E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুড়িগ্রামে বন্যার পানি কমছে, ভাঙছে ব্রহ্মপুত্র

২০১৪ সেপ্টেম্বর ০৭ ১৬:৩২:১৬
কুড়িগ্রামে বন্যার পানি কমছে, ভাঙছে ব্রহ্মপুত্র

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : বন্যার পানি কমতে না কমতেই কুড়িগ্রামের রৌমারী-রাজিবপুরে দেখা দিয়েছে ব্রহ্মপুত্রের ভয়াবহ ভাঙ্গন। রৌমারী উপজেলার খেড়ুয়া থেকে খেদাইমারী পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার জুরে ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

এতে গত ৩দিনে খেদাইমারী, বলদমারা, ঘুঘুমারী ও খেড়ুয়া এলাকার ৪শ’ পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। শুক্রবার থেকে ব্রহ্মপুত্র নদে পানি কমতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে নদে ওই ভয়াবহ ভাঙ্গনের শুরু হয়। খেদাইমারী গ্রাম বিলীণ হওয়ার পর ব্রহ্মপুত্রের থাবায় খেদাইমারী হাটবাজার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে খেদাইমারী প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়।

ভাঙ্গন কবলিত এলাকা থেকে মানুষজন ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। ভিটে-মাটি হারিয়ে নিঃস্ব পরিবারগুলো চোখে অন্ধকার দেখছেন। বরাদ্দ না থাকার অজুহাতে হাত গুটিয়ে বসে আছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে নিরুপায় হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে নিজস্ব উদ্যোগে বাঁশ-বাঁশের চাটাই দিয়ে স্রোতের গতিবেগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য বিরামহীন চেষ্টা চালিয়ে যাচেছ নদী পাড়ের সাধারণ মানুষ। তবুও ভাঙছে নদ। একের পর এক জমি বাড়িঘর গিলে খাচেছ ব্রহ্মপুত্র।

খেদাইমারী গ্রামের সুরুজ্জামান বলেন, ‘অনেক নদী ভাঙ্গন দেখছি, কিন্তু এবা কইরা যে নদী ভাঙে এটা দেহি নাই। মুহুর্তের মধ্যে ঘরবাড়ি শ্যাস হইয়া যায়।’ একদিনেই খেদাইমারী বাজার বিলীন হয়ে গেছে বলে জানান ওই বাজারের ব্যবসায়ি আজগর আলী মন্ডল। তিনি বলেন, ‘দোকান ঘর ভাইঙা সরাবারও পারি নাই। সাজানো গোছানো হাটটি এহন নদীর পেটে চইলা গ্যাছে।’



খেদাইমারী এলাকার বেসরকারি সংস্থা সিএসডিএ’র পরিচালক আবু হানিফ বলেন ‘সাতদিন আগে আমি ঢাকায় গেছি। ফিরা আইসা দেহি সব ওলটপালট হইয়া গ্যাছে। নিজের গ্রামটিও খ্ুঁইজা পাই না। এটা কিবা নদী ভাঙনরে বাবা!’ সংশ্লিষ্ট এলাকার মেম্বার আব্দুর রহিম জানান, নদী ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারা প্রায় ৪শতাধিক মানুষ এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি আর খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান সাংবাদিকদের জানান, ভাঙ্গনে এরই মধ্যে খেদাইমারী হাটবাজার ও চারশ’ পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। বিষয়টি কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুড়িগ্রাম অফিসকে লিখিত ভাবে অবহিত করা হয়েছে। সঙ্গে জরুরীভাবে অস্থায়ী ভিত্তিতে হলেও ভাঙন প্রতিরোধে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানানো হয়।

ভাঙন প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তাহের বলেন, ‘না, ভাঙ্গনের বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। আমাদের প্রকৌশলীরা ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ঘুরে আসার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

এদিকে গত ৩দিনের ব্যবধানে রাজিবপুরের নয়ারচর, উত্তরপাড়া, ব্যাপাড়িপাড়া ও মন্ডলপাড়া বিলীন হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্র নদ ওই তিন গ্রামের প্রায় একশ’ ঘরবাড়ি গ্রাস করেছে। আংশিক ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে নয়ারচর হাজিপাড়া ও দিয়ারার চর গ্রাম। ভাঙ্গনে তছনছ হয়ে গেছে দিয়ারারচর সেতু এবং রাজিবপুরের সঙ্গে একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা সড়কটিও। দিয়ারারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ভাঙ্গনের দূরত্ব এখন ৩শ’ গজের মতো।


সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় দুই কিলোমিটার জুরে চলছে ব্রহ্মপুত্রের তান্ডবলীলা। দিয়ারারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ৩দিনে যে হারে ভাঙছে নদ তা অব্যাহত থাকলে ভাঙনে হারিয়ে যাবে স্কুলটিও। নদীতে পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে ভাঙনের তীব্রতাও বেড়ে গেছে। বড় বড় চাপ ভেঙ্গে পড়েছে নদীতে।

মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরল ইসলাম জানান, কয়েকদিন থেকেই ব্রহ্মপুত্র ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। রাজিবপুর শহরের সঙ্গে একমাত্র যোগযোগের মাধ্যম সড়কটির কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, যে রাস্তাটি ভেঙে গেছে সেখানে সামান্য একটু পানি বাড়লেই নয়ারচর ও দিয়ারারচর এলাকার হাজার হাজার বিঘা আমন আবাদ ভেঙে যাবে। এই আশংকায় ভুগছে ওই এলাকার চাষীরা। অতি শীগগিরই সেখানে বাঁধ না দিলে অনেক ফসলী জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মোহনগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন আনু জানান, ভাঙ্গনের এ খবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মাকর্তা আব্দুল লতিফ খান, উপজেলা চেয়ারম্যান শফিউল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিছ বেগম, রাজিবপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন, শাহজাহান আকুল, নয়ারচর ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আনোয়ার হোসেন, ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম নুরু, বাদশা মিয়া, মতিউর রহমান ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন। এলাকার মানুষ পরিদর্শকদের নিকট নদী ভাঙনের হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে আকুল আঁকুতি জানান।

(আরআইএস/এএস/সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৪)


পাঠকের মতামত:

১৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test