E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ রোধে প্রস্তুতির পরামর্শ কারিগরি ক‌মি‌টির

২০২০ সেপ্টেম্বর ২১ ১২:০৪:০৫
দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ রোধে প্রস্তুতির পরামর্শ কারিগরি ক‌মি‌টির

স্বাস্থ্য ডেস্ক : দেশে পুনরায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশংকা রয়েছে। তাই করোনার দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে পূর্ণ আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ কর‌তে হ‌বে।‌ 

রবিবার (২০ সে‌প্টেম্বর) কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ২০তম অনলাইন সভায় এ‌ পরামর্শ দেয়া হয়। কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পরামশর্ক কমিটির সদস্যরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলমের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

আলোচনা শেষে নিম্নলিখিত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়-

১. কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ থাকলেও বর্তমানে পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধি, হাসপাতালের সেবার পরিধি ও মান উন্নয়ন করা হয়েছে। সরকারের ও বিভিন্ন সংস্থার পদক্ষেপের কারণেই কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। যেসব দিকে এখনও উন্নয়ন প্রয়োজন সেসব দিকের ঘাটতিও চিহ্নিত হয়েছে। এখন ঘাটতি পূরণ করে পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে হবে।

২. বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণও দেখা যাচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সংক্রমণের মাত্রা অনেক বেশি। এছাড়া বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ উন্মুক্ত হচ্ছে এবং হতে থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়েও জনসাধারণের মধ্যে এক ধরনের শৈথিল্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই সবগুলোর কারণে আমাদের দেশেও পুনরায় সংক্রমণের আশংকা রয়েছে। দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ দ্রুত নির্ণয়ের লক্ষ্যে সতর্ক থাকতে হবে। দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে এখনই করণীয় বিষয়ে রোডম্যাপ প্রস্তুত করে সেই মোতাবেক পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

৩. গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী, যদিও এই হার স্বস্তিকর মাত্রায় এখনও পৌঁছায়নি। সম্প্রতি কিছু কিছু হাসপাতালের শয্যা খালি থাকছে। আবার অন্যদিকে অন্যান্য রোগের রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো কোনো হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা একেবারেই কম। অন্যদিকে সেই সব হাসপাতালে অনেক সংখ্যায় চিকিৎসকসহ অনেক স্বাস্থ্যকর্মী যুক্ত রয়েছেন। হাসপাতাল পরিচালনায় অনেক অর্থ ব্যয় হচ্ছে। অন্যান্য রোগের রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কোভিড-১৯ হাসপাতালের অব্যবহৃত শয্যা সংখ্যা সংকোচনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জাতীয় পরামর্শক কমিটি মনে করে, এখনও আইসোলেশন কেন্দ্রের প্রয়োজন রয়েছে। তাই সংকোচন করা হলেও পুরোপুরি বন্ধ না করে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে যাতে পুনরায় ব্যবহার করা যায় সেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।

৪. কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এক্স-রে ও রক্তের কিছু পরীক্ষার ভূমিকা রয়েছে। শহরের হাসপাতালগুলোতে এই ব্যবস্থা থাকলেও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ দ্রুত নির্ণয়ের লক্ষ্যে বর্ধিত হারে টেস্ট করা প্রয়োজন। জাতীয় পরামর্শক কমিটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের ল্যাবরেটরি কমিটির সাথে যৌথভাবে কোভিড-১৯ টেস্টের নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে। করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে সংক্রমিত ব্যক্তিকে দ্রুত চিহ্নিত করে আইসোলেট করতে হবে।

৫. সভায় করোনার ভ্যাকসিন বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে অলোচনা করা হয় এবং সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে জাতীয় পরামর্শক কমিটির দেয়া পরামর্শ বাস্তবায়ন করার জন্য সুপারিশ করা হয়। করোনার ভ্যাকসিনের টেকনোলজি নিয়ে এই দেশেই উৎপাদন করার সরকারের পরিকল্পনার প্রশংসা করা হয়।

৬. যদিও টিকা উৎপাদনে সারাবিশ্ব সক্রিয়, তারপরও কার্যকর টিকার প্রাপ্যতা সময়সাপেক্ষ এবং সময়সীমা এখনও অনিশ্চিত। যেহেতু লকডাউন জীবিকার স্বার্থে সম্ভপর নয়, তাই এই মুহূর্তে সঠিকভাবে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় চলাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা করোনা প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। এ ব্যাপারে জনসাধারণকে আরও সচেতন ও সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন।

৭. বিভিন্ন দেশ থেকে যাত্রীরা দেশে আসছে। এ বিষয়ে ভ্রমণ সংক্রান্ত পরামর্শ/নিয়ম জারি করা প্রয়োজন। সংক্রমণ প্রতিরোধে পয়েন্ট অব এন্ট্রিতে প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন। বিদেশ থেকে আগতদের স্ক্রিনিং, কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ব্যাপারে করোনা ট্রেসার বিডি অ্যাপটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

৮. সভায় হাসপাতালে দায়িত্ব পালনরত স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা নিয়ে আবারও আলোচনা হয়। স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে সাথে তাদের পরিবার পরিজনরাও কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ে। চিকিৎসকদের মতামত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের পর স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টাইনের জন্য নিরাপদ আবাসনের প্রয়োজন।

৯. কার্যকর রেফারেল ব্যবস্থার জন্য আন্তঃহাসপাতাল নেটওয়ার্ক স্থাপন করার বিষয়ে ইতোপূর্বে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সভায় জানানো হয় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রযুক্তিভিত্তিক নেটওয়ার্ক স্থাপন করার পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এটি সফল হলে পরবর্তীতে অন্যান্য হাসপাতালেও সম্প্রসারণ করা হবে।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test