ধীতপুর যুদ্ধ কথা
উত্তম কুমার সান্যাল
১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নাধীন ধীতপুর নামক গ্রামে ওয়াপদাবাঁধে পকিস্তানি হানাদার সৈন্য ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকারদের বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে অন্যান্যদের সাথে আমার মেজ জ্যাঠা সমরেন্দ্র নাথ সান্যাল ও আমার বাবা দেবেশ চন্দ্র সান্যাল অংশ গ্রহণ করে ছিলেন। একদিন আমার বাবার কাছে ধীতপুর যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন-‘উনিশ শ একাত্তর সাল। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সাল। ২৫ মার্চ’৭১ কালরাতে পাকিস্তানি সৈন্যদের আকস্মিক নৃংশতম আক্রমণে শুরু হয় বাঙালিদের উপর জ্বালাও, পোড়াও, হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, নিপিড়ন, ধর্ষণ ও অন্যান্য মানবতা বিরোধী নৃংশতম কার্যক্রম। বাঙালি সৈন্য, পুলিশ, আনসার ও অন্যান্য বাহিনী প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে। বাঙালিদের প্রতিরোধ যুদ্ধের পর ২৬ মার্চ’ ৭১ থেকে শুরু হয় হানাদার মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধ।
বাংলাদেশের সকল বাঙালি সৈন্য, আনসার, অন্যান্য বাহিনী, ছাত্র,শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক ও অন্যান্য নারী পুরুষ অংশ গ্রহণ করে সশস্ত্র মহান মুক্তিযুদ্ধে। আমি ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করে ছিলাম। গত কয়েক দিন হলো আমাদের গ্রুপ ও অন্যান্য আরো কয়েকটি গ্রুপ সৈয়দপুর ও আশেপাশের গ্রামে অবস্থান করছি। ১২ ডিসেম্বর’৭১ জামিরতা গ্রামের অধিবাসী বাবু রবীন্দ্র নাথ বাগচীর নিয়ন্ত্রনাধীন আমাদের গ্রুপটি ছিল জালালপুর ইউনিয়নাধীন সৈয়দপুর গ্রামের কালাচাঁদ চক্রবর্তী ও অন্যান্যের বাড়ীতে। ১৩ ডিসেম্বর ’৭১ ছিল আমাদের গ্রুপের শেষ রণাঙ্গনের যুদ্ধ। স্থানটি ছিল সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানার সনাতনী ইউনিয়নের ধীতপুর নামক গ্রাম। এই যুদ্ধে নেতৃত্বে ছিলেন বাবু রবীন্দ্র নাথ বাগচী।
১৩ ডিসেম্বর’৭১ সংবাদ পেলাম পাকি হানাদারেরা কৈজুরী হয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইলের যুদ্ধে পাকিহানাদারেরা পরাজিত হয়ে লঞ্চে যমুনা নদী পাড় হয়ে মালি পাড়ারা জাকার ক্যাম্পে এসেছে। মালিপাড়া ক্যাম্প থেকে রাস্তা চিনানোর জন্য দুই জন রাজাকার কে সঙ্গে নিয়েছে। আমাদের শেল্টারে ২/৩ জন যুবক দৌড়াতে দৌড়াতে হাপিয়ে এসে বললো- “পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যরা পালিয়ে যাচ্ছে, আপনারা শালাদের ধরুন।” আমরা পাকি হানাদারদের অনুসরন করার জন্য ওদের পিছু নিলাম।
পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যরা কৈজুরী গ্রামের এক মুলা খেত থেকে মুলা তুলে খাওয়ার চেষ্টা করলো। ওরা জানতনা কাঁচামুলা খাওয়া যায় না। সম্ভবত ওরা ছিলো খুব ক্ষুধার্ত। ওয়াপদা বাঁধ ধরে পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যরা অগ্রসর হতে লাগলো। আমরা ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ওদের ফলো করতে থাকলাম। ওরা ভীষণ ক্রোধী। ধীতপুর নামক স্থানে গিয়েওরা আমাদের দিকে অস্ত্র তাককরে গুলিকরলো। আমরা জাম্পকরে ওয়াপদা বাধের পশ্চিম দিকে পজিশন নিলাম। ওদের উপর গুলি ছুড়তে শুরু করলাম। ওরাও ওয়াপদা বাঁধের পূর্ব পার্শ্বে পজিশন নিল। পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যদেও বিরুদ্ধে যুদ্ধ। কি ভয়াবহ যুদ্ধ প্রায় এক ঘণ্টার মত গুলিপাল্টা গুলিচলতে থাকলো।গুলির শব্দে শাহজাদপুর উপজেলার মো: সিরাজুল ইসলাম এর গ্রুপ ও অন্যান্য গ্রুপ, বেড়া উপজেলার এসএম আমির হোসেনের গ্রুপ ও অন্যান্য গ্রুপ। বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রুপ আমাদের সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে এলো। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। অন্ধকার হয়ে এলো হানাদারেরা গুলি করা বন্ধ করলো। আমরাও অন্ধকারে প্রায় গুলি করা বন্ধ করলাম।
