়ে বিবেচনা করেই এ ধরনের সমাবেশ আয়জন করা উচিত অথবা স্থগিত করা। সুইডেনে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি সুইডেনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্যে হবে খুবই দুঃখজনক।

লেখক : সুইডেন প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test