E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জলে ভাসছে বৃহস্পতি-শনির চাঁদ!

২০১৭ এপ্রিল ১৪ ১৩:৪৫:২৩
জলে ভাসছে বৃহস্পতি-শনির চাঁদ!

বিজ্ঞান ডেস্ক : জল, শুধু জলে ভাসছে বৃহস্পতি ও শনির চার চারটি চাঁদ।ইউরোপা,গ্যানিমিদ,টাইটান আর এনসেলাডাস-এ। এর মধ্যে প্রথম দুটি চাঁদ বৃহস্পতির বাকি দুটি শনির। এদের মধ্যে ইউরোপা আর এনসেলাডাস-এ অদূর ভবিষ্যতে প্রাণের হদিশ মেলার সম্ভাবনা যথেষ্টই জোড়ালো। পৃথিবীর থেকে সবচেয়ে কাছে বলে এদের দিয়েই শুরু হবে পৃথিবীর বাইরে প্রাণের সন্ধান। ওয়াশিংটনে আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে নাসার তরফে একথা জানান হয়েছে।

নাসা জানাচ্ছে, যত সমুদ্র আর যত অতলান্ত মহাসাগর রয়েছে পৃথিবীতে, তার অনেক অনেক গুণ বেশি সমুদ্র আর মহাসাগরে ভেসে যাচ্ছে বৃহস্পতির ওই দুই চাঁদ। তরল জলে টইটম্বুর ইউরোপা আর গ্যানিমিদ। পৃথিবীর গভীরতম প্রশান্ত মহাসাগরের চেয়েও অন্তত ১০০ গুণ বেশি গভীর মহাসাগর রয়েছে বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপায়। সুবিশাল সমুদ্র আর মহাসাগরে ভেসে যাচ্ছে বৃহস্পতির অন্য চাঁদ গ্যানিমিদেরও অন্তর-অন্দর।

এত জল পৃথিবী দেখেনি কখনও। আর সেই তরল জলের মহাসাগরগুলি ঢাকা রয়েছে পুরু বরফের চাদরে। বিশাল বিশাল সমুদ্র আর মহাসাগরে ভেসে যাচ্ছে শনির দুই চাঁদ ‘টাইটান’ আর ‘এনসেলাডাস’ও। তবে সেই মহাসাগরগুলি ভাসছে তরল হাইড্রোকার্বনে। মিথেন ও ইথেনের সাগর, মহাসাগর। নাসা জানিয়েছে,এনসেলাডাস ও ইউরোপায় পুরু বরফের চাদরের তলায় লুকিয়ে থাকা তরল জলের মহাসাগরগুলোর একেবারে নীচে প্রচণ্ড তাপে জল বাস্পীভূত হয়ে ধোঁয়ার মতো উপরে উঠে আসছে।

কোনও সমুদ্রের তলায় প্রাণ না থাকলে বা কোনও জৈবনিক ক্রিয়া না ঘটলে এটা সম্ভব হত না। এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে জলে ভেসে যাওয়াইউরোপা আরএনসেলাডাস-এর মহাসাগরগুলির তলায় প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা যথেষ্টই জোড়ালো।শুধু তাই নয় এও দেখা গিয়েছে, ওই মহাসাগরগুলির তলায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে হাইড্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেন গ্যাস। আর এই গ্যাসগুলি সাম্যাবস্থায় নেই। এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে বেঁচে থাকার জন্যে ওই গ্যাসগুলি থেকেই রসদ জোগাড় করছে জলজ প্রাণ।

এই সাংবাদিক সম্মেলনের আগেই ওয়াশিংটনে নাসার সদর দফতর থেকে জানানো হয়েছিল, ‘‘হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ও শনিতে পাঠানো নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ বা ‘এসা’) মহাকাশযান ‘ক্যাসিনি-হাইগেন্স’ যে সব ছবি ও তথ্যাদি পাঠিয়েছে, তা গত তিন বছর ধরে খতিয়ে দেখে ও বিশ্লেষণ করে বৃহস্পতির দুই চাঁদ ইউরোপা ও গ্যানিমিদে তরল জলের সুবিশা়ল, অতলান্ত মহাসাগরের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। সুনিশ্চিত হওয়া গিয়েছে শনির দুই চাঁদ টাইটান ও এনসেলাডাসের সুবিশাল হাইড্রোকার্বনের সমুদ্র সম্পর্কেও।’’

নাসার সদর দফতরে ‘জেমস ওয়েব অডিটোরিয়ামে’ আজ রাতের সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির ছিলেন নাসার সায়েন্স মিশন ডাইরেক্টরেটের অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর টমাস ঝুরবুশেন, প্ল্যানেটরি সায়েন্স ডিভিশনের অধিকর্তা বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেমস (জিম) গ্রিন। সিনিয়র অ্যাস্ট্রোবায়োলজিস্ট মেরি ভয়টেক, নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরির (জেপিএল) ক্যাসিনি প্রোজেক্ট সায়েন্টিস্ট লিন্ডা স্পিলকার, দুই জ্যোতির্বিজ্ঞানী হান্টার ওয়েতে ও ক্রিস গ্লেন এবং বাল্টিমোরের স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউটের জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম স্পার্কস।

নাসার বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রিন বলেছেন, ‘‘হাবল স্পেস টেলিস্কোপ আর ক্যাসিনি-হাইগেন্স মহাকাশযানের পাঠানো ছবি আর তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, পৃথিবীর চেয়ে অনেক গুণ বেশি গভীর ও বিশাল বিশাল মহাসাগর রয়েছে বৃহস্পতির দুই চাঁদে। যা আগামী দিনে আমাদের বৃহস্পতির ওই দু’টি চাঁদে মহাসাগর সন্ধান অভিযানে অনেক বেশি উৎসাহ জোগাবে।

শুধু তাই নয়, এই সৌরমণ্ডলের অন্য দু’টি গ্রহেও (বৃহস্পতি, শনি) জলজ বা তরল হাইড্রোকার্বনে বেঁচে থাকতে পারে এমন প্রাণের হদিশ পাওয়ার ব্যাপারে আমাদের বিশ্বাসকে আরও জোরালো করে তুলল। ২০২১/’২২ সালে ইউরোপায় পাঠানো হচ্ছে মহাকাশযান। আমাদের সবচেয়ে বেশি উৎসাহিত করেছে বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপা। দূরত্বের নিরিখে বৃহস্পতির কাছে থাকা চাঁদগুলির মধ্যে ষষ্ঠ এই ইউরোপা। সেখানে জলজ প্রাণের হদিশ না মিললেই আমাদের অবাক হতে হবে। আমাদের উৎসাহিত করেছে শনির চাঁদ এনসেলাডাসও। আকার-আকৃতির নিরিখে শনির ষষ্ঠ চাঁদ এনসেলাডাস। সেখানে হদিশ মিলেছে হাইড্রোকার্বনের সাগর, মহাসাগরের। টাইটানে মিলেছে তরল মিথেনের মহাসাগর। যেখানে হাইড্রোকার্বনের ওপর ভরসা করে বেঁচে থাকতে পারে এমন অণুজীবের হদিশ পাওয়ার সম্ভাবনাকে অনেক বেশি জোরালো করে তুলেছে।’’

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test