E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

'এক রাষ্ট্রের ভিতরে অন্য আরেক রাষ্ট্র'

২০১৪ অক্টোবর ১৩ ১৯:৫০:৫৫
'এক রাষ্ট্রের ভিতরে অন্য আরেক রাষ্ট্র'

মিতা : বহু ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছি। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য এই দেশে এখোনো অনেক বিভাগ এবং অঞ্চল রয়েছে যেখনকার মানুষ রয়েছে পরাধীনতার জালে। সিলেটের চা বাগানগুলো তারই অর্ন্তভুক্ত।

সিলেটের চা বাগান এবং বাগানের মানুষগুলো এখোনো শাসিত হচ্ছে ব্রিটিশদের দ্বারা। চা বাগানের অবস্থা দেখলে মনে হয় এক রাষ্ট্রের ভিতরে যেন অন্য আরেক রাষ্ট্র। সেই রাষ্ট্র পুরো দেশটা থেকে সম্পূর্ন আলাদা। একটা গন্ডির মধ্যে বসবাস করছে এই বাগানীরা।

এখানে অনেক বাগানী রয়েছেন যারা আজও পর্যন্ত মৌলভিবাজারে যাননি। অথচ তারা এই সিলেটেই আছেন দীর্ঘ দিন। বলতে গেলে তাদের যেতে দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশে যত চা আমদানী এবং রপ্তানী হয় তা এখোনো তত্ত্বাবধান করে ব্রিটিশ চা কোম্পানী। আর চা বাগানে এবং টিলায় যাদের বাগানের ম্যানেজার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় তাদের ব্যবহারও অনেকটা হয়ে ওঠে ব্রিটিশদের মতোই। অনেকটা স্বাধীনতার সময়কার রাজাকারদের মতোই।

তবে এতো ঝড়ের মধ্যেও নিজেদের স্বাধীন করার জন্য নিরলস সংগ্রাম করে যাচ্ছেন একঝাঁক তরুণ। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে মোহন রবিদাস। চা বাগানের বর্তমান অবস্থা এবং মোহন রবি দাসের জীবন সংগ্রাম সর্ম্পকে জানার জন্য কথা হয়েছিল তার সঙ্গে।

সিলেটের চা বাগানে জন্ম মোহন রবিদাসের। এটাই ছিল তার জন্য অভিশাপ। বাগানী বলে পড়াশোনারও কোনো অধিকার বোধ হয় বিধাতা দেয়নি তাকে। চা বাগানের টিলার মালিকদের অনেকটা এমনই ভাবখানা ছিল। শিক্ষা যেন তাদের জন্য নয়। কেবল সুশীল সমাজের মানুষগুলোর জন্যই।

এতো বাধাঁর পরেও স্বাধীন এই বাংলাদেশে নিজের স্বাধীনতাকে বাঁচিয়ে রাখতে শিক্ষার আলোকে জয় করেছেন মোহন রবিদাস। এতো বাঁধার পরেও মোহন রবিদাস স্কুলে গিয়েছিল। স্কুলে গিয়েছিল অনেকটা জেদ থেকেই। কিন্তু সেখানেও হতে হয়েছে বৈষম্যের স্বীকার। স্কুলের শিক্ষক ছিলেন উঁচু বর্নের হিন্দু। আর মোহন ছিল নিচু বর্নের, তার ওপর আবার বাগানী।

স্কুলের বৈষমতার কথা প্রসঙ্গে মোহন বলেন, আমি যখন পড়া না পারতাম তখন স্যার আমাকে মারতেন না। তার কারণ কিন্তু তিনি আমাকে ভালোবাসতেন তা না। কারণ ছিল আমাকে মারতে হলে আমার শরীরে হাত দিতে হবে।
এখানো কেন বাগানীরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে মোহন বলেন, জন্মের পর থেকেই মগ্ন জীবন যুদ্ধে। বাগানীদের মাথায় সব সময়ই থাকে তাদের দুই বেলা আহার জোগানোর চিন্তা। কেননা চা বাগানের মালিকরা মানে ব্রিটিশ চা কোম্পানী দ্বারা নিয়োগকৃত টিলার ম্যানেজাররা যদি কোনো কারণে বাগানীদের ওপর অখুশী হয় তাহলে বাগানের কাজ থেকে ছাঁটাই পড়ে যাবে তারা।

আর যেখানে খাবার জোটে না একবেলা ঠিক মতো, সেখানে শিক্ষার কথা কেই বা মনে রাখে। ভুল ক্রমে যদি কারো মনে পরেও যায় তাহলে পেতে হয় শাস্তি। টিলার মালিকরা তাদের মনে করিয়ে দেয় যে তারা বাগানী। চায়ের পাতা তোলা ছাড়া তারা আর কোনো কাজ থাকতে পারে না। বলতে বলতে উচ্চস্বরে এক হতাশার হাসি হেসে উঠলেন মোহন রবিদাস। ক্ষনিকেই আবার চোখ ছলছল হয়ে গেল তার। বললো আজকে হাসছি কিন্তু সেদিন....................শিক্ষকের মারটাওতো আমার অধিকার ছিল। কিন্তু তা থেকেও বঞ্চিত হয়েছি আমি।

তবে নানা হতাশা থাকার পরেও জীবন যুদ্ধে থেমে যায়নি মোহন রবিদাস। এখন তিনি আছেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড মানে স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখান থেকে তিনি এবার মার্স্টাস শেষ করলেন।

স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে মোহন রবি বলেন, আমার স্বপ্ন এখন বাগানী মানে আমাদের এই নিচু জাতিটাকে শিক্ষিত করে তোলা। অবশ্য বাগানের এই বেড়াজাল থেকে আমি বের হয়ে আসার পরে আরোও অনেকেই বের হয়ে এসেছিল শিক্ষার আলোর সংস্পর্শে নিজেকে ছোঁয়াতে। আমরা এখন সবাই মিলে টিলার কাছে গড়ে তুলেছি একটি স্কুল। যেখানে বাগানীদের ছেলে-মেয়েদের পড়ানো হয় দশম শ্রেনী পর্যন্ত। পাশাপাশি গড়ে তোলা হয় ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাওয়ার জন্য। এখন কেবল এদের নিয়েই আমার স্বপ্ন .................

(এম/অ/অক্টোবর ১৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test