E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ মেহেরপুর মুক্ত দিবস

২০১৪ ডিসেম্বর ০৬ ০৯:৪৪:৩৪
আজ মেহেরপুর মুক্ত দিবস

মেহেরপুর প্রতিনিধি :আজ ৬ ডিসেম্বর। মেহেরপুর মুক্ত দিবস।”৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী মুজিবনগর খ্যাত মেহেরপুর হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা হামলায় দিক-বিদিক হারিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ৫ ডিসেম্বর বিকেল থেকে গোপনে মেহেরপুর ছেড়ে পালাতে শুরু করে।

পরের দিন ৬ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় রাজনৈতিক মর্যাদাপুর্ণ মেহেরপুর জেলা।
১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল দুপুরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী অস্ত্র সজ্জে সজ্জিত হয়ে মেহেরপুরে প্রবেশ করে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীরা সড়কপথে চুয়াডাঙ্গা থেকে মেহেরপুরে আসার পথে আমঝুপিতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে হত্যা করে ৮ গ্রামবাসীকে। পরবর্তীতে তারা মেহেরপুরে প্রবেশ করে একরে পর এক হামলা চালায় কাঁচা বাজার পট্রিতে, মহাকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে, বড় বাজারের সবজি পট্রিতে। ১৮ এপ্রিল পাক বাহিনী কোন প্রতিরোধের সম্মুখিন না হওয়ায় তারা তাদের অকুন্ট বিজয় ভেবে ক্যাপ্টেন মোঃ আব্দুল লতিফের নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বাড়িতে লুটপাট চালায়। ২০ এপ্রিল থেকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সৈন্যেরা মেহেরপুরের থানা কাউন্সিলে স্থায়ী ক্যাম্প গড়ে তোলে। স্থায়ী ক্যাম্প করার কিছুদিনের মধ্যেই সৈন্যে সংখ্যা আরো বাড়িয়ে মেহেরপুরের ভোকেশনাল টেনিং ইনষ্টিটিউট, কালাচাঁদপুর, কামদেবপুর ও সীমান্ত এলাকায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই পাক বাহিনীর ওপর মুক্তি বাহিনীর গেরিলারা বিরামহীন আক্রমন চালাতে থাকে।

১৯৭১’ সালের ৩০ এপ্রিল রাতে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি থাকার অজুহাত এনে যাদবপুর গ্রামটিকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় পাকিস্তানী নরপশুরা।পরের দিন ৩১ শে মে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সদস্যেরা- রাজাকার ও পীস কমিটির সদস্যদের দায়িত্ব দিয়ে মেহেরপুর সরকারী কলেজে একটি অভ্যর্থনা কক্ষ নামধারী বাঙালী নির্যাতন কেন্দ্র খুললেও মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে এই কক্ষ কোন সফলতা বয়ে আনতে পারেনি।

৭১’ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে মুক্তিবাহিনী পাক হানাদার বাহিনীর উপরে মেরাথন আক্রমন চালাতে শুরু করলে পাক হানাদার বাহিনী অবস্থা বেগতিক দেখে যুদ্ধ সরঞ্জম গুটাতে থাকে। ঐ দিনই মুক্তিবাহিনী সকাল থেকে মেহেরপুরের পাক বাহিনীর আস্তানা লক্ষ্য করে চারিদিক থেকে অবিরাম গুলিবর্ষন করতে থাকে। এতে আহতও হয় বেশ কয়েকজন। ২৮ এবং ২৯ নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর একের পর এক হামলায় হানাদার বাহিনী মেহেরপুরে কোনঠাসা হয়ে পড়ে। পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে পাক বাহিনী ৩০ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে গোপনে পিছু হটতে থাকে। বিতাড়িত হয়ে যাওয়ার পথে হানাদার বাহিনী আমঝুপি ব্রীজ, দিনদত্ত ব্রীজের কিছু অংশ বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়ে যায়। একই রাতে পালানোর সময় মুক্তিবাহিনীর মর্টার হামলায় কুলপালা নামক স্থানে বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়।

১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর সকাল থেকেই মেহেরপুর হানাদার বাহিনীর কবল থেকে বিমুক্ত হয়। ২ ডিসেম্বর গাংনী হানাদার মুক্ত হলে শিকারপুরে অবস্থিত মুক্তিবাহিনীর এ্যাকশন ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন তৌফিক এলাহী চৌধুরী হাটবোয়ালিয়ায় এসে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করে। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সম্মিলিত ভাবে ৫ ডিসেম্বর মেহেরপুরে প্রবেশ করে। ১ ডিসেম্বর মেহেরপুর বিমুক্ত হলেও সীমান্তে পাকবাহিনীর পুঁতে রাখা অসংখ্য মাইন অপসারনের মধ্য দিয়ে মেহেরপুর পুরোপুরি ভাবে হানাদার মুক্ত হয় ৬ ডিসেম্বর।

কর্মসূচী:
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে সকাল ১০টাই র‌্যালী, স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ অর্পন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

(আইএম/এসসি/ডিসেম্বর০৬,২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test