E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মেঘ থেকে বৃষ্টি নামাবে লেজার রশ্মি!

২০১৪ এপ্রিল ২৪ ১৯:০৬:৩৯
মেঘ থেকে বৃষ্টি নামাবে লেজার রশ্মি!

নিউজ ডেস্ক : বিজ্ঞানীরা এবার জোরালো ভাবে মনে করছেন যে লেসারের মাধ্যমে মেঘ থেকে বৃষ্টি ও বজ্রপাত ঘটানো সম্ভব হবে। সেন্ট্রাল ফোরিডা কলেজ অব অপটিকস এন্ড ফটোনিকস এবং ইউনিভার্সিটি অব এরিজোনা এর বিজ্ঞানীরা উচ্চ-শক্তির লেজার রশ্মিকে কোন মেঘের মধ্যে নিক্ষেপ করে বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাত ঘটানোর লক্ষ্যে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের বিষয়ে কাজ করছে।

বিজ্ঞানীদের প্রস্তাবনা হচ্ছে কোন একটি লেজার রশ্মিকে দ্বিতীয় একটি রশ্মির দিয়ে ঘিরে রেখে বা ‘ড্রেসিং’ করার মাধ্য শক্তির আঁধার (এনার্জি রিজারভার) হিসাবে কাজ করিয়ে মাঝের লেজার রশ্মিকে আগের চেয়ে আরও অধিক দূরত্বে নিক্ষেপ করা সম্ভব হবে। সেকেন্ডারী ‘ড্রেস’ রশ্মি প্রাথমিক রশ্মিকে রিফুয়েল করবে এবং অধিক তীব্রতায় নির্গত হওয়া থেকে বাধা দেবে যাতে এটি দ্রুত ভেঙে না যায়। এটাকে বলা হচ্ছে ‘এক্সটার্নালি রিফুয়েলড অপটিক্যাল ফিলামেনন্টস’ যে বিষয়ে গবেষণা তথ্য সম্প্রতি নেচার ফোটনিকস এ প্রকাশিত হয়েছে।

মেঘের মধ্যে পানির কনডেনসেশন এবং বজ্রপাত জনিত ঘটনা বিপুল পরিমাণে স্থির জড়তা সম্পন্ন চার্জড পার্টিকেলের সাথে সম্পর্কিত। সঠিক মাত্রার লেজার রশ্মি দিয়ে এই সকল চার্জড পার্টিকেলকে আলোড়িত করা গেলে নিকট ভবিষ্যতে একদিন অবশ্যই বিজ্ঞানীরা মেঘ থেকে প্রয়োজনীয় স্থানে ইচ্ছেমত বৃষ্টি ঝরাতে সক্ষম হবে এবং মেঘ আর লেজারের উপর নতুন দিনের প্রযুক্তি অবশ্যই খরা এলাকায় পানির সমস্যা সমাধান করার সুযোগ এনে দেবে।

দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে আবহাওয়া জনিত সমস্যা সবার মুখে মুখে থাকলেও আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে তেমন মাথা ব্যথা নেই। মেঘ থেকে বৃষ্টি নামানোর এই প্রচেষ্টা তাই এক যুগান্তকারী উদ্যেগ নিঃসন্দেহে।

লেজার রশ্মিকে ইতোমধ্যেই অনেক দূরত্বে নিক্ষেপ করা সম্ভব হলেও সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড এডুকেশন ইন অপটিকস এন্ড লেজার এর একজন শিক্ষানবিশ ম্যাথিউ মিলস জানান , ‘যখন কোন লেজার রশ্মিও তীব্রতা অনেক বেশি করা হয় সে তখন আর স্বাভাবিক আচরণ করে না- এটি এর নিজের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যায়। এই ধ্বংস হয়ে পড়ার সময় এর তীব্রতা এত বেশি মাত্রায় পরিণত হয় যে বাতাসের অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেনের ইলেকট্রন গুলো ছড়িয়ে পড়ে এবং একটি প্লাসমা তৈরী যা সাধারণত ইলেকট্রনের এক স্যুপ।’

এই প্লাসমা তখন চেষ্টা করে লেজার রশ্মিকে উল্টো দিকে ধাবিত করতে যা একটি আল্ট্রা শর্ট লেজার পালসকে ছড়িয়ে পড়বার এবং ধ্বংস হবার মধ্যকার ঘটনায় এক ধরনের যুদ্ধে লিপ্ত করে দেয়। এই যুদ্ধ বা রিঅ্যাকশনকে বলা হয় ‘ফিলামেন্টেশন’। এটা একটি ফিলামেন্ট বা ‘আলোর ষ্ট্রিং’ তৈরী করে যা বাতাসের বিভিন্ন উপাদানের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে নষ্ট হবার আগে অল্প সময়ের জন্য এগিয়ে চলে। যেহেতু একটি ফিলামেন্ট তার চলার পথে আলোড়িত ইলেকট্রন সৃষ্টি করে সে কারণে এটা বৃষ্টি ও বজ্রপাত ঘটানোর প্রয়োজনীয় অবস্থার উদ্ভব ঘটাতে পারে।

এই প্রযুক্তির বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা আছে দেখেই আরও অনেক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ধারণা সম্পন্ন বিজ্ঞানীদের এই গবেষণায় এগিয়ে এসে কাজ করা উচিৎ বলে এই গবেষনায় যুক্ত বিজ্ঞানীরা মনে করেন।

বর্তমানে যুক্ত বিজ্ঞানীরা এই মুহূর্তে অবশ্য কেবল ভাবছেন কিভাবে লেজার রশ্মিকে বজ্রপাতের আঘাত হতে এড়িয়ে মেঘের কাছাকাছি নেয়া যায়।

মিলসের মতে, এই কাজে একটি অসম দীর্ঘ ‘ফিলামেন্ট এক্সটেনসন কেবল’ প্রয়োজন । যদি একটি দীর্ঘ, কম তীব্রতার ডফনাট (গোলাকার কেক মাঝে ফাঁকা) এর মত ‘ড্রেস’ রশ্মি এই ফিলামেন্টকে ঘিরে রাখে এবং ধীরেধীরে একে সামনে এগিয়ে নেয়া হয় তবেই সেই অসম দীর্ঘ এক্সটেনসন প্রস্তুত সম্ভব।

সৌভাগ্যৗজনকভাবে, বিজ্ঞানীরা আবিষ্কৃত পদ্ধতিতেই ফিলামেন্টের দৈর্ঘ্য নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম। তার মানেই হচ্ছে বহদূর থেকেই বৃষ্টি পাত ঘটানোর মত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাকে তরান্বিত করা সম্ভব। এই ধারণা থেকে তাই আসলে বৃষ্টি এবং বজ্রকে কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রন করার সম্ভাব্যতা বাস্তবতার মুখ দেখবে বলে বিশ্বাস করা যায়।

উল্লেখ্য যে অদ্যবধি মিলস এবং তার সহকর্মী আলি মিরি ফিলামেন্টের পালস কে ১০ ইঞ্চি হতে ৭ ফুট পর্যন্ত এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। এবং তারা ফিলামেন্টকে আরও দূরে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।

আর যদি মেঘ থেকে বৃষ্টি নামানো সম্ভব নাও হয় তবে এই গবেষনা আরও অনেক কাজে লাগানো যাবে, উদাহরণ সরূপ-কেমিক্যাল সংগঠন নির্ণয়ে লম্বা দূরত্বের সেনসর বা স্পেক্টোমিটারে একে ব্যবহার করা যাবে।

(ওএস/এটিিএপ্রিল ২৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test