E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দুশ্চিন্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ লাখ শিক্ষার্থী

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ০৫ ১১:২০:১৬
দুশ্চিন্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ লাখ শিক্ষার্থী

স্টাফ রিপোর্টার : দলের লাগাতার অবরোধ-হরতালে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম। হাতেগোনা দু-একটি বাদে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হচ্ছে না। পিছিয়ে যাচ্ছে একের পর এক পরীক্ষা; তৈরি হচ্ছে সেশনজট। ফলে প্রায় ৩০ লাখ ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাজীবন আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। দেশে বর্তমানে সরকারি ৩৪টি ও বেসরকারি ৭৮টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া হরতাল-অবরোধের কারণে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকে আবাসিক হল ছেড়ে দিয়েছেন।

এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভ্যন্তরীণ সমস্যাও সেশনজট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট সৃষ্টি করছে স্বীকার করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বুধবার সমকালকে বলেন, 'জানুয়ারি মাস দেশের প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ভর্তি, ক্লাস, বই বিতরণ ও পরীক্ষার সময়। বিএনপি জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধের কারণে এর প্রতিটি কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এ বছর হরতালের মধ্যে আমাদের পাঠ্যবই বিতরণ করতে হয়েছে। বছরের শুরুতেই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস এবং পরীক্ষা হচ্ছে না। এসএসসি পরীক্ষা নিতে দেওয়া হচ্ছে না, যা দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনকে ভয়াবহ সর্বনাশার পথে নিয়ে যাচ্ছে। এই হরতাল-অবরোধ দেশের জন্য একটি মাত্র ফলই বয়ে আনছে, তা হলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেওয়া।'

উদ্ভূত পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে গিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, বিএনপি সবসময় দেশ ধ্বংসের রাজনীতি করে। গত ছয় বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেশনজট অনেকাংশেই শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে সরকার। শিক্ষার্থীরা নিজেদের মূল্যবান শিক্ষাজীবনের কথা চিন্তা করে রাস্তায় নেমে এলে দেশবিরোধী সব অপতৎপরতা বন্ধ হবে।বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র :খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো কোনো অনুষদে আগে থেকেই কিছুটা সেশনজট চলছিল। টানা এক মাসের হরতাল-অবরোধে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ছাত্রছাত্রীরা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন যথাসময়ে শিক্ষাবর্ষ শেষ হওয়া নিয়ে। অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দু'একটি বিভাগ ছাড়া তেমন সেশনজট নেই। উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের মধ্যেও শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়েও কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

চবির ফিন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট, মাইক্রোবায়োলজি, ইতিহাস, আরবি বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় অর্ধশত পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে অবরোধ-হরতালের কারণে।আগে থেকেই সেশনজটের খপ্পরে পড়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গত ৯ জানুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদের অধীন ২২টি বিভাগের মধ্যে শুধুমাত্র আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ সেশনজটের বাইরে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে এক বছরের সেশনজট তৈরি হয়েছে। টানা অবরোধ ও হরতালে শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে পড়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। গত কয়েক দিনে ক্যাম্পাসে সরেজমিন দেখা গেছে, হরতালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের দাবি, অবরোধে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অবরোধে ক্লাস-পরীক্ষা চললেও হরতালে প্রায় ৩৪টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউটের মধ্যে অর্ধেক বিভাগে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না।বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় :সেশনজট ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পছন্দ করেন অনেক অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রী। বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতার থাবা তাদেরও ছাড় দেয়নি। অবরোধের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্লাস-পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অনুরোধে লাগাতার হরতালে তা বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে 'মিড টার্ম' পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। হরতালের কারণে ক্লাস-পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে। ফলে পুরো সেমিস্টার পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কে মউদুদ ইলাহী সমকালকে বলেন, একটি সেমিস্টার পেছালে পুরো 'একাডেমিক ক্যালেন্ডার' পিছিয়ে যায়। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মাত্র ৫০ শতাংশ পাঠ্যসূচিও পড়ানো শেষ করতে পারেনি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষাবিদদের হতাশা, ক্ষোভ :নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতা চালিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষতি ও জাতিকে শিক্ষাহীন করার চেষ্টা চলছে। এরপরও ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় চেষ্টা করছে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার।শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ২০ দলের যে হরতাল, তা পরিষ্কার শিক্ষার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস। যারা হরতাল দিচ্ছেন তাদের সন্তানরাও তো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। তাহলে তারা কেন হরতাল দিচ্ছেন?
(ওএস/পিবি/ফেব্রুয়ারি ৫,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test