E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদ্রাসায় ছাত্র-ছাত্রী বাড়াতে আগাম বই বিতরণ শুরু

২০১৪ ডিসেম্বর ১১ ১৮:০৩:৫৭
মাদ্রাসায় ছাত্র-ছাত্রী বাড়াতে আগাম বই বিতরণ শুরু

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : মাদ্রাসায় ভর্তি হলেই জান্নাতে যাওয়া যাবে, স্কুলে ভর্তি হলে দোজখ এমন গুজব ছড়িয়ে ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে মাদ্রাসা শিক্ষকরা। এমনকি ২০১৫ সালের পাঠ্যবইও শিক্ষার্থীদের দিয়ে দেয়া হচ্ছে আগাম। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চাকামইয়া ইউনিয়নের গাজীপাড়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষকরা এমন প্রচার চালাচ্ছে। অথচ আগামী ১ জানুয়ারি সারাদেশে নতুন পাঠ্যবই বিতরণের কথা। মাদ্রাসা শিক্ষকদের এমন প্রচারে ধর্মভীরু গ্রামের মানুষ তাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

সরেজমিনে বুধবার চাকামইয়া ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায় সদ্য পিএসসি পরীক্ষা দেয়া একাধিক শিক্ষার্থী তাদের পরীক্ষার ফলাফল না জানলেও ৬ষ্ঠ শ্রেনীর নতুন বই নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছে। গাজীপাড়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষকরা তাদের এই নতুন বই দিয়েছেন। অথচ সরকারি নিয়ম ১ জানুয়ারি বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।

মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, টিনের অর্ধভগ্ন দোচালা ঘরে ২০/২২ জোড়া বেঞ্চ। নেই চাল ও বেড়া। শ্রেণিকক্ষ যেন ময়লার ভাগাড়। কাগজপত্রে শিক্ষক একাধিক থাকলেও উপস্থিত পাওয়া গেছে একজনকে। মাদ্রাসায় বার্ষিক পরীক্ষা চললেও নেই শিক্ষক উপস্থিতি। ছাত্র-ছাত্রীরা টেবিলে রাখা বই ও একে অপরের খাতা দেখে দেখে লিখছে। তিন ক্লাশে কাগজপত্রে শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৩ জন। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৩৯ জন। ১৪ জনের হদিস নেই। শিক্ষক-কর্মচারীসহ নয় জনের মাত্র একজন উপস্থিত রয়েছেন। লুঙ্গি পরিহিত, হাতা কাটার একটি শার্ট গায়ে। নাম তার মাওলানা মোস্তাক। মাদ্রাসার সুপারসহ অধিকাংশরা শিক্ষক ক্লাশে আসেন না। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৭৭ জন। এটি খাতাপত্রের হিসাব। তবে বাষÍবে উল্টো।

কাঁঠালপাড়া গ্রামের শিক্ষার্থী মারিয়া আক্তার রুপালী জানায়, সে সমাপনি পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু তাদের বাড়িতে মাদ্রাসার দাখিল ষষ্ঠ শ্রেণির বই পৌছে দেয়া হয়েছে। হাতিয়ে নেয়া হয়েছে পঞ্চম শ্রেণির প্রবেশপত্র। এভাবে কাঠালপাড়া গ্রামসহ পাশের তামান্না, তানজিলা, ইমরান, ফারজানা, রিমাসহ অনেককে (দাখিল) ষষ্ঠ শ্রেণির বই দেয়া হয়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষকরা বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে বই বিতরণ শুরু করেছে।

একাধিক অভিভাবক জানান, বাসায় বাসায় গিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষকরা তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় ভর্তি হতে বলছে। এতে নাকি জান্নাত পাওয়া যাবে। আর মেয়েরা স্কুলে পড়লে নাকি বেপর্দা হয়ে নষ্ট হয়ে যায় এমন বোঝানো হচ্ছে।

মাদ্রাসার সুপার মাওলানা হাবিবুর রহমান জানান, মেয়েরা স্কুলে পড়তে গেলে শিক্ষক দ্বারা ইভটিজিং এর শিকার হয়। তাই মাদ্রাসার দিকে ঝুঁকছে। এতে প্রতিহিংসায় নেমেছে অন্য স্কুলের শিক্ষকরা। তারা বই বিতরণ করেননি, কয়েকজন দেখতে নিয়েছিলো। তবে বার্ষিক পরীক্ষার অনিয়মের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন বলে জানান। এছাড়া এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় নানাবিধ সমস্যার কথাও বললেন মাদ্রাসা সুপার।

কলাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী রুহুল আমিন জানান, ১ জানুয়ারির আগে নতুন পাঠ্যবই দেয়ার নিয়ম নেই। যদি কোন মাদ্রাসা বা স্কুল শিক্ষকরা আগাম বই বিতরণ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এমকেআর/এএস/ডিসেম্বর ১১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test