E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুষ্টিয়ার খামারীদের ভারতীয় গরুর আগ্রাসনের শংকা

২০১৪ অক্টোবর ০১ ১৫:১৩:৪২
কুষ্টিয়ার খামারীদের ভারতীয় গরুর আগ্রাসনের শংকা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ায় একেকটি বাড়ি যেন একেকটি খামার। এখানকার গরুর চাহিদা দেশজোড়া। প্রতি ঈদে লাখ লাখ গরু ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ হয়ে থাকে। গত দুই ঈদে ভারতীয় গরুতে সয়লাব হওয়ায় এখানকার খামারীরা চরম বিপর্যয়ে পড়লেও সেই বিপর্যয় কাটিয়ে মুনাফা অর্জনের স্বপ্ন দেখছেন এখানকার খামারীরা। তবে এর ভেতরেও যেন শংকা তাদের পিছু ছাড়ছেনা। যদি কিনা ভারতীয় গরুর আগ্রাসন দেখা দেয়। এই শংকার অবশ্য যথেষ্ট কারণও রয়েছে।

বছর তিনেক আগে এখানকার খামারীরা ভাল মুনাফা ঘরে তুললেও গত দু’ঈদের ঠিক সপ্তাহ আগে ভারতীয় গরুতে সয়লাব হওয়ায় ঠিক বিপরীত চিত্র অর্থাৎ লোকসান গুনে হতাশায় ফিরতে হয় খামারীদের। তবে এবার যেন সেই সম্ভাবনা নয় বুক ভরা আশা নিয়ে এখানকার খামারীরা ছুটে চলেছেন ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গো-হাটে। জেলার ৬টি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক ভর্তি গরু ছুটে চলেছে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আশাদুল ইসলাম জানিয়েছেন গত ঈদের চেয়ে এবার কুষ্টিয়ায় খামারীর সংখ্যা কমেছে। তাদের হিসেব মতে সাড়ে ৩শ’র মতো খামারী রয়েছে। তাতে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। যদি কিনা ভারতীয় গরুর আগ্রাসন না হয়।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কুমারগাড়ার খামারী নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন গত দুই ঈদে উন্নত জাতের গরুর আবাদ করলেও কাঙ্খিত মুনাফা পাওয়া যায়নি। তবে এবার আশা ছাড়িনি। সারা দেশে গরুর উৎপাদন কম হওয়ায় আশা করছি গরুর ভাল দাম পাব। এবার দেশী বিদেশী মিলে প্রায় ৩০টি গরু পালন করেছেন তিনি। তবে গত দু’বারের মত এবারও যদি ভারতীয় গরুর আগ্রাসন দেখা দেয় তাহলে চরম বিপর্যয়ে পড়তে হবে বলে মনে করেন তিনি। একই কথা জানিয়েছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মিনাপাড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী টিক্কা। তিনি জানান গত দুবার বেশ লস খেয়েছেন। এবার ভাল মুনাফা অর্জনে আশাবাদী তিনি। তবে শংকা ভারতীয় গরুর আগ্রাসন। এবার ভারতীয় গরু আসলে সর্বশান্ত ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা।

এদিকে কুষ্টিয়ার খামারী ও ব্যবসায়ীরা কাঙ্খিত লক্ষ নিয়ে গরু ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যন্ত বাজারের উদ্দেশ্যে নিয়ে গেলেও পথে পথে শিকার হতে হয় চাঁদাবাজীর। সরকার ব্যবসায়ীদের নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌছতে কঠোর পদক্ষেপের কথা জানালেও সড়কে চাঁদাবাজী অভিযোগ তুলেছে ব্যবসায়ীরা। আর এই অভিযোগ খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় যেতে রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নেয়া হচ্ছে চাঁদা। আর চাঁদা না দিলে দেয়া হচ্ছে মামলা। এনিয়ে কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ীদেরকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।

পোড়াদহের ব্যবসায়ী শফিক জানিয়েছেন গরু নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে তেমন একটা সমস্যা না হলেও ফেরার পথে রাজবাড়ি জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চাঁদাবাজীর কবলে পড়তে হয়। ১শ’ টাকা হতে হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে তাদের। না দিলে দেয়া হচ্ছে মামলা। রাজবাড়ি জেলার মাছপাড়া এলাকার ট্রাক চালক সোহেল জানান পুলিশকে যেতেও টাকা দিতে হয় আবার ফিরতেও চাঁদা দিতে হয়। এমন পরিস্থিতি আমাদেরকে হতাশ করেছে।

এব্যাপারে তিনি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তবে পুলিশ নয় সকল প্রকার চাঁদাবাজী কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে হুঁশিয়ারী দিয়েছেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন। কুষ্টিয়াতে কোন চাঁদাবাজীর ঘটনা ঘটছেনা দাবি করে জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন জানান গরু উৎপাদনে কুষ্টিয়ার যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে। তাছাড়া অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। আসন্ন ঈদে যাতে করে ব্যবসায়ী ও খামারীরা নির্বিঘ্নে গরু দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাটে পৌছতে পারে সেই লক্ষে সকল প্রকার সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এব্যাপারে কুষ্টিয়ার প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।


(কেকে/এএস/অক্টোবর ০১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test