E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঝিনাইদহে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি, ৫ মাসে নিহত ৩১

২০১৪ জুন ০৯ ২২:২০:৪০
ঝিনাইদহে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি, ৫ মাসে নিহত ৩১

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা কর্মস্থলে লাঞ্চিত হচ্ছেন। গ্রামবাসীর মধ্যে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। প্রতিপক্ষের আঘাতে আহত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালে।

এদিকে খুন, অপহরণ, চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও ধর্ষণের ঘটনায় জনমনে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। যাত্রার নামে উলঙ্গ নাচ আর জুয়ার আসরে ছেয়ে গেছে গ্রামীণ জনপদ।

শৈলকুপা ও কোটচাঁদপুর শহরে পুলিশের তত্বাবধানে মাসের পর মাস জুয়ার আসর চলছে। আর পুলিশের আটক বাণিজ্যে মানুষ দিশেহারা। পুলিশও অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। তারা আটক করে অভিনব পন্থায় মুক্তিপণ আদায় করছে। ফলে মানুষের আশা ভরসার শেষ আশ্রয়টুকু নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।

মহেশপুরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাজান টাকার নেশায় যেন বিভোর। চাকরির শেষ পর্যায়ে এসে তিনি কাঁচা খুলে টাকা আদায়ে ব্যস্ত। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে বহুবার লেখালেখি হয়েছে।

জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে নারী শিশুসহ জেলায় খুন হয়েছেন অন্তত ৩১ জন।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আদর্শ-আন্দুলিয়া গ্রামে মজিবর রহমানের ছেলে মসিয়ার রহমান (৫০) খুন হন। রহিম নামে এক মাদ্রসা ছাত্রকে অপহরণ করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অপহরণকারী চক্রের চার সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

ঝিনাইদহ উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য ইলিয়াসকে গুম করা হয়েছে। ৮ দিন ধরে তিনি নিখোঁজ। সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে লুৎফর রহমানের ছেলে আব্দুল খালেক মণ্ডলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র ইসমাইল হোসেন, আড়পাড়ার ৫ মাসের শিশু নুসরাত, মহেশপুর ঘুঘরী গ্রামের কৃষক আমিনুল হক, করিঞ্চা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, শৈলকুপার দুধসর গ্রামের কৃষক বিশারত শেখ, শ্রমিক নেতা আব্দুল গফফার, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কাপাশহাটিয়া গ্রামে এক গৃহবধু, শিকারপুর গ্রামের মহিউদ্দীন, শৈলকুপার চতুরা গ্রামে আইয়ূব হোসেন, কোটচাঁদপুরের ইউপি সদস্য হাফেজ আবুল কালাম, ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর এলাকায় শৈলকুপার মাদ্রাসা ছাত্র জিহাদ, হরিণাকুণ্ডুর তোলা গ্রামে বোমা হামলায় জাহাঙ্গীর, শৈলকুপার মিনগ্রামে আজাদসহ অনেক মানুষ খুন হয়েছেন।

এ সময়ে ডজন খানেক নারী ও শিশু ধর্ষনের শিকার হয়েছে। হরিণাকুণ্ডু ও সদর উপজেলায় দুই ছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্ষণ করা হয়েছে। জেলা শহরের চাকলা পাড়া ও কাঞ্চনপুরে দুই শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন চরমপন্থি দলের নামে নীরব চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। জিনের বাদশার অত্যাচারে গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। শহরে ৫ মাসে শাতাধিক মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। এ সব ঘটনায় জেলার আইন শৃংখলা পরিস্থিতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করেছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মাঝে পুলিশের আটক বাণিজ্য সব কিছু ম্লান করে দিচ্ছে।

ইতিমধ্যে দুইজন ওসি ও একজন এসআইয়ের বিরুদ্ধে আটক বাণিজ্যের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এরা হলেন মহেশপুর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেন, কালীগঞ্জ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনির উদ্দিন মোল্লা এবং সদর থানার কর্মকর্তা এস আই মিলন মৈত্র। নতুন করে মহেশপুর থানার ওসি শসাহাজান ও কোটচাঁদপুর থানার এসআই মিজানের বিরুদ্ধে আটক বানিজ্যের অভিযোগ ওঠেছে। তারা সাধরণ মানুষকে জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছেন।

মহেশপুর থানার ওসি শাহজাহান গত ৮ মে কাজির বেড় ইউনিয়নের বাঘাডাঙ্গা গ্রামের মুহাম্মদ আলী, জিন্না নগর গ্রামের সমশের আলী ও তার ছেলে এনামুল হককে মারপিট করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৪ লাখ টাকা আদায় করার খবর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রাকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নেপা গ্রামে মন্টু নামে এক ইউপি সদস্যকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে রাতভর পুলিশ লাইনস এর সামনে দেন দরবার করার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ওসি শাহজাহানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল করে মহেশপুরের সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজের বাড়ি ঘেরাও করেন।

কোটচাঁদপুর থানার বর্তমান ওসিসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে আদালতে নালিশী মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে কর্মস্থলে সরকারি কর্মকর্তারা নাজেহাল হচ্ছেন। ইতোমধ্যে ঝিনাইদহের চারজন নির্বাহী প্রকৌশলীর ওপর হামলা করা হয়েছে। দুইজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজেহাল হয়েছেন। একজন নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট উপজেলা নির্বাচনের জের ধরে রোষানলে পড়েন। উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিনিয়ত বিব্রতকর পরিস্থিতির ফেলছে।

(ওএস/এস/জুন ০৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test