E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

'কাজের প্রতি আন্তরিকতা থাকলে সফলতা আসবেই'

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ১০ ১৮:৫৬:৩৫
'কাজের প্রতি আন্তরিকতা থাকলে সফলতা আসবেই'

নিউজ ডেস্ক : দেবু ভট্টাচার্য্য। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপক ও সাবেক ছাত্র নেতা। শেরেবাংলা কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক উপসম্পাদক। বর্তমানে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন ঢাকা মহানগরের সমাজ কল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন এ তরুণ রাজনৈতিক নেতা।

সহজ সরল জীবনযাপন করেন দেবু ভট্টাচার্য্য। ছোটবেলা থেকেই শখ ছিল বাংলাদেশের অহংকার বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে একবার দেখা করার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে তিনি মন থেকে শ্রদ্ধা ও তাঁর নীতি-আদর্শকে মনে লালন করেন। আওয়ামী লীগকে মনেপ্রাণে ভালোবাসেন।

সোমবার বিকেলে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অনেকক্ষণ গল্পে বেরিয়ে আসে তাঁর জীবনের নানা ঘটনা। তাহলে আসুন শুনি তার মুখেই।

দেবু ভট্টাচার্য্য’র জীবন চলার পথ

আপনার জন্ম, শৈশব, বেড়ে ওঠা বিষয়ে জানতে চাই।

আমার জন্ম হয় ১৯৮৭ সালের ৫ এপ্রিল। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার গড়াই নদীর তীরে ওসমানপুর গ্রামে মামার বাড়িতে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে আমি বড়। ছোট ভাই অনার্স শেষ বর্ষের একজন ছাত্র। বোন মাস্টার্স শেষ করেছে মাত্র। আমার বাবা যাত্রাশিল্পী ছিলেন। যাত্রা, গান আর নাটক করতেন। এ কাজ করে যা আয় করতেন তা দিয়ে কোনো রকম চলতো আমাদের পরিবার। মা গৃহিনী। অনেক কষ্ট করে আমি এবং আমার ভাইবোন ছোটবেলা থেকে পড়াশোনা করি।

শৈশব কেটেছে রাজবাড়ি জেলার মালিয়াট গ্রামে। চন্দনা নদীর তীরে। রতন দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারি ও রতন দিয়া রজনীকান্ত উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে এসএসসি পাস করি। ইচ্ছা ছিল ঢাকায় কোনো ভাল কলেজে পড়াশোনা করার। পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকার কারণে ২০০২ সালে পাংশা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশুনা শুরু করি। ভালভাবেই উচ্চ মাধ্যমিকটা শেষ করি ২০০৪ সালে।

আর্থিক অভাব থাকলেও শৈশবের দিনগুলো ছিল আনন্দে ভরা। ছোটবেলা স্কুলে হেডস্যারের ভয়ে ক্লাসরুমে চুপ করে বসে থাকতাম। স্কুলের বারান্দায় খুব হৈচৈ-ছোটাছুটি করতাম। কখনো পালিয়ে রাস্তা থেকে মালাইওলার আট আনার আইসক্রিম কিনে খেতাম। স্কুল ছুটি দিলে বাজারের মধ্য দিয়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় হাঁটের দিনে সাঁপুরিয়াদের সাপের খেলা দেখতাম। এদিকে বাড়ি ফেরার কথা ভুলে সন্ধ্যা হয়ে যায়। অন্যদিকে ছেলে কই ছেলে কই খোঁজাখুঁজি করে বাড়ির সবাই পাগল প্রায়। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বকাঝকা শুনতাম। কোনো রকম ভাত খেয়ে সময় থাকলে একদৌড়ে চলে যেতাম খেলার মাঠে ক্রিকেট খেলতে।