সারারাত আমরা না খেয়ে পজিশন অবস্থায় ছিলাম। আমাদের গ্রুপটি ছিল বাবু রবীন্দ্র নাথ বাগচীর কমান্ডানাধীন। যুদ্ধটি ছিল ভীষন ভয়াবহ সম্মূখ যুদ্ধ। তথা কথিত হিংস্র পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ। হয় যুদ্ধে বিজয়ী হতে হবে অন্যথায় সবার জীবন যাবে। আমাদের গ্রুপের ডান দিকেই ছিল বেড়ার এস এম আমির হোসেনের গ্রুপ। তুমুল যুদ্ধ। দুটি গুলি এসে আমার হেলমেটে লাগলো। এস এম আমির হোসেন সাহেবের গ্রুপের মো:আব্দুল খালেক ও মোঃ আমজাদ হোসেন গুলি বিদ্ধ হলেন। আমাদের পার্শেই দুই জনই যন্ত্রনায় কাতরা ছিলেন। আমাদের সবার মন খারাপ। পাশের্^র কয়েক জন তাঁদের সেবা করছেন। আমাদের কোন অবস্থাতেই গুলি করা বন্ধ করা যাবেনা। আমরা দুই সহোদর এই রণাঙ্গনে পাশাপাশি অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ করছি।
আমরা সবাই গুলি চালিয়ে যাচ্ছি। আমি থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে গুলি চালাচ্ছি। দুইটি হ্যান্ডগ্রেনেড চার্জ করলাম। এর মধ্যে সন্ধ্যা ও অন্ধকার নেমেএলো। রাতেধীত পুর দাতব্য চিকিৎসালয়ের কাছ থেকে মাঝেমাঝে ২/১ টাকরে গুলি আসছিল। ওদেও গুলির প্রেক্ষিতে আমরাও ২/১ টাকরে গুলি করছিলাম। ভোরে ফর্সা হলে আমাদের কমান্ডার রবীন্দ্র নাথ বাগচী ও বেড়ার কমান্ডার জনাব এস.এম আমির হোসেন ও অন্যান্যরা ক্রোলিং করে ধীতপুর দাতব্য চিকিৎসালয়ের দিকে এগিয়ে গেলেন। দাতব্য চিকিৎসালয়ের দিকে গিয়ে দেখা গেল। দুই জন রাজাকার সারা রাত কভারিং ফায়ার করেছে। কমান্ড করে রাজাকার দুই জনকে স্যারেন্ডার করালেন। তারা দুই জন আত্মসমর্পণ করলো।
রাজাকার দুই জনের নাম ছিল লতিফ ও কালাম। তাদেরকাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে নেওয়াহলো। তাদের কাছ থেকে জানা গেলরাত ১১ টার দিকে পাকিস্তানি সৈন্যেরা ক্রোলিং করে নিরাপদ দুরত্বে এসে হেঁটে বেড়া নদী পার হয়ে ঢাকা যাবার উদ্দেশ্যে পালিয়েছে। পরেজানা গেল। পাকি হানাদারেরা বেড়া ঘাটে গিয়ে ভেড়া কোলা গ্রামের হলদারদের নৌকায় নদীপাড় হয়ে নগর বাড়ি ঘাট হয়ে ঢাকা যাবার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। ধীতপুরের যুদ্ধে বেড়ার এস. এম.আমির হোসেনের গ্রুপের বৃশালিখা গ্রামের অধিবাসী বেড়া বিবি হাই স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্র জনাব মোঃ আব্দুল খালেক ও ছেচানিয়া গ্রামের আমজাদ হোসেন গুলিবিদ্ধ হন।
দুই জনই পরে শহীদ হয়েছেন। আমাদের অন্যান্য গ্রুপের ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়েছেন। স্থানীয় দুজন পথচারী গোলা গুলির সময়ে গুলি লেগে ওয়াপদাবাধের উপর মারা গিয়েছেন। ধীতপুর যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে আমরা জামির তাহাই স্কুলে ক্যাম্প করে অবস্থান নিয়ে ছিলাম। ১৪ ডিসেম্বর’ ৭১ শাহজাদপুর থানা হানাদারমুক্ত হয়। ১৬ই ডিসেম্বর’ ৭১ তিরা নব্বই হাজারাধিক পাকিস্তানি সৈন্যের পক্ষে অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে) মাথানিচু করে আত্মসমর্পন করে। আমাদের মহান মুক্তি যুদ্ধের বিজয় অর্জন হয়।
লেখক :বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও উপসহকারী প্রকৌশলী, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহী।
পাঠকের মতামত:
- শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলি, কারামুক্ত হলেন ঈশ্বরদী বিএনপি’র ১২ নেতা-কর্মী
