E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মুক্তিযোদ্ধার মুখে যুদ্ধ কথা

২০২২ জানুয়ারি ২২ ১৪:২৪:০০
মুক্তিযোদ্ধার মুখে যুদ্ধ কথা

দেবেশ চন্দ্র সান্যাল


মুক্তিযুদ্ধ ধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের মুক্তিযুদ্ধ বিভাগে যে কোন বীর মুক্তিযোদ্ধা তাঁর যুদ্ধ কথা লিখে পাঠালে তা এই বিভাগে প্রকাশ করা হয়। আজ প্রকাশ করা হলো বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবেশ চন্দ্র সান্যালের যুদ্ধ কথা। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার রতন কান্দি গ্রামে।

কালিয়া হরিপুর স্টেশন সংলগ্ন ব্রীজ পাহাড়ারত রাজাকার ক্যাম্প এ্যাম্বুস। কালিয়া হরিপুর সিরাজগঞ্জ জেলার
কামারখন্দ থানার একটি রেলওয়ে স্টেশন। এই এ্যাম্বুসের নেতৃত্বে ছিলেন গ্রুপ কমান্ডার জনাব এম.এ মান্নান
স্যার। ৪ নভেম্বর’৭১ আমাদের গ্রুপের ঝাঐল গ্রামের সিরাজগঞ্জের এম,এন, এ জনাব মোঃ মোতাহার হোসেন
তালুকদারের ভায়রা আওয়ামীলীগ নেতা জনাব মোঃ আব্দুল হামিদ তালুকদারের রেকির ভিত্তিতে কালিয়া হরিপুর
রেলওয়ে ষ্টেশন সংলগ্ন ব্রীজ পাহাড়ারত রাজাকার ক্যাম্প অ্যাম্বুস করেছিলাম। কমান্ডার স্যার ক্রোলিং করে রেল লাইনে
বৈদ্যুতিক মাইন বসিয়ে আসলেন। তথ্য ছিল ঈশ্বরদী থেকে পাকি হানাদার নিয়ে একটি ট্রেন সিরাজগঞ্জ যাবে।
কমান্ডার স্যার ট্রেনটি উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করলেন। আমরা ধানক্ষেতের মধ্যে পজিশন অবস্থায় থাকলাম।
কামান্ডার স্যারের হাতে মাইনের তার ও ব্যাটারী। টর্চ লাইট ও হ্যারিকেন হাতে পাকি মিলি শিয়া ও রাজাকারেরা
টহল দিচ্ছিল। ওদের পায়ে লেগে হঠাৎ আমাদের মাইনের তার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। মাইনটি ওদের নজরে পড়লো।
হুইসেল দিয়ে রাজাকারদের লাইং পজিশনে রেডি থাকতে বললো। আমাদের দিকে টর্চ লাইট মেরে মেরে উর্দূতে
বকাবকি করতে থাকলো। ইতিমধ্যে ঈশ্বরদী থেকে সিরাজগঞ্জ গামী পাকি হানাদার বাহী একটি ট্রেন এলো। পাকি
হানাদারেরা সিগন্যাল দিল। ষ্টেশনে ট্রেনটি থামিয়ে দিল। ট্রেনের পাকি হানাদারেরা অস্ত্র তাক করা অবস্থায় নেমে
আমাদেরকে খুঁজতে থাকলো। আমাদের মাইনটি ব্রাষ্ট করা সম্ভব হলো না। পাকি হানাদারদের সংখ্যাধিক্যতায় ও
অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে কমান্ডার স্যার উইথড্র হওয়ার কমান্ড করলেন। পরের দিন সিরাজগঞ্জ থেকে পাকি
হানাদার ও রাজাকারেরা এসে কালিয়া হরিপুরের অনেক বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল এবং গ্রামের অনেককে ধরে নির্যাতন
করেছিল। আমরা কালিয়া হরিপুর রেলওয়ে ব্রীজ সংলগ্ন রাজাকার ক্যাম্প এ্যাম্বুস থেকে ফিরে এসে তামাই গ্রামে
কমান্ডার স্যারের বাড়িতে একত্রিত হই। কমান্ডার স্যারের মা আমাদের জন্য খাবার ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। আমরা
কমান্ডার স্যারের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করলাম। খাওয়া-দাওয়ার পর আমাদের সবাইকে বসিয়ে কমান্ডার স্যার ব্রিফ
করলেন। স্থানীয় ভাবে ট্রেনিং দেওয়া বেশ কিছু যুবককে আমাদের গ্রুপে ভর্তি করা হয়েছিল। এত বড় প্লাটুন এক
শেল্টারে শেল্টার নেওয়া সমস্যা। তাই ডেপুটি কমান্ডার রবীন্দ্রনাথ বাগ্চী কে কমান্ডার করে আর একটি গ্রুপ করে
দিলেন।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা।

পাঠকের মতামত:

১০ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test