E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদারীপুরে আজো গণকবর সংরক্ষণ হয়নি

২০১৪ ডিসেম্বর ১৫ ১৮:৩০:৪৮
মাদারীপুরে আজো গণকবর সংরক্ষণ হয়নি

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরে মুক্তিযোদ্ধের সময় পাকসেনা সদস্যরা এ আর হাওলাদার জুট মিলের মধ্যে প্রায় ৫’শ নারী-পুরুষকে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়। শহীদদের এই গণকবর আজও সংরক্ষণ করা হয়নি।

সেই বৃটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধ পর্যন্ত সব আন্দোলনের সাথে মাদারীপুরের মানুষের সম্পৃক্ত ছিল নিবিরভাবে। দেশের জন্য যে কোন আন্দোলন বা যুদ্ধে এখানকার মানুষ জীবন উৎস্বর্গ করতে পিছপা হয়নি। বীরের মতো ঝাপিয়ে পড়েছে সত্যের জন্য। ছিনিয়ে এনেছে লাল সবুজের পতাকা। বার বার অন্যায়-অবিচার, শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের মানুষ। সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে যে কোনো আন্দোলনে অংশ নিয়ে তারা ইতিহাসে স্বাক্ষর রেখেছেন।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানায়, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য মাদারীপুরের ১৬০ ছাত্র-যুবককে স্টুয়ার্ড মুজিবের নেতৃত্বে ভারতে পাঠানো হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মাদারীপুরের এ দলটিই ছিল সর্বপ্রথম ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য যাওয়া। ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে জুনের প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা চারটি দলে বিভক্ত হয়ে মাদারীপুরে ঢোকে। মুক্তিযোদ্ধারা নয় মাস বিভিন্ন রণাঙ্গণে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এর মধ্যে টেকেরহাট, পাখুল্যা, কালকিনি, কলাবাড়ি, খোয়াজপুর, সাধুর ব্রীজ ও সমাদ্দারের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। ৮ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমাদ্দার ব্রিজের সম্মুখযুদ্ধ শেষে পাক বাহিনীর একজন মেজর, একজন ক্যাপ্টেনসহ মোট ৩৮ পাকসেনা খলিল বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। দুদিনব্যাপী যুদ্ধে শহীদ হন সবচেয়ে ছোট্ট মুক্তিযোদ্ধা ও সবার প্রিয় সরোয়ার হোসেন বাচ্চু।

নয় মাস যুদ্ধে মাদারীপুরের ৫৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়া যুদ্ধের নয় মাসে মাদারীপুরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সহস্রাধিক মুক্তিপাগল মানুষকে আটক করে টর্চার সেলে নির্যাতন করা হয়। এ আর হাওলাদার জুট মিলের অভ্যন্তরে ডি-টাইপ বিল্ডিংয়ে স্থাপিত হানাদার বাহিনীর টর্চার সেলে প্রায় ৫০০ নারী-পুরুষকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। তাদের অনেককে হাওলাদার জুট মিলে আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ে স্থাপিত জেটির উপর দাঁড় করিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়া হয়। বাকিদের ডি-টাইপ বিল্ডিংয়ের পশ্চিম দিকের খোলা জায়গায় হত্যা করে মাটি চাপা দেয়া হয়। সেই খোলা স্থানের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অগণিত মুক্তিপাগল বাঙালি নারী-পুরুষের লাশ, যা আজও অযত্ন-অবহেলায় অরক্ষিত রয়েছে। সেখানে গড়ে উঠেছে কলাবাগান, বাড়িঘর, ফসলি জমি, খেলার মাঠ। হারিয়ে যাচ্ছে শহীদের স্মৃতি।

মহান মুক্তিযুদ্ধের খলিল বাহিনীর প্রধান মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান খান বলেন, এটিই মাদারীপুর জেলার বড় গণকবর হিসেবে পরিচিত। এছাড়া আরো চারটি গণকবর রয়েছে, যার সন্ধান অনেকেই জানেন না। এগুলো হচ্ছে পাখুল্যা, মিঠাপুর, সেনদিয়া ও কলাগাছিয়া। এসব এলাকায় পাক বাহিনী গণহত্যা চালিয়ে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করে মাটি চাপা দিয়ে রাখে। অযত্ন-অবহেলায় এসব গণকবর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।

এ আর হাওলাদার জুট মিলের শ্রমিক হেমায়েত বলেন, আমি যুদ্ধের সময় দেখেছি পাক বাহিনীরা ৭/৮ জনকে ধরে এনে মিলের মাঠে গর্ত করতে বলে। গর্ত করা হলে চারজনকে ওই গর্তে নামতে বলে। পরে পাক বাহিনী তাদের গুলি করে মেরে ফেলে। বাকি চারজনকে ওই গর্ত মাটি দিয়ে ভরাট করতে বলে। এরই পাশে পাক বাহিনী ওই চারজনকে দিয়ে গর্ত করে। গর্তের ভিতরে চারজনকে নামিয়ে গুলি করে মাটি চাপা দিয়ে যায়। মহান মুক্তিযুদ্ধে মাদারীপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অনস্বীকার্য। মিত্র বাহিনীর সহযোগিতা ছাড়াই একমাত্র মাদারীপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল। যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। আজও মাদারীপুরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অবদানের স্বীকৃতি পায়নি। গড়ে ওঠেনি কোনো স্মৃতিসৌধ।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতির সভাপতি শাহজাহান হাওলাদার বলেন, আমাদের সকলের একত্রি হয়ে এই গণকবর সংরক্ষণ করা উচিত।

(এএসএ/এএস/ডিসেম্বর ১৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test