- সাতক্ষীরার তৎকালিন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরসহ ৪৭জনের নামে মামলা
- গভর্নর: কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়নি
- সাতক্ষীরার সাবেক সহকারি পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামানসহ ১৬ জনের নামে মামলা
- একযোগে ১৬৮ বিচারককে বদলি
- ‘ডিসেম্বরের মধ্যে এডিবি ৪০০ মিলিয়ন ডলার দেবে’
- ‘সোনালি ব্যাগ বহুল ব্যবহারের পদক্ষেপ নেওয়া হবে’
- গোপালগঞ্জে সোনাবাহিনীর মামলায় গ্রেফতার হাজতির মৃত্যু
- আমান আযমীর বক্তব্য নিয়ে যা বলল জামায়াত
- জাতীয় নাগরিক কমিটির আত্মপ্রকাশ
- সাতক্ষীরা সদর থানার সাবেক ওসি এমদাদসহ ২১ জনের নামে আদালতে মামলা
- খৎনার চেম্বারে স্বাস্থ্য বিভাগের হানা, জরিমানা ২০ হাজার
- ভাঙ্গায় ভিপি সম্পত্তি ফিরে পেতে ভুক্তভোগীর সংবাদ সম্মেলন
- ‘সকল ষড়যন্ত্রের বিষ দাঁত ভেঙে দিয়ে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে’
- বরিশালে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ
- টাঙ্গাইলে পৃথক স্থান থেকে ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
- মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে লাঞ্ছিত করলেন যুবদল নেতা, ফেসবুকে ভিডিও ভাইরাল
- বরিশালে ক্লাবের আড়ালে মাদক বিক্রির প্রতিবাদে বিক্ষোভ
- ছাত্রলীগ কর্মীকে পিটিয়ে হত্যায় ছাত্রদল সভাপতি গ্রেপ্তার
- দলবাজ ছাত্র-শিক্ষকদের ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না: ড. ইউনূসকে শিক্ষার্থীরা
- জামালপুরে বৈষম্যবিরোধীদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি, মানববন্ধন
- ‘কুষ্টিয়া থানা আমি নেতৃত্ব দিয়ে ভেঙেছি’
- আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি কমেছে
- বালিয়াকান্দিতে অর্থের চেক পেলেন ৭০ নারী কর্মী
- ফরিদপুরে সকল নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
- গোপালগঞ্জে বিনামূল্যে ডায়াবেটিসহ স্বাস্থ্য পরীক্ষা
- টাঙ্গাইলে সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীসহ ১২৯ জনের নামে মামলা
- বৈধ অস্ত্র দ্রুত ফেরত পাওয়ার দাবিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের সংবাদ সম্মেলন
- কাপ্তাইয়ে ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ
- মালিতে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ১৪
- টুঙ্গিপাড়ায় ভুয়া চিকিৎসককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা
- যশোরে ভুয়া নার্স নির্মূলে স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযান
- ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান রক্ষা করাই মার্কিন সরকারের নীতি
- ‘সুশীলদের চিহ্নিত করুন, নিশ্চিহ্ন করে দিন’
- রাশিয়ায় ২২ আরোহীসহ হেলিকপ্টার নিখোঁজ
- বাফুফের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান হলেন ইমরুল হাসান
- বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা প্রসঙ্গ
- পাকিস্তান তারকার মুখে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা
- নাগরপুরে ৩ জনকে কুপিয়ে হত্যা
- গণভবন হচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের’ স্মৃতি জাদুঘর
- শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘সুইডেন আসলাম’ জামিনে মুক্ত
- ‘যেখানে অন্যায় সেখানেই প্রতিবাদ করতে হবে’
- ভার্জিনিয়ায় ফোবানা সম্মেলন আজ শুরু, তিন অঙ্গরাজ্যে একই নামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
- বাফুফেকে আবারও জরিমানা করল ফিফা
- বিএনপি নেতা হাবিবসহ ৫০ নেতাকর্মীর সাজার প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ মিছিল