E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাজেটে স্বাস্থ্যখাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে

২০২২ জুন ১৫ ১৩:৫৭:০০
বাজেটে স্বাস্থ্যখাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার : ২০২২-২৩ অর্থবছরের উত্থাপিত বাজেটে দেশের স্বাস্থ্যখাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী বাজেটে অনেককিছু যুক্ত হয়। আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার মধ্যে থেকে বাজেট প্রণয়ন করতে হয়। বাজেটের বিভিন্ন দিক রয়েছে। গত বাজেটের তুলনায় এবার বাজেটের আকার ১৫ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর আমরা ৩২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলাম। এবার পেয়েছি ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। এবার ১২ শতাংশের মতো বরাদ্দ বেড়েছে। তবে গতবার (আগের ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায়) তা ১৪ শতাংশ বেড়েছিল।

মন্ত্রী বলেন, আমরা আসলে ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো বাজেট পেয়েছি। কারণ, হেলথের অনেক কাজ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও করে থাকে।

বুধবার (১৫ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের “কেমন হলো স্বাস্থ্য বাজেট ২০২২-২৩” শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, বলেন, বিগত বছরের তুলনায় শতাংশ হিসেবে না বড়লেও এবার ৪ হাজার কোটি টাকা বাজেট বেড়েছে। এতে রিসার্চের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আট বিভাগে হাসপাতাল তৈরির কাজ করা হচ্ছে, জেলা হাসপাতালে আইসিইউ ও ডায়ালাইসিস বেড স্থাপনে বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রথমিক চিকিৎসার বিষয়ে বাজেটে গুরত্ব দেওয়া হয়েছে।

বরাদ্দ অব্যবহৃত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, করোনাকালে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করা যায়নি। এবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় তা আরও বেশি করতে পারবো বলে আশা করছি। বাজেট ব্যবহারে আমাদের কিছুটা ঘাটতি আছে। অনেক সময় অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজের সমন্বয় করায় সময় বেশি লাগে। এর ফলে বাজেটের কিছুটা অংশ অব্যবহৃত থেকে যায়। প্রতিটি ক্রয় কার্যক্রমে আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় নিতে হয়। এতে সময় লাগে। আমাদের প্রক্রিয়াগুলো লম্বা, টিকাদার নিয়োগসহ নানা কারণে সময় বেশি লাগে। অনেক সময় টিকাদাররা কাঁচামালের দাম বাড়া ও কমার সাথে কাজের সময় নির্ভর করে।

এ সময় বাজেটে বরাদ্দকে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করতে পারলে তবে ভালো ফল পাওয়া যাবে এবং সেবা পেতে রোগীদের আউট অব পকেট খরচ কমবে বলে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ নিয়ে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বিদ্যমান বাস্তবতায় কিছুটা সংকোচনমুখী বাজেট কামাই হলেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যর মতো সামাজিক খাতের ওপর যেন এর প্রভাব না পড়ে। এখানে কাট-ছাট করা না হলেও বরাদ্দ খুব বাড়েনি। প্রায় এক দশক ধরেই স্বাস্থ্য খাতে বরাদ থাকে জাতীয় বাজেটের ৫ থেকে ৬ শতাংশে মধ্যে। আসন্ন অর্থ বছরের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করেন, স্বাস্থ্যখাতে এ বরাদ্দ ১০ শতাংশ হওয়া উচিত। দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৮ শতাংশই আসছে জনসাধারনের পকেট থেকে। এই ব্যয় (আউট অব পকেট) ৫০ শতাংশে আনতে হলে জাতীয় বাজেট ৭ থেকে ৮ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন।

হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের বিশ্লেষণ বলা হয়, দেশের নাগরিকরা স্বাস্থ্য সেবা পেতে পকেট থেকে যে ৬৮ শতাংশ ব্যয় করেন, তারমধ্যে ওষুধ ও পচনশীল (এমএসআর) চিকিৎসা সামগ্রী কিনতে ব্যয় হয় ৬৭ শতাংশ। ৫ শতাংশ ব্যয় হয় ইমেজিং সেবা পেতে, ৭ শতাংশ ব্যয় হয় ল্যাবরেটরি সেবা পেতে, ইনপেশেন্ট কিউরেটিভ সেবা পেতে ব্যয় হয় ৮ শতাংশ এবং আউটপেশেন্ট কিউরেটিভ সেবা পেতে ব্যয় হয় ১৩ শতাংশ।

গড়ে দেশের অসুস্থ বা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত নাগরিকদের মধ্যে ১২ শতাংশ কোন আনুষ্ঠানিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেন না। আউট পেশেন্টদের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে যান। অন্যদিকে ৪০ শতাংশের বেশি ইনপেশেন্ট বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস (বিএনএইচএ) এর ১৯৯৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশের জিডিপির মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বরাদ্দ মাথাপিছু পড়ে মাত্র ৪৫ ডলাএ। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভারত, ভুটান এবং শ্রীলঙ্কায় যথাক্রমে বরাদ্দ ৫৮, ৭৩, ১০৩, এবং ১৫৭ ডলার। অর্থাৎ প্রতিবেশি দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম বরাদ্দ নেপালের তুলনায় আমাদের বরাদ্দ ১৩ শতাংশ কম।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম মনে করে, স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বিনিয়োগ হিসাবে দেখতে হবে, ব্যয় হিসাবে নয়। কারণ স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ মানে সুস্থ মানব সম্পদ। প্রয়োজনীয় রাজস্ব আহরণ এবং দেশের অর্থনীতেকে এগিয়ে নিতে সুস্থ সবল মানবসম্পদের কোনো বিকল্প নেই।

তাই জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। যাতে রোগীদের পকেট থেকে ব্যয় ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। চিকিৎসা করাতে গিয়ে যেন রোগীরা দরিদ্র থেকে অতি দরিদ্র না হয়ে পড়েন বাজেটে সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য খাতের সাংবাদিকরা।

(ওএস/এএস/১৫ জুন, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test