E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা একেন আলী ও মুজাম্মেল হক

২০১৪ ডিসেম্বর ১১ ২০:৩৮:৫৪
কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা একেন আলী ও মুজাম্মেল হক

মেহেরপুর প্রতিনিধি : নিদারুন কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে মেহেরপুর কাথুলী গ্রামের একেন আলী ও গাড়াবাড়িয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হকের।  পরাধীনতার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এই দুই মুক্তিযোদ্ধা। আঘাতপ্রাপ্ত হন দু’জনই। বর্তমানে একদিকে তারা বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত অপর দিকে জটিল রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে।

স্বাধীনতা যুদ্ধের লড়াকু সৈনিক মুক্তযোদ্ধা একেন আলী ও মোজাম্মেল হক রোগাক্রান্ত শরীর নিয়ে আজ বড় অসহায় অবস্থার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। জীবনের মায়া ত্যাগ করে অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধা একেন আলী একদিকে বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত অপর দিকে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানাগত। মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে দাঁড়িয়ে অর্থে অভাবে ঠিকমত চিকিৎসা করাতে পারছেন না। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও। আর্থিক অনটনের কারণে চার মেয়ের দু’জনকে কোন রকমে বিয়ে দিয়েছেন। দু’মেয়ে মনোয়ারা ও লতিফন নেছার বিয়ে দিতে পারেননি আজও। তারাই এখন ক্ষেত-খামারে কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। অপরদিকে,পিতার অসহায়ত্বতের কথা ভেবে মুক্তিযোদ্ধা মুজাম্মেল হকের একমাত্র ছেলে বাবুল পড়ালেখা বাদ দিয়ে পরের জমিতে কৃষি কাজ করে দিনাতিপাত করছেন। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ভিক্ষা করে। প্রতিবেশী ফজলুল হক জানান, মুক্তিযোদ্ধা একেন আলী খুবই অসহায়। তার অসহায় মেয়েরা মাঠে ঘাটে কাজ করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কষ্টে দিন যাপন করছে। দেশের এ শ্রেষ্ঠ সন্তানকে সহযোগীতা করার জন্য সরকার ও সমাজের বিত্ত্ববানদের আহবান জানান তিনি। মুক্তিযোদ্ধা একন আলীর বড় মেয়ে মেয়ে মনোয়ারা খাতুন বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে আমার পিতা কোথায় ছিল আমরা কেউ জানতাম না। আমরা কিভাবে বড় হয়েছি কেউ খোঁজ নেয়নি। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করতে যেয়ে আমরা খবর পায় বাবা মারা গিয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে বাবা ফিরে আসলেও আমাদের খুব কষ্টে দিন কাটছে। মাঠ-ঘাট খেটে দিন চলাচ্ছি। মোজাম্মেল হকের ছেলে রেজাউল জানান, আমার বাবা দেশের জন্য যুদ্ধ করেতে গিয়ে বিছানাগত হয়েছে। পরিবারের হাল ধরতে যেয়ে আমি লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে মাঠে কাজ করছি। সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা রুপচাঁদ আলী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মুজাম্মেল হক খুব কষ্টে দিন যাপন করছে। সংসার চালাতে হিমসিম খাওয়ায় ভিক্ষা করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। অপরদিকে কাথুলী গ্রামের একেন আলী অসুস্থ হয়ে বিছানাগত হয়ে পড়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা মুজাম্মেল হক বলেন, শিকারপুরে ৮ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছি। যুদ্ধ করতে যেয়ে বুলেট বিধ তার শরীরে। বর্তমানে তিনি এখন অসুস্থ। তিনি বলেন, সরকার থেকে যে টাকা পায় তা ঔষধ-পত্র কিনতে শেষ হয়ে যায়। খুবই কষ্ট হয়ে যায় সংসার চালাতে । তবে, মুক্তিযোদ্ধা একনে আলী খুবই অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলতে পারেননি বলে তার অভিমত জানা সম্ভব হয় নি।

মেহেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বশির আহম্মেদ জানান, মুক্তিযোদ্ধা একেন আলী ও মুজাম্মেল হকের খুবই দুরাবস্থা। অসহায় এই মুক্তিযোদ্ধার পুনর্বাসনের দাবী জানান জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। দুজনেই সামান্য কিছু মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান যা দিয়ে তাদের চিকিৎসা সেবা নিতে হিমশিম খেতে হয়। বর্তমানে অসহায় ও অনাহারে দিন কাটাচ্ছে পরিবার দু’টি। জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পাশে হাত বাড়িয়ে তাদেরকে আরো একটু ভালো ভাবে রাখার এ দায়িত্ব আমাদের সকলের?

(ইএম/পি/ডিসেম্বর ১১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test