সাধারণের মাঝে অসাধারণ একজন
তৈয়ব আলী ও সাহেগীর জুয়েল
আর দশটা সাধারণ মানুষের মতোই তিনি। সব সময় সাধারণকেই ভালবাসেন। চলাফেরাও খুব সাধারণ। পোশাকের ক্ষেত্রেও সব সময় খুব ছিমছাম। অথচ তাঁর দক্ষতা, সততা, শিক্ষক হিসেবে অসাধারণ নৈপুণ্য তাঁকে অনেক সাধারণের থেকে আলাদা করে দিয়েছে। তিনি হয়ে উঠেছেন তাঁর কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় একজন মানুষ। তাঁর সাধারণত্বের মাঝেই খুঁজে পাওয়া যায় অসাধারণ ব্যক্তিত্ব।
মানুষটি হলেন সজীব সরকার-স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের জার্নালিজম কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্ট্যাডিজ বিভাগের (জেসিএমএস) সহকারী অধ্যাপক। সীমাহীন গুণের কারণে শিক্ষার্থীদের মনে পরম শ্রদ্ধা ও ভক্তির জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তবে সবসময় থেকেছেন প্রচার বিমুখ হয়ে।
অনেক অনুরোধের পর সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়। আলাপ চলতে থাকে, বর্ণিত হতে থাকে তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিকের কথা।
১৯৮৩ সালের ১৭ই অক্টোবর ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন সজীব সরকার। পিতার চাকরি সূত্রে অনেক জায়গায় থাকা হলেও কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে তাঁর পৈর্তৃক নিবাস। দুই ভাই ও এক বোনের সাথে বেড়ে উঠেন ময়মনসিংহেই। ছেলেবেলা থেকেই পড়তে খুব ভালবাসতেন। এ আগ্রহ থেকেই তিনি নিজ শ্রেণিকক্ষ বাদ দিয়ে অন্য শ্রেণিকক্ষে বসে থাকতেন। তাই নিজের ক্লাসেই অনুপস্থিত থাকলেও অন্যদের ক্লাসে ঠিকই উপস্থিত থাকতেন তিনি। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও নাসিরাবাদ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন তিনি। ঝোঁক ছিল ইংরেজি সাহিত্যের দিকে। তবুও লেখালেখিতে তাঁর আগ্রহ দেখে বড় ভাইয়ের চাপে ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়া। ছাত্রজীবন শেষে ২০০৮ সালে সমকাল পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু। এরপর কয়েক গণমাধ্যম পেরিয়ে ২০১৩ সালের মে মাসে স্টেট ইউনিভার্সিটির জেসিএমএস বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু। আর এ পেশায় বিশ্বাসী ছিলেন খুব। মাত্র সাতজন শিক্ষার্থী নিয়ে এসইউবির জেসিএমএস বিভাগে কাজ শুরু করেন। তাঁরই অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে বর্তমানে এখানে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর আনাগোনা।
‘শিক্ষকতায় কীভাবে আসলেন স্যার?”- সজীব সরকার বললেন, ’আমার এক বাংলা শিক্ষক ছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই প্রথম শিক্ষকতায় আসা। তারপর আমি একটি রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করি। পরে শ্রদ্ধেয় রোবায়েত স্যারের হাত ধরেই স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আসা।’
সজীব সরকার বলেন, ‘শিক্ষকতার পেশা জীবনটাকে ভিন্নভাবে বোঝার সুযোগ করে দিয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন অফার আসলেও শিক্ষকতা ছেড়ে যাননি। যেতেও চান না। ক্লাস, পড়াশুনা, শিক্ষার্থী-এখন এটাই তাঁর জীবন, এখানেই ভাল লাগা।’
এ ভাল লাগার কারণে বিভাগ নিয়ে তাঁর দেখা স্বপ্নগুলো দিনে দিনে ডানা মেলেছে। তাঁর মতে, যা স্বপ্ন ছিলো তা অনেকটাই পূরণ হয়েছে। তবে যেতে চান আরও অনেক দূর। উদ্দেশ্য, শিক্ষকের দর্শণ যেন পূর্ণ হয়। যেন ছাত্রছাত্রীদের কর্মস্থলে গিয়ে নতুনভাবে শিখতে না হয়। বাস্তব শিক্ষাই যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করে দেশ ও দশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
