E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সংস্কার কাজে গতি নেই, চলছে খোলা মাঠে পাঠদান

২০১৪ নভেম্বর ০৮ ১৮:৪৩:৩৭
সংস্কার কাজে গতি নেই, চলছে খোলা মাঠে পাঠদান

নাটোর প্রতিনিধি : মাহি ফারজানা, সাব্বির হোসেন, রীমা খাতুন, মিসকাত, সোহান ও বৃষ্টি ওরা সকলেই নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল ইউনিয়নের শ্যামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থী। আর ক’দিন পরেই ওদের বার্ষিক সমাপনী পরীক্ষা। কিন্তু পড়াশুনায় তাদের রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। একদিকে শিক্ষক স্বল্পতা, অন্যদিকে বিদ্যালয়ের ভবন মেরামতের কাজ চলায় গত ৬ মাস ধরে ওদের খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে ক্লাস কর

যে দিন বৃষ্টি হয় সেদিন ক্লাস ছুটি হয়ে যায়। ফলে তাদের লেখাপড়া অনেকাংশ ব্যাহত হচ্ছে। সামনে বার্ষিক ও সমাপনি পরীক্ষা তাই উৎকন্ঠায় রয়েছেন অভিভাবকরা। শনিবার সরজমিনে গিয়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেন অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীরা। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বিদ্যালয়ের বহু পুরাতন ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় তা সংস্কার করা হচ্ছে। অন্য কোন ব্যবস্থা না থাকায় মাঠে গাছের নিচে পাঠদান করা হচ্ছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৪১ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। এই দীর্ঘ সময়ে টিনের চালার তৈরি দু’টি ভবন কখনই সংস্কার করা হয়নি। বিদ্যালয়ে মোট ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে ১৩৭ জন। ৫ জন শিক্ষকের পদ বরাদ্দ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন ৩ জন। ভবন সংস্কারে সরকারীভাবে কোন বরাদ্দ মেলেনি। তবে রুম টু রীড নামে এক বেসরকারি সংস্থা ও স্থানীয়ভাবে অর্থের যোগান দিয়ে সম্প্রতি জরাজীর্ণ ভবন সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। এই সংস্কার কাজের জন্য ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্যে গ্রামবাসীর দেওয়া তহবিল রয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। এলাকার কেউ কেউ দ্রুত গতিতে কাজ হচ্ছেনা বলে ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন।

স্থানীয়রা জানান,বিদ্যালয়টি বহু পুরাতন। টিনের চালার তৈরি ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় তা মেরামত করা হচ্ছে। একারনে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুদের গত প্রায় ৪ মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। এর আগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই জরাজীর্ণ ভবনে ক্লাস করতে হয়েছে। তবে এলাকাবাসীসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভবনের সংস্কার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছে।

অভিভাবক ও গ্রাম প্রধান আব্দুস সামাদ জানান, স্কুল ভবন জরাজীর্ণ হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গ্রামবাসীর সহায়তায় বেসরকারি সংস্থা রুম টু রীট স্কুলটি সংস্কার কাজ করছে। তবে কাজের গতি কিছুটা স্লথ হওয়ায় শিশুদের খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হচ্ছে। আগে জরাজীর্ণ ভবনে আতংক নিয়ে ছেলে মেয়েদের ক্লাস করতে হয়েছে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুপ্রিয়া রানী সাহা জানান, ক্লাস নেওয়ার মত আশে পাশে অন্য কোন ভবন নেই। সামনে বার্ষিক সমাপনি পরীক্ষার কথা মাথায় রেখে বাধ্য হয়ে ক’মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিতে হচ্ছে। ছোট আকারের একটি জরাজীর্ন ভবনে পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস নিতেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ফলে খোলা মাঠে ১ম,২য় , ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর ক্লাস নিতে হয়। কোমলমতি শিশুদের রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে ক্লাস করতে কষ্ট হচ্ছে।


দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী বৃষ্টি ও তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সোহান জানায়, খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে তাদের কষ্ট হয়। তাদের শরীরে রোদ লাগে। এছাড়া পাখির মল মুত্র তাদের জামা-কাপড় ও শরীর নষ্ট হয়।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশীদ জানান, বিদ্যালয়ের লেখা পড়ার মান অনেক ভাল। তাই পুরাতন ভবন সংস্কারের জন্য ছেলেমেয়েদের বাহিরে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। সমস্যা হলেও অভিভাবকদের মতামত নিয়েই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ ছাড়াই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ গ্রামবাসীর দেওয়া অর্থের বিনিময়ে এই সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। একটি জরাজীর্ণ কক্ষে এখনও ৫ম শ্রেণীর ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। সেখানেও শিক্ষার্থীদের কষ্ট হয়। নির্মাণ কাজের মালামালসহ আসবাবপত্রের মধ্যে বসে তারা ক্লাস করছে। মেরামত কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের আরো একটি ভবন ছাড়া শিক্ষকের শুন্য পদ পুরনের দাবিও রয়েছে এলাকাবাসীর।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাইফুল জানান, বিদ্যালয়ের নানা সমস্যা রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী অনুযায়ী বসার আসন কম। শিক্ষক কম। স্কুলটি স্থাপনের পর থেকে সংস্কার করা হয়নি। জরাজীর্ণ হয়ে পড়া টিনের চালার ভবনটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামত কাজ করা হচ্ছে। এই টাকার মধ্যে গ্রামবাসী ১ লাখ ৫ হাজার টাকা যোগান দিয়েছে। বেসরকারি সংস্থা রুম টু রীড এই কাজ বাস্তবায়ন করছে। চলতি বছরের আগষ্ট মাসে কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সিংহভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এখন টিন লাগালেই ক্লাস করা যাবে। সংস্থাটি নিজেদের অর্থায়নে নাটোর জেলায় অন্তত ৭টি স্কুল সংস্কার করছে। তিনি শ্যামনগর স্কুলের জন্য আরো একটি ভবন নির্মাণের দাবি জানান।

রুম-টু রীডের প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, কাজে কোন ধরনের গাফিলতি করা হয়নি। সিভিলাই গ্যালকো কালার (রঙ্গিন) টিন সরবরাহ না পাওয়ায় কাজটি শেষ করা যায়নি। চট্রগ্রাম থেকে টিনগুলো সরবরাহ পাওয়া গেলে ভবন বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার আশা করছেন তারা।

নলডাঙ্গা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পরিমল কুমার ঘোষ মেরামত কাজের জন্য শিশুদের খোলা মাঠে বসে ক্লাস করানোর বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে জানান, বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান ভাল। সামনে সমাপনি ও বার্ষিক পরীক্ষা। তাই অভিভাবকদের মতামতের ভিত্তিতে খোলা মাঠে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। যেহেতু আশে পাশে কোন ভবন নেই, সে কারণেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া যারা ভবন মেরামতের দায়িত্বে রয়েছে, তাদের দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

(এমআর/এএস/নভেম্বর ০৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test