E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

নারায়ণগঞ্জে প্রতিদিন ৩০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি

২০১৪ মে ০৯ ১২:৪৮:২০
নারায়ণগঞ্জে প্রতিদিন ৩০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি

স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত হত্যাকাণ্ড মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন চেয়ারম্যান ও তার ১২ সহযোগী পালিয়ে থাকলেও বন্ধ হয়নি চাঁদাবাজি। ফলে তার নিয়োজিত তিন শতাধিক চাঁদাবাজ ১৬টি খাত থেকে প্রতিদিন ৩০ লক্ষাধিক টাকা চাঁদা ঠিকই আদায় করা হচ্ছে।

আর এ টাকার ভাগ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা, নারায়ণগঞ্জ জেলা ডিবিসহ প্রশাসনের চারটি ইউনিট ও পাঁচজন জনপ্রতিনিধিসহ নয়জন নেতার কাছে।

জানা যায়, হোসেন চেয়ারম্যানের সাম্রাজ্য বলে চিহ্নিত সাইনবোর্ড, শিমরাইল, চিটাগাং রোড ও চনপাড়া বস্তি এলাকার নানা অপরাধ, প্রকাশ্য মাদক স্পট ও চাঁদাবাজি থেকে প্রতিদিন জেলা ডিবি অফিসের নামে দুই লাখ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার নামে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা বখরা পাঠানো হয়।

আরও জানা যায়, পরিবহনে চাঁদাবাজি, নৌ-রুটে চাঁদাবাজি, যাত্রা, মাদক ব্যাবসা, ভূমিদস্যুতা, টেন্ডারবাজি, গাড়ি ছিনতাই, ট্রাক-ডাকাতি, আদমজী ইপিজেডের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, হোটেলসহ ফ্ল্যাট বাড়ির দেহব্যবসা, চুন কারখানার উৎপাদন, নতুন বাড়িঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে চাঁদা আদায় করা প্রতিদিনের রুটিন চাঁদাবাজি। এ ছাড়া বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানি, মিল-কারখানা, বড় ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক হারে চাঁদা আদায়ের ঘটনাও কম নয়। নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত শিমরাইল ট্রাকস্ট্যান্ডের চাঁদাবাজ আনোয়ার জানান, মাসিক হারে আদায়কৃত চাঁদার টাকা সরাসরি নূর হোসেনের কাছে পৌঁছে যেত। প্রতি মাসে এর পরিমাণ অন্তত ১০ কোটি টাকা বলে জানা যায়।

সাত হত্যাকাণ্ডের পর হোসেন চেয়ারম্যানের চিহ্নিত চাঁদাবাজরা দুই দিন চাঁদাবাজিসহ রুটিন অপরাধগুলো বন্ধ রাখলেও এখন ফের তৎপর হয়ে উঠেছে। নূর হোসেন ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের অবর্তমানে এখন তাদেরই সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে পরিচিত সন্ত্রাসীরা নেতৃত্ব দিচ্ছে চাঁদাবাজির। আনোয়ার হোসেন আনু, টিপু, সালাহউদ্দিন, আফাজ উদ্দিন, জামাল, সাদেকুর রহমান, সামছুদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া, জাকির হোসেন, শিপন, বরিশাইল্যা মামুন, সেলিম, আবুল বাশার ওরফে বিয়ার বাশার, রাসেল, জুয়েল, মোশারফ, নোয়াখাইল্যা কামাল, আমান ওরফে ভেজাল আমান, ড্রাইভার হাফিজসহ অন্যরা। চুন কারখানাসহ আশপাশের মিল-কারখানায় চাঁদাবাজিতে নিয়োজিত রয়েছে জামাল, আলেক ও চুইন্যা আনোয়ার। শিমরাইল এলাকায় অবস্থিত ট্রাকস্ট্যান্ড। এখানে সড়ক ও জনপথের জায়গায় প্রায় ৩০০ গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রেখে গড়ে তেলা হয়েছে টার্মিনাল। ছয়-সাত শ' গাড়ি থাকে নিয়মিত। নূর হোসেন টেন্ডার ছাড়াই নিজের নামে এ টার্মিনাল দখলে নেন।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, খালি ট্রাকপ্রতি দিনে চাঁদা আদায় হয় ৫০০ টাকা। আর পণ্যবাহী ট্রাক থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায়ের নজিরও রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি হয় টার্মিনাল ঘিরে। সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে চিটাগাং রোড পর্যন্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশে শত শত অস্থায়ী দোকাটপাটের অবৈধ বাজার গড়েছে হোসেন সিন্ডিকেট। এসব অস্থায়ী দোকান বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রেও ক্ষুদ্র হকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এককালীন দুই লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। এখন প্রতিদিন একেকটি দোকান থেকে দেড় থেকে দুই শ' টাকা আদায় করা হয়। তাদের কাছ থেকে প্রতিদিন চার লক্ষাধিক টাকার চাঁদাবাজি ঘটে বলে জানা গেছে।

এ চাঁদা আদায়ে নিয়োজিত রয়েছে রতন, শিহাব, ময়েজউদ্দিন, মুন্নাসহ ৮-১০ জন। শীতলক্ষ্যা নদীর চলাচলরত বিভিন্ন মালবাহী জাহাজ, ট্রলার থেকে নৌকা দিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। মালবাহী জাহাজ থেকে ৩০০ ও বালুবাহী ট্রলার থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে রতন গ্রুপ ও রিপন গ্রুপ। নারায়ণগঞ্জ-চিটাগাং রুটে চলাচলকারী গাড়ির প্রতি ট্রিপে নির্ধারিত ২০০ টাকা চাঁদাবাজি চলছে স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে।

জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জ গোদনাইল বার্মাস্ট্যান্ড পদ্মা ও মেঘনা কোম্পানিতে তেল আসে চট্টগ্রাম থেকে। তেল সরকারের হলেও এর পুরো নিয়ন্ত্রণ মতিউর রহমান মতি ও অখিল ভূঁইয়ার হাতে। উভয়েই নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। এ থেকে চাঁদাবাজচক্র প্রতিদিন অন্তত ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সিদ্ধিরগঞ্জ-ডেমরা সড়কের রাণীমহল ও স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় বেবিট্যাঙ্-সিএনজি থেকে প্রতি মাসে ৩০ লক্ষাধিক টাকা আদায় করা হচ্ছে। রানীমহলে চাঁদা আদায় করছে শাহজাহান মিয়া এবং স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় চাঁদা কালেকশন করে জনৈক সিকান্দার। প্রতিটি বেবিট্যাঙ্-সিএনজি থেকে ২০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়। এছাড়া প্রতি মাসে থানা-পুলিশের নামে একেকটি গাড়ি থেকে আলাদাভাবে ২০০ টাকা চাঁদা নেয়া হয় বলে ভুক্তভোগী চালকরা অভিযোগ করেছেন। ওই রুটে সাড়ে তিন শতাধিক সিএনজি-বেবিট্যাঙ্ চলাচল করে থাকে। শিমরাইল মোড় রেন্ট-এ-কার স্ট্যান্ড থেকে দুই শতাধিক প্রাইভেটকার ও মাইক্রো চলাচল করে থাকে। স্ট্যান্ডটি থেকে প্রতি মাসে নূর হোসেনের জন্য পাঁচ লাখ টাকা সালামি পাঠাতে হয়। এ ছাড়া প্রতিদিন সেখানে চাঁদা আদায় হয় ৪০-৫০ হাজার টাকা।

(ওএস/এটি/মে ০৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test