E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হাসিমুখ : পকেট খরচ বাঁচিয়ে পথশিশুদের স্কুল

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ০২ ০৯:৪০:১৮
হাসিমুখ : পকেট খরচ বাঁচিয়ে পথশিশুদের স্কুল

হুমায়ন আহমেদ : ঢাকা শহরের অলি-গলি রাস্তার ধারে বেড়ে ওঠা অবহেলিত ও সুবিধা-বঞ্চিত শিশুদের মুখে হাসি ফোঁটাতে এক ব্যতিক্রম উদ্যোগের নাম হাসিমুখ স্কুল। উদ্যোক্তাদের ব্যক্তিগত খরচের টাকা বাঁচিয়ে পথশিশুদের শিক্ষায় গড়ে তোলা হয়েছে ব্যতিক্রমী এ স্কুলটি।

রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাহবাগের পরীবাগে এ হাসিমুখ স্কুলটির অবস্থান। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়া প্রায় ১০০ জন কোমলমতি শিশুদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পাশাপাশি শিক্ষার উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছেন তারা। চিকিৎসা সেবা, শীতবস্ত্রও প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়।

রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সন্ধ্যাবেলায় শতাধিক শিশুকে পড়াশোনা এবং হালকা নাশতা পরিবেশন করছে সংগঠনটির ভলান্টিয়াররা। এসময় কথা হয় সংগঠনের অন্যতম ভলান্টিয়ার ডাঃ এ এইচ এম ফাহাদ এর সাথে।

তিনি জানান, স্থানীয় কয়েকজন হৃদয়বান ব্যক্তির সহায়তায় এ উদ্যোগটি নেয়া হয়।

সপ্তাহে ছয়দিন সন্ধ্যাবেলায় শতাধিক শিশুকে পড়াশোনা এবং হালকা নাশতা পরিবেশন করা হয়ে থাকে। প্রতিটি শিশুর বই, খাতা, পেনসিল, কলম থেকে শুরু করে সকল প্রকার শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, তাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বিভিন্ন ধরনের আয়োজন যেমন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি, রোজার মাসে ইফতার, ঈদের সময় মেহেদী উৎসব, নতুন পোষাক বিতরণ সহ পথশিশুদের নানা আবদার মিটিয়ে আসছে এই সংগঠনটি। এছাড়া প্রতি বছর ২৫/৩০ জনকে স্কুলে ভর্তি করানো, তাদের স্কুল ব্যাগ, স্কুলের বেতন, ড্রেস থেকে শুরু করে সব ধরনের খরচ বহন করে আসছে সংগঠনটি।

ডাঃ ফাহাদ জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া মেধাবী শিক্ষার্থী ও চাকুরিজীবী প্রায় ২৫ জন অদম্য তরুণ- তরুণীর স্বেচ্ছাশ্রমে পরিচালিত হয় এই সংগঠনটি। এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তাদের পাশে দাড়িয়েছেন রোটারিয়ান নুসরাত আক্তার (একা)। ডাঃ ফাহাদ ছাড়াও নিয়মিত সার্বিক সেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন নাসির, প্রমি, জুলকার, আলভী, রায়হান, মিলন, জাহিদ, মিশাল, জনি ও শারমীন সহ আরো বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী।

তাদের অদম্য চেষ্টা, আত্ববিশ্বাস ওপরিশ্রমের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে শতাধিক পথশিশুর হাসিমাখা মুখের দিকে তাকালে।

সরজমিনে পরিদর্শণ কালে জানাযায়, এ স্কুলের শিশুদের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই নিম্নবিত্ত দিন মজুর খেটে খাওয়া শ্রমিক পরিবারের সন্তান।

কথা হয় হাসিমুখ স্কুলের ছাত্রী তাহমিনার সাথে। তারা বাবা মারা গেছেন, মা বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছে তাহমিনার। সে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনীতে জিপিএ ৫ (এ প্লাস) পেয়েছিলো। হাসিমুখ স্কুলের সহায়তায় তার পড়াশোনা চলছে। নিয়মিত স্কুলে পড়াশোনা করছে।

মাজেদা সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। তারও বাবা নেই। কষ্টের মাঝে মায়ের উপার্জনে সংসার চলাতে হিমসিম খায়। কিন্তু পড়াশোনা চলছে হাসিমুখ স্কুলের সহায়তায়।

কথা হয় ফয়সালের সাথে। তার বাবা একজন নির্মাণ শ্রমিক। সে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। গতবারের পঞ্চম শ্রেণী শিক্ষাসমাপনি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ (এ প্লাস) পায়। সে জানায় পড়াশোনার পাশাপাশি এ স্কুল থেকে তারা লেখাপড়ার জন্য বই, খাতা, কলম বিনামূল্যে পাচ্ছে।

এদিকে হাসিমুখ স্কুলের সন্তানদের পড়ালেখায় সুযোগ পাওয়ায় খুব খুশি অভিভাবকরাও। তারা জানালেন অভাব-অনটনের কারণে তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারছেন না। এ অবস্থায় হাসিমুখ স্কুল ছেলেমেয়েদের শিক্ষা লাভের সুযোগ দেওয়ায় বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের চিন্তা কমেছে।

কথা হয় হাসিমুখ স্কুলের পরিচালনা কমিটির সদস্য ও অন্যতম পৃষ্টপোষক রোটারিয়ান নুসরাত আক্তার একা’র সাথে। তিনি জানান, ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে রাস্তার ধারে পুরনো ও ছেঁড়া জামাকাপড়ে এলোমেলো ভাবে শত শত সুবিধাবঞ্চিত শিশু ঘুরে বেড়াচ্ছে অহরহ। যে বয়সটাতে এদের মা-বাবার আদর স্নেহে বড় হওয়ার কথা। বই হাতে স্কুলে যাওয়ার কথা, হইচই, খেলাধুলায় ডুবে থাকার কথা অথচ সেই বয়সটাতেই এরা পথে পথে ঘুরছে দু বেলা দু মুঠো খাবারের সন্ধানে। এ মহানগরীতে আসলে আমরা সবাই ব্যস্ত। তাই ব্যস্ততম এ মহানগরীতে এদের দিকে একটু মমতা, ভালোবাসা বা স্নেহের চোখে কেউই এদের দিকে তাকায়না বললেই চলে। বা তাকানোর সময়ও পায়না। মানবিক দিক থেকে বিষয়টি উপলব্ধি করে অনেকদিন ধরে এমন একটি কিছু করার তাগিদ অনুভব করছিলাম। যার ফলশ্রুতিতে সুবিধা বঞ্চিত অবহেলিত শিশুদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কয়েক বন্ধু মিলে বিভিন্ন উপায়ে নিত্যদিনের বিভিন্ন খরচের টাকা বাঁচিয়ে এ সংগঠনের তহবিল গঠন করে এবং তহবিলের যোগান দিয়ে যাচ্ছি। এখনো পর্যন্ত সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ের কোন সংগঠন থেকে আমরা কোন অনুদান বা সহায়তা পাইনি। শুধুই ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে সুবিধা বঞ্চিতশিশুদের কল্যাণে এ স্কুলটি চলছে।

নুসরাত আরো জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে যেন কোন শিশু ঝরে না পরে, প্রতিটি শিশুই যেন অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ পায়-এটা নিশ্চিত করাই তাদের স্বপ্ন। তিনি সমাজের বিত্তবানদের এমন সেবামূলক কাজে এগিয়ে আসারও আহবান জানান।

(ওএস/অ/ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test