আবার রুটিন অনুসারে রাত এলে হারিকেনের আলোতে পড়তে বসতে হতো। একদিকে মশার কামড়, অন্যদিকে দু’চোখ জুড়ে ঘুম। মা মাঝে মধ্যে হালকাপাতলা চড়থাপ্পর দিয়ে ঘুম ভাঙাতেন। ৯ টা বেজে গেলে বিছানায় যেতে হতো। সকাল হয়েছে বাজারে যেতে হবে, মায়ের চিৎকারে ঘুম থেকে উঠে বাজারের ব্যাগ হাতে স্টেশন বাজারে গিয়ে দ্রুত বাজার করতাম। বাজার করা শেষে স্নান করে দ্রুত নাস্তা করা, তারপর প্রাইভেট পড়ে স্কুলে যেতাম। এটা ছিল প্রতিদিনকার রুটিন। এতো ব্যস্ততার জন্য সময়ের অভাবে চন্দনা নদীতে সাঁতার কাটা হতো না ঠিক মতো। কিন্তু ছুটির দিনে অনেক মজা করে সাঁতার কাটতাম। সময় নিয়ে গোসল করতাম। এক দিনতো নদীতে ডুবেই গিয়েছিলাম প্রায়! মাঝে মাঝে বর্শি দিয়ে পুঁটি মাছ ধরতে ধরতে সারাদিন কেটে যেতো। মা বকতো কিন্তু তিতপুঁটি ভাজা খারাপ লাগতো না।

শৈশবের কোন ঘটনাটি আপনার বেশি মনে পড়ে?

ছোটবেলায় স্কুলের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হলেই মামা বাড়িতে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে যেতাম। কালুখালী স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠতাম। খোকশা স্টেশনে গিয়ে নেমেই রিকশায় চড়ে জানিপুর বাজারে গিয়ে মামার দোকানে উঠতাম। ওসমানপুর গ্রামে যেতে হলে গড়াই নদী পার হতে হয়। নৌকায় নদী পার হয়ে পায়ে হেঁটেই মামার বাড়ি রওনা দিতাম। ১০ মিনিটের পথ। মামার বাড়ি পৌঁছেই চার মামা-মামির সাথে প্রথমে দেখা সাক্ষাৎ। তারপর মামাতো ভাইবোনদের সাথে আড্ডা। তখন দিদিমা বেঁচে ছিলেন। এক মজার মানুষ ছিলেন আমার দিদিমা। সকালে ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা তারপর ইচ্ছামতো ছুটাছুটি। দুপুরে গড়াই নদীতে সাঁতার কেটে স্নান করা। বিকালে জানিপুর বাজারে যাওয়া। সুযোগ পেলে সবাই মিলে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা। কালী মন্দীরে ঘুরতে যাওয়া। এখন সবই স্মৃতি। দিদিমা এখন বেঁচে নেই। বড় মামাও মারা গেছেন। মামাতো ভাইবোনদের প্রায় সবাই বিয়ে করে সংসার করছেন। সবাই তাদের নিজ নিজ পরিবার নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। মামা-মামিরা সবাই তাদের সন্তানদের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। দীর্ঘদিন মামাবাড়িতে যাওয়া হয় না। কিন্তু ওসমানপুর ঘিরে জড়িয়ে আছে আমার শৈশবের অনেক স্মৃতি।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার বিষয়ে বলুন।

উচ্চমাধ্যমিক পাস করে চলে এলাম ঢাকায়। এক আত্মীয়ের বাসায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করতে শুরু করি। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে শেরেবাংলাকৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তি হই। ‘এগ্রিকালচার সাইন্স’ ফ্যাকালটি নিয়ে অনার্স পাস করি। তারপরে ‘বায়ো ক্যামিস্ট্রি’ (প্রাণরসায়ন) নিয়ে পরে মাস্টার্সপাস করি।‘বায়ো ক্যামিস্ট্রি’-এর ওপরে এখন পিএইচডি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইতোমধ্যে বাইরে লেখালেখি শুরু করেছি। সুযোগ হলেই চলে যাব।

সেই দিনগুলোর কথা বলুন যখন আপনাকে পড়াশোনার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।

আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পারিবারিক অবস্থা ভাল ছিল না। বাবা যাত্রাশিল্পী ছিলেন। যাত্রা-নাটক করে যে টাকা আয় করতো সে টাকা দিয়েই আমাদের সংসার চলতো। এক সময় বাবার যাত্রা গান বন্ধ হয়ে গেলে আমার খুব কষ্টেই পড়াশুনার জীবন কাটে। আমার পড়াশুনার খরচ যোগাতে বাবার অনেক কষ্ট হতো। বাবা নানা ধরণের ব্যবসা করে, দিনরাত পরিশ্রম করে আমার পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। তবে ছাত্র ভাল আর রেজাল্ট ভাল ছিল। তাই অনেকে আমার পড়াশোনার জন্য সাহায্য করেছেন। অনেকে আমাকে প্রাইভেট পড়িয়েছেন কিন্তু টাকা নেন নি। কলেজে বিনা বেতনে পড়াশুনা করেছি, হোস্টেলে থাকাবস্থায় সিট ভাড়া নেয়নি কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকরা আমাকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন।

