E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

ইতিহাসের পাতা কি বাচ্চাদের স্লেট-পেনসিল?  

২০২৫ জুন ১৯ ১৯:৪৩:৩৯
ইতিহাসের পাতা কি বাচ্চাদের স্লেট-পেনসিল?  

প্রবীর সিকদার 


২০২৪ সালের কথিত জুলাই-আগস্ট বিপ্লব কিংবা অভ্যুত্থানের পর সাজাপ্রাপ্ত আসামী ড.মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রিসেট বাটন টিপে একের পর এক মুক্তিযুদ্ধকে যেভাবে অপমানিত করে চলেছেন, সেটা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল! কে কোথায় করবে রাষ্ট্রদ্রোহিতার ভয়ঙ্কর অভিযোগ; পুলিশ থেকে আদালত, কিছুই তো বাকি নেই অপদখলে নেওয়ার! সরকারি মদদে দেশজুড়ে মুক্তিযুদ্ধের সকল স্মৃতি চিহ্ন ধ্বংস করা হয়েছে এবং হচ্ছে; বাদ যায়নি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য, মুজিবনগরের মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য! এমনকি রেহাই পায়নি স্বাধীনতার সূতিকাগার বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি, তথা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, জুলাই-আগস্টের কথিত বিপ্লব কিংবা অভ্যুত্থানটি শুধু শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আওয়ামীলীগ সরকারকে ফেলে দেওয়ার কোনও ষড়যন্ত্র নয়, সেটি ছিল মূলত একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের ছাত্র-জনতার অন্যায় বিরোধী আবেগকে কাজে লাগিয়ে একাত্তরের পরাজয়ের নির্মম প্রতিশোধ নেওয়া। তাই তো তারা সুযোগ পেলেই একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করতে কিংবা অস্বীকার করবার ভয়ঙ্কর অপচেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। ছিনতাই হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড। উচ্চারিত হচ্ছে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন না করবার ফতোয়া এবং চলছে জাতীয় সঙ্গীত 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি' পাল্টে ফেলার অপচেষ্টা। হুমকি দেওয়া হচ্ছে একাত্তরে ৩০ লাখ বাঙালির রক্তস্নাত বাহাত্তরের সংবিধানকে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়ার।   

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুরু করা হয়েছে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত কথিত গণহত্যায় জড়িত কল্পিত খুনিদের বিচার। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়কে কলঙ্কিত করতে সেখানে ঢোকানো হয়েছে জুলাই-আগস্টের কথিত শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের কল্যাণে নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের নানা নির্মম কর্মযজ্ঞ।

এসব করেই কি মুছে ফেলা যাবে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নানা ঐতিহাসিক কর্মযজ্ঞ? অবশ্যই নয়। ইতিহাস এতো ঠুনকো বিষয় নয় যে, ক্ষমতার দাপটে বহুল বিতর্কিত ইউনুস সরকার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে মুছে ফেলে সেখানে জায়গা করে দিবেন ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের কথিত বিপ্লব কিংবা অভ্যুত্থানকে! ইতিহাস থাকবে ইতিহাসের জায়গাতেই।

যারা ইতিহাস মুছে দিয়ে বিতর্কিত ইতিহাস প্রতিস্থাপন করতে চান, তাদের প্রতি আমার অপরিসীম করুণা প্রকাশ করে একটি গল্পের অবতারণা করছি : একটি গ্রামের কৃষক দুই ভাই, মালেক ও সালেক। দুই ভাইয়ের মধ্যে এতো মধুর সম্পর্ক যে, গ্রামের লোকেরা তাদের দুই ভাইকে রাম-লক্ষণ বলে থাকেন। তারা একসাথে মাঠে যান, জমি চাষ করেন, ফসল তোলেন, বাড়ি ফেরেন এবং একসাথে গোসল করেন ও একসাথে বসে আহার করেন।

একদিন ছোট ভাই সালেক খবর পেলেন, তার বড় ভাই মালেক পাশের ফসলের মাঠ থেকে দুই বিঘা জমি কিনেছেন। অথচ ছোট ভাই সালেক জানেন না কিছুই! ঘটনাটি জেনে ছোট সালেক প্রথমে বিশ্বাসই করেননি! পরে ছোট ভাই অনুসন্ধান করে জানতে পারেন, ওই দুই বিঘা জমি ভাবীর পরামর্শে বড় ভাই মালেক ছোট ভাই সালেককে বঞ্চিত করে গোপনে নিজের নামে রেজিস্ট্রি করেছেন। এই খবর নিশ্চিত হবার পর ছোট ভাই সালেক খুব মর্মাহত হয়ে পড়েন। কিন্তু চক্ষু-লজ্জার কারণে ছোট ভাই সালেক বড় ভাই মালেককে কিছুই বুঝতে না দিয়ে দুই বিঘা জমির দলিল খুঁজতে থাকেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর একদিন ঘরের পাটাতনের একটি ট্রাংক থেকে সেই দুই বিঘা জমির দলিল উদ্ধার করেন সালেক। দলিল খুলে দেখেন, আসলেই বড় ভাই মালেক ওই জমিটি নিজের নামেই কিনেছেন। সেখানে নেই তার নাম! তারপর সালেক এক সেকেন্ড বিলম্ব না করে নিজের ভাতিজির পড়ার টেবিল থেকে কলম এনে ওই দলিলে যেখানে বড় ভাই মালেক মোল্লার নাম রয়েছে, সেটাকে ১ নম্বর হিসেবে চিহ্নিত করে তার নিচে ২ নম্বর দিয়ে নিজের নাম সালেক মোল্লা লিখে যুদ্ধজয়ের খুশিতে দলিলটি ট্রাংকের যথা স্থানে রেখে নিচে নেমে আসেন।

সেদিনই রাতে মালেক ও সালেক যখন একসাথে খেতে বসেন, তখন ছোট ভাই বড় ভাইকে ওই দুই বিঘা জমি গোপনে তার নিজের নামে কেনার বিষয়টি জিজ্ঞেস করেন। মুহূর্তে বড় ভাই মালেক লজ্জায় লাল হয়ে যান এবং ছোট ভাই সালেকের কাছে ওই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। তখন ছোট ভাই সালেক আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলেন, তুমি চিন্তা করো না ভাইজান, আমি দুই বিঘা জমির ওই দলিলে তোমার নামের নিচে আমার নাম সালেক মোল্লা লিখে রেখেছি। এখন ওই জমি আর তোমার একার নয়, আমারও।

প্রিয় পাঠক, মালেক ও সালেকের এই গপ্ল থেকে কী ঐতিহাসিক শিক্ষাগ্রহণ করবেন কিংবা করতে পারবেন ড. ইউনুসের নেতৃত্বের সর্বভুক সরকার আর তার অনুগত চ্যালা-চামুণ্ডারা? নাকি ইতিহাসের পাতাকে তারা বাচ্চাদের স্লেট-পেনসিল হিসেবেই জেনে যাবেন? যখন যা ইচ্ছা তারা মুছবেন আর লিখবেন?

পাঠকের মতামত:

০৯ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test