E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রোবট দেখতেই ব্যস্ত সবাই

২০১৯ অক্টোবর ১৫ ১৯:৫৮:৩৩
রোবট দেখতেই ব্যস্ত সবাই

বিজ্ঞান ডেস্ক : রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো’ প্রদর্শনীতে প্রবেশ করতেই রোবটের দেখা মেলে। এমন রোবট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুরো প্রদর্শনী জুড়ে। এসব দেখতে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সব বয়সীদের ভিড়। ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০১৯’ এর অন্যতম আকর্ষণ দেশে উদ্ভাবিত এসব রোবট। যারা এই রোবট বানিয়েছে তারা বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। লি, মাইশা, বঙ্গ, রুবো, আরমিনা, আলপনা, টিভেট, আফরিন নামের রোবটগুলো দশনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়াও মেলাতে ড্যান্সিং রোবটের নাচ দেখতে অনেকে ভিড় করছেন।

দেশের তথ্যপ্রযুক্তির বড় এই প্রদর্শনী শুরু হয়েছে সোমবার থেকে। আগামীকাল বুধবার প্রদর্শনীর শেষ দিন।

গতকালের মতো আজও সকাল থেকেই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। প্রযুক্তিবান্ধব মানুষদের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসেছে প্রদর্শনীতে। এছাড়াও নানা শ্রেণীপেশার মানুষরাও ভিড় জমাচ্ছেন ডিজিটাল পণ্য এবং তরুণ প্রজন্মের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি দেখতে।

‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০১৯’তে দ্বিতীয় দিন অনুষ্ঠিত হয় ‘ইন্ডাস্ট্রি লিডার সামিট’ শিরোনামে গোলটেবিল বৈঠক। আইসিটি খাতে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের বিদেশি মুদ্রা আয়ের পরিমাণ যখন ক্রমশ বাড়ছে, তখন খাত ধরে তাদের খুঁজে এনে উদ্দীপনা দিতে বিডা ও আইসিটি বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। আবিষ্কারে নারী নেতৃত্ব নিয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সারসহ এই সেক্টরের নেতারা। এছাড়াও অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ শিল্প বিল্পবের শিক্ষা, ডিজিটাল নিরাপত্তার সুবিধা ও প্রতিকূলতা, চতুর্থ শিল্প বিল্পবের হার্ড শিল্পের চ্যালেঞ্জসমূহ, রোবট শিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সেমিনার।

বিকাল থেকে শুরু হয় কনসার্ট। সেখানে অংশ নেয় আর্টসেল এবং নেমেসিস গান পরিবেশন করে। সেখানে তারুণ্যের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়াও অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আয়োজনও রয়েছে। প্রযুক্তিপণ্য কেনা যাচ্ছে এক্সপো থেকে। প্যাভেলিয়ন এবং স্টলে নানা ধরনের প্রযুক্তি পণ্যের সমাহারে সাজানো হয়েছে।

মেলা ঘুরে এবং আয়োজকদের থেকে জানা যায়, মেলায় দেশীয় প্রযুক্তিপণ্য ও উদ্ভাবনকে প্রাধান্য দিয়ে শীর্ষ নতুন উদ্যোগ খুঁজে পেতে মেলার আগে মাসব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রচারমূলক কার্যক্রম চালানো হয়। সেখান থেকে নির্বাচিত সেরা ৩০টি উদ্ভাবন প্রদর্শিত হয় মেলায়। আর প্রদর্শনী শেষ হলে তরুণদের শীর্ষ ১০ উদ্যোগকে ১০ লাখ করে মোট ১ কোটি টাকা বঙ্গবন্ধু উদ্ভাবনী অনুদান (বিআইজি) দেয়া হবে।

‘মেড ইন বাংলাদেশ’ স্লোগানে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, আইডিয়া প্রজেক্ট, এটুআই এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এর যৌথ উদ্যোগে ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০১৯’ আয়োজন করা হয়েছে। ১৪ অক্টোবর থেকে থেকে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত। সবার জন্য উন্মুক্ত প্রদর্শনী তবে প্রবেশের জন্য প্রদর্শনীর ওয়েবসাইট (https://ddiexpo.com/registration) অথবা স্মার্টফোনে আইওএস (https://apple.co/2ohSA1v) ও অ্যান্ড্রয়েড (https://bit.ly/35j2PDg) থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন করতে হবে।