প্রাইমারিতে আমার তেমন ভাল রেজাল্ট ছিল না। হাইস্কুলে এসে আমার পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। যেমন ক্লাস সিক্সে ছিল ৬৯ রোল। সেভেনে ৩৭, এইটে এসে হয় ৭ নম্বর। তারপর নাইনে ৫ আর টেনে ৩ আর এসএসসিতে স্কুলে ১ম। এরপরে কলেজে ভর্তি হই। কলেজে এসেই ছাত্র রাজনীতির প্রতি একটা টান আসে।

আগে কি রাজনীতি করার স্বপ্ন দেখতেন?

ছোটবেলা থেকেই আমার রাজনীতির প্রতি একটা আলাদা আকর্ষণ ছিল। ক্ষমতার প্রতি একটা আগ্রহ ছিল। কারণ যারা নেতৃত্ব দিতো তারা নানাভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করতো। চোখে দেখেছি মানুষ কিভাবে রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে। কত মানুষ কতভাবে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। আমিও রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি। বিশেষ করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নানাভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে। এগুলো আমি নিজের চোখে দেখেছি। এসব অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ করা যায় কিনা। আর তখন থেকেই আমার রাজনীতি করার চিন্তা মাথায় আসে। আমার চিন্তা হলো ক্ষমতার অপব্যবহার না করে কিভাবে জনগণকে সেবা করার মাধ্যমে একটা সুস্থধারার রাজনীতির প্লাটফর্ম তৈরি করা যায়।

তাছাড়া আমার ছোটবেলা থেকেই একটা শখ ছিল মাননীয় প্রাধনমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার। ঢাকায় যাবো একদিন জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করব। এ জিনিসগুলো মাথায় কাজ করত। ওই সময় এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, কোনো সংসদ সদস্যকে কাছে পেলে তাদের সাথে দেখা করার চেষ্টা করতাম। কথা বলার চেষ্টা করতাম। তাদের প্রতি আমার আলাদা একটা আগ্রহ ছিল। এর পরে ২০০৪ সালে রাজবাড়ির পাংশা কলেজে পড়ার সময় প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়। তার সাথে চলাফেরা করে তার রাজনীতির আদর্শে অনু্প্রাণিত হয়েছিলাম। তারপরে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রথম বর্ষ থেকেই সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িয়ে যাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি জীবন কেমন ছিল?

বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনকার রাজনীতি করতে হলে একটা গ্রুপের সাথে চলতে হয়। এক সাথে মিটিং মিছিল করতে হয়। একটা দলের নীতি-অাদর্শকে মেনে চলতে হয়। কিন্তু আমি এগুলো করিনি। আমি পড়ালেখার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র নেতাদের সাথে চলাফেরা করতাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে টিপুভাই, বাদশা ভাইদের সাথে সাথে থাকতাম। মিটিং-মিছিল করতাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গ্রুপ করতে হবে তা মাথায় ছিল না। এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়ররা যখন চলে গেছে তখন জুনিয়ররা এসে আমাকে ধরছে। না চাইলেও দায়িত্বটা আমার ঘাড়ে এসে পড়ল। তখন থেকেই দায়িত্ব নিয়ে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি শুরু করি। সময়ের ধারাবাহিকতায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক ছিলাম বর্তমানে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন ঢাকা মহানগরের সমাজ কল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান আপনার ক্ষেত্রে কতটা কঠিন ছিল?

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি পাওয়া সোনার হরিণের মতো। তো আমার জন্যও অনেক কঠিন ছিল। ২০১৩ সালের ২৬ মে আমি শেরেবাংলা কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ে বায়ো ক্যামেস্ট্রি (প্রাণরসায়ণ) এর প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি, বর্তমানে প্রাণরসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছি।

আপনি মাস্টার্সের থিসিস করেছেন কি নিয়ে?