সজীব সরকার বলেন, শুধু বই পড়ে পরিপূর্ণ সাংবাদিকতা শেখা যায় না। কীভাবে একটি রিপোর্ট লিখতে হয়, সেটা জানতে হলে, করতে হবে চর্চা। তারপরও কিছু জিনিস তো হাতে কলমে শিখতে হয়। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিখানোর কৌশলে কিছুটা অভাব আছে বলে মনে করেন তিনি।
এ শিক্ষকতার জীবন তাঁকে কী দিয়েছে তার কোনো হিসেবে বসতে নারাজ সজীব সরকার। দিন শেষে তিনি বড় করে দেখেন শিক্ষার্থীদের প্রতি তাঁর স্নেহ ও মায়া মমতাকে। এ স্নেহই তাঁকে এনে দিয়েছে অগুণতি শিক্ষার্থীর ভালবাসা, শ্রদ্ধা ও পরম জনপ্রিয়তা।
জিজ্ঞেস করতেই সজীব সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কথা ঝড়ে পড়ল জাহিদ রাকিব নামের স্টেট ইউনিভার্সিটির জেসিএমএস বিভাগের এক শিক্ষার্থীর কণ্ঠে। বললেন, ’স্যার স্যারই। স্যারের তুলনা স্যার নিজেই। তিনি শুধু ভাল শিক্ষকই নন, ভাল মানুষও। স্যারের আত্মত্যাগী মনোভাব আমার খুব ভালো লাগে।’
আরেক শিক্ষার্থী বদরুন নাহার বলেন, ‘স্যারের অমায়িক আচরণ ও তাঁর শান্ত মেজাজ স্যারকে সবার থেকে আলাদা করে দিয়েছে। স্যার আমাদের সবার প্রিয়।’
শুধু শিক্ষার্থী নয়, সহকর্মীর মাঝেও শ্রদ্ধা ও ভালবাসার মানুষটির নাম সজীব সরকার। সহকর্মী জেসিএমএস বিভাগের লেকচারার সাহস মোস্তাফিজ বলেন, ‘জঞ্জাল আর খারাপ মানুষে ভরা এই অসময়ে আমার কাছে সজীব স্যার একজন ‘মানুষ’। দুনিয়ায় মানুষ এখন বিরল। সজীব স্যার একজন সঞ্জীব, সৃষ্টিশীল ও নির্মোহ মানুষের প্রতীক। ভালো মানুষ হবো কোনো ট্রেনিং সেন্টার যদি সজীব স্যার খুলেন, আমি সেখানে প্রথম ছাত্র হতে চাই।’
একই বিভাগের লেকচারার নাসরিন আক্তার বলেন, ‘সজীব স্যার এমন একজন ব্যক্তি যিনি আমাদের এই ফ্যাকাল্টি রুমের সবার রোল মডেল। তার জ্ঞান, ধৈর্য, বিচক্ষণতা, মমতা আমাদের প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করে এবং আমাদের সংকটের সময়ে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। স্যার আমার দেখা অন্যতম ভালো মানুষদের একজন।’
অনেক শিক্ষার্থী জানালেন, এত চাপের মধ্যে সজীব সরকার শান্ত মেজাজে বিভাগের সব কাজ সুব্যবস্থাপনা করতে পারেন। এটিই অনেক গুণের মধ্যে তাঁর একটি স্বতন্ত্র গুণ। এ গুণের রহস্য কি-জানতে চাইলে সজীব সরকার বলেন, ’আমি রাগী না যে, সেটা ঠিক না। আমিও রাগ প্রকাশ করি। ভার্সিটি আমার কর্মস্থল এটা আমার রাগ প্রকাশের জায়গা নয়। আর আমি সবসময়ই নিজের সম্মান ও ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে চেষ্টা করি। তাই সর্বদা শান্ত থাকার চেষ্টা করি। আর এটা অনেকদিনের অভ্যাস ও তাই সহজেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারি।’
জীবন ও কর্ম নিয়ে আলাপ শেষে প্রশ্ন ছিল সংসার নিয়ে। জানালেন, তাঁর স্ত্রী নুসরাত জাহানও একজন শিক্ষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের সহপাঠী ছিলেন তাঁরা। সেখানে পড়ার সময় পরিচয় হয় নুসরাত জাহানের সঙ্গে। দেখা থেকেই পরিণয়। তারপর মাস্টার্স শেষ করে ২০১০ সালের ১৭ই মার্চ বিয়ে। এখন তাঁদের সংসারে আছে ফুটফুটে সন্তান, নাম মুগ্ধ। সজীব সরকার বলেন, ‘বাড়ি ফিরে আমার দিনের সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায় স্ত্রী ও সন্তান মুগ্ধের মুখ দেখে।’
এসব আলাপের সময় পাশেই ছিলেন স্ত্রী ও সন্তান। সজীব সরকারের ব্যাপারে জানতে চাইলে স্ত্রী নুসরাত জাহান খুব কয়েক শব্দে বলে দিলেন সবকিছু, ‘বাবা ও স্বামী হিসেবে যথেষ্ঠ যত্নশীল ও অসাধারণ একজন মানুষ সজীব সরকার।’
বর্তমানের মাঝেই স্যার দেখেন ভবিষ্যতের পথ। তবু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে। উত্তরেই আবার মিলল তাঁর অসাধারণত্ব। বললেন, ’আমি ভবিষ্যতে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে চাই। তবে আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একটাই, আমি যেন কখনও কারও জন্য কষ্টের কারণ না হয়ে উঠি।’
