E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ ১৪ ডিসেম্বর
হানাদার মুক্ত হয় বগুড়ার শেরপুর ও সান্তাহার রেল জংশন শহর

২০১৪ ডিসেম্বর ১৪ ১০:০১:৪৬
আজ ১৪ ডিসেম্বরহানাদার মুক্ত হয় বগুড়ার শেরপুর ও সান্তাহার রেল জংশন শহর

বগুড়া প্রতিনিধি: লাল সবুজের পতাকা গড়া সোনার বাংলাদেশ। এ পতাকা একদিনেই আসেনি যা ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও আড়াই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত হয়েছে। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের শেষে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে ১৪ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় বগুড়ার শেরপুর ও সান্তাহার রেল জংশন শহর।

পাকহানাদার বাহিনী হাত থেকে মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা এই দিনে শেরপুরে নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকেই শেরপুরে চলে তরুন ছাত্র সমাজের মধ্যে দেশ স্বাধীন করার দৃঢ় প্রত্যয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি, গঠন হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক নির্বাচিত হন তৎকালিন শেরপুর ডিগ্রী কলেজ ছাত্র সংসদের জি,এস ও ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে মুক্তি বাহিনী। মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার নিযুক্ত হন ন্যাপ নেতা সিদ্দিক হোসেন বারি শেরপুর ডি,জে হাইস্কুল চত্তরে চলে কাঠের রাইফেল দিয়ে ট্রেনিং পরে শেরপুর থানা থেকে ১৪ টি রাইফেল দেয়া হয়। ট্রেনিং দেন থানার তৎকালিন হাবিলদার আব্দুল হালিম। তাকে সহযোগিতা করেন থানার দারোগা ওয়াজেদ মিয়া। ২৪ এপ্রিল শেরপুরে পাকবাহিনী প্রবেশ করে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় গাছ কেটে ব্যারিকেড দেওয়ার চেষ্টা চালায় এবং সামান্য অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। কিন্তু পাক বাহিনীর নিকট টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে। এরপর মুক্তিয্দ্ধোারা বিচ্ছিন্ন ভাবে দেশে বিদেশে ট্রেনিং নিয়ে দেশে ফেরা আরম্ভ করে। ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারে শেরপুর থানায় ঐ সময় দুই জন কনস্টেবল ও একজন দারোগা আছে। পাক বাহিনী তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে ঐদিনই বিকেলে শেরপুর থেকে পলায়ন করে এবং রাজাকার আশ্রয় নেয় বিহারী অধ্যুষিত ঘোলাগাড়ী গ্রামে। ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় সারিয়াকান্দী থেকে বাচ্চুর নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা শেরপুর থানা দখল করে। মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় মিত্র বাহিনী বগুড়া থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে শেরপুর বাসস্ট্যান্ডে ১৪ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় মুক্তিযোদ্ধাদের এ্যাম্বুসে পরে যায়। পরে মিত্র বাহিনী ঢাকা অভিমুখে রওনা দেয়। এর পর মুক্তিযোদ্ধারা ঘোলাগাড়ী আক্রমন করে রাজাকার মুক্ত করে। এ সময় রাজাকার আলী আকবর, বুলু আক্তার, দিল মাহমুদ মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনে মারা যায় এবং কিছু রাজাকার আত্মসমর্পন করে। ফলে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ শেরপুর হানাদার মুক্ত হয়। পরদিন ১৫ ডিসেম্বর পার্কের মাঠে (বর্তমানে মহিলা ডিগ্রী কলেজ) স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়। ১৪ ডিসেম্বর দিবসটি শেরপুর হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে বিভিন্ন সংগঠন দিনটি পালন করে থাকে।

অপরদিকে আজ ১৪ ডিসেম্বর অবাঙ্গলী (বিহারী) অধ্যুষিত বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার রেল জংশন শহর হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিকের আক্রমণে পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে অবরুদ্ধ সান্তাহারকে মুক্ত করেন। স্বাধীনতার যুদ্ধে সান্তাহার জংশন শহরের ইতিহাস গৌরবময়। দেশের বৃহৎ অবাঙ্গালী (বিহারী) অধ্যুষিত শহর হওয়ায় এখানে পাক হানাদাররা মূল ঘাঁটি স্থাপন করে। এ শহর থেকে পাক সেনারা নিয়ন্ত্রণ করতো গোটা উত্তরাঞ্চল। এখানকার পাক হানাদারদের নির্মম অত্যাচারের পাশাপাশি অবাঙ্গালীদের (বিহারী) অত্যাচার ছিল অবর্ণনীয়। শহরে দীর্ঘ ৯ মাস কোন বাঙ্গালীকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বাঙ্গালী দেখা মাত্রই চালানো হতো নির্মম নির্যাতন, করা হতো হত্যা। প্রত্যেক বিহারী ছিল অস্ত্রে সজ্জিত। তারা পার্শ্বের গ্রামগুলোতে লুটপাট সহ অগ্নিসংযোগ করতো। বাঙ্গালীরা ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের গৌরবান্বিত দিনগুলো উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আজো জল জল করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো সান্তাহার শহরও জ্বলে উঠেছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তার সক্রিয় বৈশিষ্টে প্রথম থেকেই শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ। সান্তাহার আদমদীঘি সহ গোটা এলাকা জুড়ে চালানো হয় গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ। ১০ ডিসেম্বর থেকে কমান্ডার ফজলুল হক, নজরুল ইসলাম নান্টু, মুনছুর, এলকেআবুল হোসেন সহ অন্যান্য কমান্ডারদের নেতৃত্বে প্রায় ৪ শতাধিক গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা সান্তাহারের দক্ষিণ, উত্তর ও পূর্ব দিকে অবস্থান নিয়ে খন্ড খন্ডভাবে সান্তাহার শহরে অবস্থিত পাক হানাদারদের উপর হামলা চালিয়ে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিকের রেললাইন উপড়ে দিয়ে শত্রুদের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ১২ ডিসেম্বর কায়েতপাড়ার নিকট রেল উপড়াতে গিয়ে সুজিত নামের এক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ১৪ ডিসেম্বর। তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমনের মুখে এই দিন পাক হানাদাররা সান্তাহার ছেড়ে নওগাঁ হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর এই দিনে সান্তাহারে বিজয়ের পতাকা উড়ায়।



(এএসবি/এসসি/ডিসেম্বর১৪,২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test