মাসরুম ছিল আমার মাস্টার্সের থিসিসের বিষয়। মাশরুম একটা সুস্বাদু খাওয়ার সবজি। আগে এটা সেভাবে ব্যবহার হতো না। এর মধ্যে যে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাট আছে তা স্বাস্থ্যকর। ক্ষতিকর না। এটা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। মাশরুমের কিছু গুণ আছে যেমন-ডায়াবেটিসের রোগিদের জন্য খুবই উপকারি। হার্টের জন্য ভাল। শরীরের ক্ষতিকারক কোলস্টেরল কমায়। ক্যান্সারে উপকারসহ বিভিন্ন উপকার রয়েছে এ মাশরুমে।

আমার গবেষণার বিষয় ছিল প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে কিভাবে মাশরুম তৈরি করা যায়। কোন কাঠেরগুড়া দিয়ে উৎপাদন করলে খাদ্যের সবচেয়ে বেশি গুণগতমান পাওয়া যাবে। যেমন-ক্যালসিয়াম, কার্বহাইড্রেড, প্রোটিন এগুলো। মাশরুম উৎপাদন করতে বেশি খরচ হয় না। খর আর কাঠের গুড়া দিয়ে মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব। এনিয়ে আমার থিসিস প্রকাশ হয়েছে। এখন এ বিষয়ে আমি পিএইচডি করতে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। দেশের বাইরে যেমন- জাপান কৃষিতে বিশেষ করে মাশরুমের জন্য খুব ভাল। সেখানে অনেক উন্নত ল্যাব আছে। অনেক কিছু শেখা যাবে। পিএইচডি করে দেশে এসে মানুষের ও দেশের জন্য ভাল কিছু করার ইচ্ছে আছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করার জন্য যে সুযোগ সুবিধা আছে তা দিয়েই ছাত্রদের শিক্ষা দিচ্ছি। তবে আমাদের ল্যাবটাকে আরো সমৃদ্ধ করা জরুরি।

আপনার প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কারা?

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের অহংকার বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। আর তৃতীয় যে ব্যক্তির জীবনাদর্শ আমাকে প্রভাবিত করে তিনি হলেন- শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অহংকার কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম (Bahauddin Nasim) ভাই। যাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০০১ সালের ১৫ জুলাই শিক্ষক, ছাত্র, কর্মকর্তা, কর্মচারী সকলের প্রাণের দাবিকে যথাযোগ্য মূল্যায়ন করলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন এবং বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটকে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করেন। যিনি কৃষিবিদদের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকে তার সাথে থেকে মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়, চলাফেরা করতে হয় তা শিখেছি। তাছাড়া নাছিম ভাই সকল কৃষিবিদ ভাই বোনদের অত্যন্ত প্রিয় এবং আদর্শ। তিনি একজন সমাজসেবক। জনগণের সেবাধর্মী কাজ করেন বেশি।

ছাত্র রাজনীতি জীবনের স্মরণীয় কোন ঘটনা যদি থাকে?

একবার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচণ্ড মারামারি হয়। হলে ঢুকতে পারছিলাম না। ক্ষুধায় ছটফট করতে ছিলাম খাবারের অভাব। খাবারের জন্য ক্যাম্পাস ছেড়ে বাহিরেও যেতে পারছিলাম না। তখন বিস্কুট আর খাবারের পানি সরবরাহ করেছিলেন আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শের কয়েকজন বড় আপা। এমন দুঃসময় বিস্কুট আর পানি অনেক উপকারে এসেছিলো। এখনও দিনটির কথা ভুলতে পারি না।

পড়াশুনা আর রাজনীতি একই সাথে কিভাবে করতেন?