প্রতিবেদকদ্বয় স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের জেসিএমএস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
পাঠকের মতামত:
- রায়হান রাফীর ওয়েব সিরিজে রুবেল-পূজা চেরি
- শান্তিতে নোবেলের জন্য মনোনীত হলেন জাতিসংঘ মহাসচিব
- নড়াইলে বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১
- টঙ্গীবাড়ীতে মোস্তফার হত্যাকারী রাজন গ্রেফতার, আদালতে স্বীকারোক্তি
- ফরিদপুরে গোল্ডেন লাইন পরিবহনের ভাড়া কমানোর দাবিতে চলা আমরণ অনশন স্থগিত
- ফরিদপুরে আবারও ডিমের বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান, জরিমানা
- ‘জুলাই আন্দোলন বিশ্বব্যাপী অধিকার হারাদের জন্য আলোকবর্তিকা’
- টাঙ্গাইলে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত
- ‘আজকের শিশু আগামী বিশ্বের প্রতিনিধি’
- নোয়াখালীতে ১২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড, পানিবন্দি ২ লাখ ৬ হাজার পরিবার
- ড. ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে যেসব দাবি জানাল বিএনপি
- বিশ্বের মেগা ট্রেড শো চীনের ক্যান্টন ফেয়ারে ৪র্থ বারের মতো অংশ নিচ্ছে ওয়ালটন
- শ্রীমঙ্গলে যুব অধিকার পরিষদের পরিচিতি সভা
- ভাঙ্গায় আ.লীগ নেতা ডাইল মিজান গ্রেফতার
- নগরকান্দায় বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত
- বিকাশের টাকা চুরি দ্বন্দ্বে অ্যাম্বুলেন্স চালককে ছুরিকাঘাতে হত্যা
- টাঙ্গাইলে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত
- দিনাজপুরে দিনব্যাপী কৃষক প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময় সভা
- সমন্বয়কের মামলায় আসামি মৃত আ.লীগ নেতা
- ‘নির্বাচন থেকে সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ’
- দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রয়োজন দৃঢ় পদক্ষেপ
- সাতক্ষীরা সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ওয়ান শ্যুটার গানসহ ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
- পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় থাকবে ২ লাখের বেশি আনসার
- ‘প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকুন’
- ছেলে নেই, তবুও বিছানা গুছিয়ে রাখেন মা
- ব্যাপক হারে কমেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন
- বোয়ালমারীতে হাসামদিয়া গণহত্যা দিবস পালন
- মহাদেবপুরে ৩৪ ভূমিহীন পরিবার পেলেন পাকা বাড়ি
- আব্দুর রব মুনা বিশ্বাসের পাট্টা শাসন
- মোংলা বন্দরে জাহাজ আগমনে নতুন রেকর্ড
- জামালপুরে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারাল হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়
- 'শেখ মুজিব দেশ ও জাতির শত্রু'
- পঞ্চগড়ে আ’লীগের মেয়র প্রার্থীকে শোকজ
- বিশ্বখ্যাত টাইম স্কয়ারে দুর্গাপূজা
- রাত পোহালে বিশ্বকর্মা পূজা, শেষ বিকেলে জমজমাট প্রতিমা বিক্রি
- সাবেক ৩ প্রধান বিচারপতিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা
- ১৮ ছক্কায় ২৭ বলে সেঞ্চুরি, কে এই সাহিল চৌহান
- কেউ কি এই সব দেখেন কিংবা ভাবেন?
- সিংড়ায় পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ নিধন
- আগনুকালী গ্রাম এখন বন্যপাখির অভয়াশ্রম
- বিএটি বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদে যোগ দিলেন নুমায়ের আলম
- ভারতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদে শ্যামনগরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
- হাসানাত সভাপতি, গৌরাঙ্গ সাধারণ সম্পাদক
- ‘শেখ হাসিনা চাইলে বিদেশি আইনজীবী রাখতে পারবেন’
- সাতকানিয়ায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ-গুলি