E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘মা-বাবা শিক্ষক মন্ডলীর কাছে আমি বোঝা হয়নি’

২০১৮ জানুয়ারি ১৪ ১৭:২২:১২
‘মা-বাবা শিক্ষক মন্ডলীর কাছে আমি বোঝা হয়নি’

আর আই সবুজ, নওগাঁ : ‘প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সমাজের বোঝা’- এমনি জানতেন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন। সে এই প্রতিবেদককে বললেন, যার পা নেই তার পৃথিবীতে কিছুই নেই। আমি চলাফেরা করতে পারিনা। আমি যেন সমাজের বোঝা হয়ে গেছি। শুধু বোঝা হয়নি বাবা-মা ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মন্ডলীর কাছে। তারা তাদের প্রতিষ্ঠানে আমাকে ভর্তি করিয়ে শিক্ষার আলো দেখিয়ে নতুন করে আমাকে সমাজে বাঁচতে শিখিয়েছে। আমার একটা হুইলচেয়ার আছে। এখন আমি পড়া লেখা করি বিদ্যালয়ে যাই। আমি সমাজের বোঝা নই। আমি লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত মানুষের মত মানুষ হব। সমাজকে দেখিয়ে দিব প্রতিবন্ধীরাও পারে সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে।

সে শিক্ষার্থী আবেগে বলে ফেললেন সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা সরকারি অনুদানে টিফিনের সময় বিস্কুট পায়। আর তারা পেলে আমরা কেন পাইনা। আমাদের স্যার ম্যাডামদের বিল বেতন কেন হয় না। এত সুন্দর ভাবে যত্ন সহকারে পাঠদান করানোর পরও দিনের পর দিন কলুর বলদের মত নিজের খেয়ে আমাদের শিক্ষাদান করে চলেছে।

ব্যক্তি উদ্যোগে এরুপ সুন্দর মন মানসিকার পরিচয় দিয়ে ২০১৩ সালের দিকে ১০ শতাংশ জমির উপর নওগাঁর পোরশা উপজেলার নিতপুর মাস্টারপাড়ার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি মৃত মোবারক হোসেনের পুত্র শাহজাহান আলী কপালির মোড় নামক এক স্থানে স্থাপন করেন সম্পূর্ন ব্যক্তি উদ্যোগে মোবারক হোসেন প্রতিবন্ধী প্রাথমিক বিদ্যালয় । হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর পদচারনা ও ছাত্র-ছাত্রীর লেখাপড়ার মধুর আওয়াজে ভরে ওঠেছে পুরো বিদ্যালয় প্রাঙ্গন।

জানা যায়,এ বিদ্যালয়টি এলাকায় ব্যাপক সুনামও সাড়া অর্জন করেছে তাদের এ উদ্যোগকে এলাকাবাসী সাদুবাদ জানিয়েছে। শিশু শ্রেণি হতে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়টির ২২৫ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি ক্লাস রুম ও একটি অফিস রুম রয়েছে। বর্ষাাকালে ও শীতকালে ক্লাস চালান খুবই মুশকিল হয়ে পড়ে বছরের অন্যান্য সময় তাদের স্কুলের সামনে গাছের নিচে বসে পাঠদান দেন। আর এদের কে বিনা বেতনে দেখা শোনা ও পাঠদান করে চলেছে ১১ জন শিক্ষক কর্মচারী। শারীরিক ব্যায়াম, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগী করে তুলেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা বৃন্দ।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মওদুদ আহম্মেদের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আধ্যাপিকা নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে মেধার প্রতিফলন ঘটাতে উপজেলার আশপাশের গ্রাম ও দূর-দূরান্তের বিভিন্ন এলাকা হতে আগত ছাত্র-ছাত্রীদের আমরা বিনা বেতনে আদর-যত্ন, স্নেহ মমাতা ভালবাসা দিয়ে বিভিন্ন কলা কৌশলে খেলাধুলা, গান-বাজনার মাধ্যমে শিক্ষা দিয়ে চলেছি আমিসহ ১১ জন শিক্ষক কর্মচারী ২০১৩ সাল থেকে বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান দিয়ে আসছি।

প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর মাননীয় জাতীয় সংদস সদস্য নওগাঁ-১ আসনের বর্তমান এমপি বাবু সাধন চন্দ্র মজুমদার, জেলা প্রশাসন,ও উপজেলা প্রশাসন এর সহযোগিতায় বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত কিছু সহযোগিতা করেছেন। বাকী সব কিছু সংকুলান করা হয় শাহজাহান আলীর পরিবার থেকে আমাদের শিক্ষকদের প্রত্যাশা একদিন এই বিদ্যালয়টি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হবে, সেদিন সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে সে আশায় বুক বেধে বিনা প্রারিশ্রমিকে শিক্ষা দান দিয়ে চলেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীরা।

(আরআইআর/এসপি/জানুয়ারি ১৪, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test