প্রদর্শনীতে ঘুরতে আসা রক্তিম সরকার বলেন, বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে এত এগিয়ে গেছে এই প্রদর্শনীতে না আসলে জানা হতো না। মেড ইন বাংলাদেশ এবং রোবোটিক্স জোনের কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। এত রোবটের দেখা এক ছাদের নিচে পাবো বলে আশা করতে পারিনি। এমন আয়োজন যুব সমাজের জন্য অনুপ্রেরণামূলক।

এক্সপোতে স্বস্ত্রীক ঘুরতে এসেছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল হাসান শামিম। তার স্ত্রী জেরিন তাসনিম বলেন, মজার ব্যাপার হচ্ছে এই প্রদর্শনীতে পুরুষ রোবটের চেয়ে নারী রোবটের সংখ্যা বেশি। নারীরা শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয়, তথ্যপ্রযুক্তিতেও সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের প্রদর্শনী তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকরণীয়।

প্রযুক্তি খাতে দেশের সক্ষমতা, দক্ষতা, হার্ডওয়্যার পণ্য উৎপাদনে সম্ভাবনা এবং কর্মপ্রচেষ্টার বাস্তবচিত্র এই প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়াও হাই-টেক পার্ক এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নয়ন কাঠামোর অগ্রগতিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া সম্পর্কেও দর্শনার্থীরা সম্যক ধারণা অর্জন করতে পারছেন। দেশীয় প্রযুক্তির সমাহার দিয়ে এবারের প্রদর্শনীকে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। রাখা হয়েছে ৮টি জোন। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ জোনে দেশীয় প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানদের এক ছাদের নিচে পাওয়া যাবে। থাকছে ইনোভেশন জোন। এই জোনে নিত্য নতুন উদ্ভাবন সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। আইডিয়া প্রজেক্টের ৩০টি প্রজেক্ট, এটুআই এর ৩০টি প্রজেক্ট এবং ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি দিয়ে সাজানো হয়েছে ইনোভেশন জোন। স্টার্টআপ জোনে নতুন উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রজেক্ট সম্পর্কে ধারণা পাবেন দর্শনার্থীরা। মেলার অন্যতম আকর্ষণ রোবোটিক জোন। এই জোনে শিক্ষার্থীদের তৈরি রোবটের পদচারণা রয়েছে।

মঙ্গলে যাওয়ার স্বপ্নকে সত্যি করতে এই প্রদর্শনীতে রয়েছে মঙ্গলযাত্রার নিবন্ধন। ২০৪১ সালে মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার পরিকল্পনাকে বাস্তবে রুপ দিতে এই জোন দর্শনার্থীদের আশার সঞ্চার করছে। বিসিএস এক্সপো জোন এ পাওয়া যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির সকল হালনাগাদ পণ্য। স্বনামধন্য প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানরা তাদের সর্বশেষ প্রযুক্তি প্রদর্শন করছে। প্রযুক্তিপণ্য কেনার সুযোগ মিলছে এই জোনে। এক্সপো জোনে রয়েছে ১১০টি প্যাভেলিয়ন এবং স্টল।

গেমারদের জন্য রয়েছে গেমজোন। নানা ধরনের উপহারের ছড়াছড়ি। দেশের তৈরি বিখ্যাত ল্যাম্বারগিনি গাড়ির আদলে তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ির দেখা পাওয়া যাবে এক্সপোতে। মেলার লক্ষ্য হচ্ছে হার্ডওয়্যার পণ্য উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচিত করে তোলা। নতুন উদ্যোক্তাদের বাণিজ্যিকভাবে তাদের পণ্য বাজারজাত করতে সহযোগিতা হিসেবে ইন্ড্রাস্ট্রি এবং উদ্যোক্তাদের সেতুবন্ধন করে দিবে এই এক্সপো।

ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০১৯ এর প্লাটিনাম স্পন্সর ওয়ালটন। গোল্ড স্পন্সর ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স। যৌথভাবে সিলভার স্পন্সর সিম্ফনি এবং ডিবিবিএল। প্রদর্শনীর ফোরজি এলটিই পার্টনার বাংলালায়ন। এডিএন টেলিকম, বাংলাদেশ টেকনো সিটি লিমিটেড, ডাহুয়া, ডেল, এইচপি, হিকভিশন, ইউসিসি এক্সপোর পার্টনার। গেমিং পার্টনার গিগাবাইট। ই-কর্মাস পার্টনার প্রিয়শপ ডটকম।

দেশের ২১টি বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০১৯ এর নলেজ পার্টনার। এক্সপোকে সফল করার জন্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য), সিটিও ফোরাম, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), বাংলাদেশ ওম্যান ইন টেকনোলজি (বিডব্লিউআইটি), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এবং বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করছে।


(ওএস/অ/অক্টোবর ১৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test