অনেক কষ্ট হতো। সারাদিন ক্লাস করা আবার রাজনীতির দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পাবলিক বাসে চড়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে যেতে হয়েছে। আবার রাতজেগে পড়াশুনা করতে হয়েছে। ব্যালেন্স করে নিতাম। আমার পড়ালেখা ঠিকমতো করে তারপরে রাজনীতি করতাম। আমি মনে করি কাজের প্রতি আন্তরিকতা আর ভালবাসা থাকলে সে কাজের সফলতা আসবেই। কারো যদি যোগ্যতা থাকে আর সে যদি পরিশ্রম করে তাহলে একদিন না এদিন তার সফলতা অাসবেই। অবমূল্যায়ন করার সুযোগ নাই।

আপনি তো শিক্ষকতা করছেন একই সাথে রাজনীতি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। একই সাথে দুটা দায়িত্ব এটা কিভাবে পালন করছেন?

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার পরে কোনো রাজনীতি করার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক নেতা হওয়ারও সুযোগ নেই। তবে পেশাজীবী সংগঠন করা যাবে। আসলে রাজনীতি বলতে একটা আদর্শকে লালন করা। আমি আওয়ামী লীগের আদর্শকে অনুসরণ করি। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রদ্ধা করি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মনে লালন করি। আমি কোনো নেতা না। আমি শিক্ষকতার পাশাপাশি পেশাজীবী সংগঠনের সাথে জড়িত আছি আর কাজ করি। শিক্ষকতার পাশাপাশি আদর্শের পাশে থাকা। আর যেসব ছাত্ররা খারাপ পথে পা বাড়ায় তাদের সাথে কথা বলে ভাল পথে আনার চেষ্টা করি।

বর্তমানে দেশে ছাত্র রাজনীতির অবস্থা কেমন?

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রদের যে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ছিল তা বর্তমানে আর নেই। ১৯৭৫ সালের পরে ছাত্র রাজনীতির মধ্যে ঢুকে পড়ে অস্ত্র, টাকা, ব্যবসা, লোভ-লালসা ইত্যাদি। এখন ছাত্র রাজনীতি মানে নেতিবাচক কর্মকাণ্ড বুঝায়। খুব কম প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে ছাত্ররা ভাল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের দ্বারা পরিচালনা করলে, তাদেরকে নিজেদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সবধরণের সাহায্য সহযোগিতা দিলে ছাত্ররা সঠিক পথে থেকে রাজনীতি পরিচালনা করতে পারবে। একই সাথে পড়াশুনাও চালিয়ে যেতে পারবে। আজকের ছাত্ররাই আগামী দিনে দেশকে নেতৃত্ব দেবে। তাদেরকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে।

নতুন ছাত্র নেতাদের উদ্দেশে কিছু বলুন।

নতুন যারা নেতৃত্বে আসবে তাদেরকে সংগঠনকে ও মানুষকে ভালবাসতে হবে। দলের আদর্শকে লালন করতে হবে। বিধি ও নীতিমালা ঠিকমতো মেনে চললে ছাত্ররাই নিজেদের কাজ ভাল মতো করতে পারবে। বিভিন্ন লোভ পরিহার করে, মন থেকে সংগঠনের কাজ করতে হবে। তাহলেই নিজেও নেতা হিসেবে ভালসংগঠন পরিচালনা করতে পারবে। আর দেশকেও ভাল কিছু দিতে পারবে। যে কোনো নেতৃত্বে কাজের পাশাপাশি পড়াশুনা ঠিকমতো চালাতে হবে।

শিক্ষকতা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

আমি একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই। একজন আদর্শ শিক্ষক হতে হলে আমাকে আরো বেশি পড়াশুনা করতে হবে, জানতে হবে। বিদেশ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি এনে দেশের জন্য ভাল কিছু করতে চাই। জাতির জন্য সেবামূলক কাজ করতে আমার অনেক ভাল লাগে। আমার ইচ্ছা মানুষের জন্য কল্যাণমূলককিছু করার।

অবসরে আপনি কি করতে পছন্দ করেন?

পড়াশুনা আমার বেশি পছন্দ। সময় করে বই পড়ি। মাঝে মাঝে গবেষণা করি। টিভি দেখি, নিউজপেপার পড়ি আর ফেসবুক দেখি। আর পরিবারের সবার সাথে সময় কাটাই।

আপনার প্রিয় শখ কী?

লেখালেখি, ঘুরে বেড়ানো ভাল লাগে। এছাড়াও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে পছন্দ করি।

তথ্যসূত্রঃ বিবার্তা২৪

(পি/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test