E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নাটোরের মুক্তিযুদ্ধের গ্রাম খোলাবাড়িয়া

২০১৪ ডিসেম্বর ০৮ ০০:০৫:৩৬ ২০১৪ ডিসেম্বর ০৮ ০১:০০:০০
নাটোরের মুক্তিযুদ্ধের গ্রাম খোলাবাড়িয়া

নাটোর প্রতিনিধি : আজ ৮ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে নাটোরের খোলাবাড়িয়া গ্রামে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এদিন পাক বাহিনীর ছোড়া গুলিতে রাজ্জাক পাঠান নামে এক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাকসেনাদের সাথে চারদিন ধরে চলা অসম যুদ্ধে রসদ শেষ হয়ে গেলে মুক্তিযোদ্ধারা অন্য গ্রামে সরে যাওয়ার পর পাকবাহিনীর দোসর রাজাকাররা গ্রামে ঢুকে লুটপাট সহ বাড়ি ঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। পরে তারা ওই গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আলহাজ্ব জসিম উদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করে।

এদিন রাজাকাররা নিহত জসিম উদ্দিনের লাশও তার স্বজনদের দাফন করতে দেয়নি। স্বাধীনতার পর এলাকার মুক্তিকামী মানুষ কয়েকজন রাজাকারকে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলে। বেঁচে যাওয়া রাজারকারদের অনেকে দাপটের সাথে এখনও চলাচল করছে। ৭১-এর সেই সব ভয়াবহ স্মৃতি বয়ে বেড়ানো অনেকেই ওই সব রাজাকারদের বিচার দাবি করেছেন। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বিশাল হালতি বিলের দ্বিপ গ্রাম খোলাবাড়িয়া। চারিদিকে পানিতে থৈ থৈ করা এই গ্রামে ৭১’ এর ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল এসে পাশের গ্রামে আশ্রয় নেয়া পাকিস্থানী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু রাজাকারদের মাধ্যমে পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান জেনে গ্রামের চারিদিকে অবস্থান নেয়। পরে যুদ্ধ শুরু হলে পাক সেনারা বাঁশিলা গ্রাম থেকে মাঝারি ভারি অস্ত্র মর্টার সেল নিক্ষেপ করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাররা ওই গ্রামের চারিধারে ৮টি বাংকার খনন করে সেখান থেকে গুলি করতে থাকে। চারদিন ধরে চলে সম্মুখযুদ্ধ। গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা হুজুর আলী ফকির, কাউসার আলী ও স্থানীয় বাসিন্দা জিল্লুর রহমান জানান, ৮ ডিসেম্বর গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেলে মুক্তিযোদ্ধারা বাধ্য হয়ে এই গ্রাম থেকে সরে যায়। যুদ্ধে আব্দুর রাজ্জাক পাঠান নামে এক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি সদর উপজেলার আগদিঘা গ্রামে। তাকে পানির মধ্যেই দাফন করা হয়। তারা সরে যাওয়ার পর রাজাকার ও পাকসেনারা গ্রামে ঢুকে লুটপাট করার পর বাড়ি ঘর আগুন দিয়ে জালিয়ে দেয়। গুলি করে হত্যা করে গ্রামের প্রবীণ ব্যাক্তি জসিম উদ্দিন মোল্লাকে। শহীদ জসিম উদ্দিনের ছেলে জিল্লুর রহমান জানান, আব্দুল কাদের, করিম শিকদার,খালেক ও ওয়াজেদের নেতৃত্বে রাজাকাররা তার বাবাকে গুলি করে হত্যা করে। এমনকি তারা বাবার লাশ দাফন করতে আত্বীয় স্বজন সহ এলাকবাসীদের বাধা দিয়েছে। পরের দিন তার বাবার লাশ দাফন করা হয়। নির্যাতিত পরিবারের সদস্য সোলায়মান আলী, ছমির উদ্দিন ও আব্দুল গফুর জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে আব্দুল কাদের, করিম শিকদার,খালেক ও ওয়াজেদের নেতৃত্বে রাজাকারা অনেককে নিজের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিতে বাধ্য করেছে। নির্যাতনও করা হয়েছে তাদের। ওই সব পোড়া টিন ৮ ডিসেম্বরে খোলাবাড়িয়া গ্রামের ভয়াবহ স্মৃতি মনে করে দেয়। স্বাধীনতার পর গণপিটুনীতে রাজাকারদের অনেকেই মারা যায়। বেঁচে থাকা রাজাকারদের বিচার চেয়েও পাওয়া যায়নি। খোলাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম অভিযোগের সুরে বলেন, স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকের কবর চিহ্নিত করা হয়নি। তিনি মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকের কবর চিহ্নিত করে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মান সহ খোলাবাড়িয়া গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষনের দাবি জানান। এদিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী আব্দুল কাদের তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবী করে জানান, সুনাম ক্ষুন্ন করতে রাজনৈতিকভাবে তার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা রটনা প্রচার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগও মিথ্যা প্রমান হয়েছে।

খোলাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ও বর্তমানে নাটোর জজ কোর্টের পিপি সিরাজুল ইসলাম জানান, ইতিপুর্বে যেসব মামলা তদবিরের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে,তা পুনরায় চালু করে এইসব চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত।


(এমআর/পি/ডিসেম্বর ০৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test