E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘আমাগো আর রোগে ভুইগ্যা ঔষধ না খাইয়া মরতে হইবে না’

২০১৫ অক্টোবর ২০ ১৮:২৩:১৬
‘আমাগো আর রোগে ভুইগ্যা ঔষধ না খাইয়া মরতে হইবে না’

কলাপাড়া, পটুয়াখালী থেকে মিলন কর্মকার রাজু : আমাগো আর রোগে ভুইগ্যা ঔষধ না খাইয়া মরতে হইবে না। বাড়ির ধারে এ্যাহন আমাগো হাসপাতাল হইছে। পোয়াতি (গর্ভবতী) বউগো আর কষ্ট করতে হইবে না। বিনা টাহায় বাড়ির ধারেই ডাক্তার ও ঔষধ পামু। এ কথা বলেন ষাটোর্ধ আম্বিয়া বিবি। কলাপাড়া পৌর শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের মহীপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত সেরাজপুর গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন হওয়ায় তা দেখতে এসে এ কথা বলেন তিনি।

মঙ্গলবার সকালে এ কমিউনিনিট ক্লিনিকের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মাহাবুবুর রহমান তালুকদার। মহীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আঃ সালাম আকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র এসএম রাকিবুল আহসান, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ, মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ নাসির উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আঃ মান্নান খান, পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, আ’লীগের দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ আলী প্রমুখ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সেরাজপুর, লতিফপুর ও নিজশিববাড়িয়া গ্রামের চিকিৎসা বঞ্চিত প্রায় ১৫’শ পরিবার এতোদিন চিকিৎসা বঞ্চিত ছিলো। মহীপুর ইউনিয়নে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও সেখানে ডাক্তার না থাকায় অসুস্থ হলে তাদের প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের কলাপাড়া হাসপাতালে যেতে হতো। মঙ্গলবার উদ্ধোধন হওয়ার পর শতশত নারী-পুরুষ ভীড় করে এই কমিউনিটি ক্লিনিক দেখতে। খোঁজ খবর নিচ্ছেন কখন,কোন দিন ডাক্তার থাকবে এখানে। কি কি ঔষধ পাওয়া যাবে।

দুই কন্যা সন্তানের জননী আলেয়া বেগম। বয়স মাত্র ২২। কিন্তু অপুষ্টি ও নানা রোগে আক্রান্ত তাকে দেখলে মনে হবে বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। এই অসুস্থ শরীরেও একটি পুত্র সন্তানের আশায় আবার সে পাঁচ মাসের গর্ভবতী।

তিনি জানালেন,হুনছি এইহানে (ক্লিনিকে) রোজ ডাক্তার থাকবে। মোর শরীলডা ভালা না। হাটতে কষ্ট হয়। দম পাইনা। আর হাসপাতাল (কলাপাড়া হাসপাতাল) অনেক দূর। হেইয়ার লাইগ্যা ডাক্তার দ্যাহাইতে যাই নাই। আর অতো দূরে যামু অনেক টাহা লাগে। হেইয়া কই পামু। দুইডা মাইয়াতো বাসায় বইয়াই হইছে। আল্লায়ই দ্যাখবে আমাগো। তয় এইহানে ডাক্তার থাকলে আর কষ্ট পাইতে হইবে না। এ্যাহন এইহানেই ডাক্তার দেহামু।

জেলে ও বর্গা চাষী অধ্যুষিত এই গ্রামগুলোর অধিকাংশ মানুষই আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। তাই তারা অসুস্থ্য হলে গ্রাম্য ডাক্তার, ও ফকির-কবিরাজের উপর নির্ভরশীল। সেরাজপুর গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হলে সাগর ঘেষা অবহেলিত এ গ্রামগুলোর হাজার হাজার মানুষ স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে রক্ষা পাবে বলে জানালেন এলাকার মানুষ।

সেরাজপুর গ্রামের একাধিক মানুষ জানান, ক্লিনিক উদ্ধোধন হলেও এখনও বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। ইটের রাস্তা। এ কারনে গর্ভবতী মায়েদের এখানে আনতে দূর্ভোগ পোহাতে হবে। তাই জরুরী ভিত্তিতে পাকা রাস্তা নির্মান ও আলোর ব্যবস্থা করা হোক।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডা. লোকমান হাকিম জানান, সেরাজপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন বিকাল তিনটা পর্যন্ত একজন সিএইচসিপি থাকবেন।

এছাড়া স্বাস্থ্য সহকারী ও এফডব্লিউএ’র একজন করে কর্মী সপ্তাহে তিনদিন করে এখানে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করবেন। আর প্রতিমাসে একদিন একজন এমবিবিএস ডাক্তার ওইখানে গিয়ে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করবেন।

(এমকেআর/এএস/অক্টোবর ২০, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test