E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ত্রাণে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক দায়বদ্ধতা 

২০২০ মে ১৩ ১৭:০১:০৮
ত্রাণে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক দায়বদ্ধতা 

নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার : প্রত্যেক দেশ পরিচালনার জন্য রয়েছে নিজস্ব সংবিধান। আর এই সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালিত হয়ে থাকে। এই সংবিধানই হলো রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল এবং এতেই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রতিফলিত হয়ে থাকে। প্রত্যেকটি সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার কতগুলি মূলনীতি রয়েছে। ১৯৩৭ সালে সর্বপ্রথম আয়ারল্যান্ডের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সংযোজন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় অনেক দেশেই এইসব মূলনীতি পরবর্তীতে সংবিধানে সংযোজিত করে।

১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি সমূহ গৃহীত হয়। ৪টি মূল নীতির সাথে সম্পর্কিত আরও কতকগুলি নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সংবিধানে গ্রহণ করা হয়েছে। মালিকানার নীতি, মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত এগুলির মধ্যে অন্যতম। মালিকানা নীতির বেলায় দেখা যায় উৎপাদন যন্ত্র, উৎপাদন ব্যবস্থা ও বন্টন প্রণালী মালিক বা নিয়ন্ত্রক হবে জনগণ।

মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নাগরিকদের অন্ন, বস্ত্র ,বাসস্থান,স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা প্রদান করা। সুযোগের সমতা বিধানের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকদের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবে। এই তিনটি নীতিতেই জনগণের অধিকারের কথা সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। সকল ব্যবস্থায় জনগণকেই মালিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রের কর্তব্য হচ্ছে সকল জনগণের চাহিদা বাস্তবায়ন করা। সেক্ষেত্রে দলমত জাতি গোষ্ঠী বিবেচনা না করে সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র।

জাতির এ ক্রান্তিকালে দেশের জনগণের পাশে থেকে রাষ্ট্র সহযোগিতা করবে এটাই স্বাভাবিক। রাষ্ট্র থেকে সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া জনসাধারণের অধিকার। তাই এ মহামারিতে রাষ্ট্র যে ত্রাণের ব্যবস্থা করেছে তা রাষ্ট্র পরিচালানার দায়িত্ববোধ থেকেই করেছে। আবার এ ত্রাণ হরণ করার মতো লোকেরও কিন্তু অভাব নেই। যার জন্য কিন্তু অনেক প্রতিনিধি বরখাস্তও হয়েছেন। যুগে যুগে রামের যেমন জন্ম হয়েছে সাথে সাথে কিন্তু রাবনও এসেছেন। ইদানিংকালে করোনার প্রভাবে কর্মজীবি মানুষ বেকার হয়ে যাওয়াতে দেখা দিয়েছে চরম সংকট।

অতীতে দেশে বিভিন্ন সময়ে বিপর্যয় আসলেও তা ছিল এলাকা কেন্দ্রীক। যার জন্য সরকারকে এত বেগ পেতে হয়নি। এমনকি বেশিরভাগ এলাকার মানুষ ত্রাণের বিষয়ের সাথে সম্পর্কহীনই ছিল। ইতোমধ্যে সাড়ে চার কোটি মানুষের মাঝে এ ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং এ সহায়তা অব্যহত রাখারও ঘোষণা দিয়েছে সরকার। অন্যদিকে সরকারের পাশাপাশি ব্যাক্তি উদ্যোগে ও বিভিন্ন সংগঠন থেকেও ব্যাপকভাবে করোনাকালে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। যদিও ব্যাক্তি ও সংগঠন এসব সহায়তা প্রদানে বাধ্য নয়। যা হচ্ছে তা নিঃসন্দেহে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই হচ্ছে।

আমরা সামাজিক ভাবে বসবাস করার কারণে একজনের অসুবিধায় হাজির হচ্ছি আরেকজন। সুখের সময় মানুষের মাঝে অমিল লক্ষ্য করা গেলেও দুঃখের সময় বাড়ে ভ্রাতৃত্ববোধ আর সৃষ্টি হয় মানবিকতা এটাই অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। তবে এ করোনা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে দেখা যাবে সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি অনেকটাই মলিন হয়ে গেছে যা বাস্তবতা। ধর্মীয় বিধিবিধানের ক্ষেত্রেও কিন্তু সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা তোলে ধরা হয়েছে। ব্যাক্তির বেলায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা বা ভোটের রাজনীতি হলেও ত্রাণ পাচ্ছে অসহায় মানুষ এটা বড় কথা।

ব্যাক্তির ত্রাণ প্রদানের বেলায় আমরা মুখে যাই বলি না কেন বেশির ভাগ সময়ই দল প্রাধান্য পেয়ে আসছে। আবার সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের ইচ্ছে মতো ত্রাণ প্রদানের চেষ্টা করছে ভোট ব্যাংক ধরে রাখার জন্য। সমস্যাটা হলো মানুষের যেমন অভাব রয়েছে তেমনি মিথ্যা কথা বলে বিভিন্ন জায়গা থেকে বারবার ত্রাণ সহায়তা নেয়ার চরিত্রটাও রয়েছে। যার ফলে একজনই বারবার ত্র্রাণ পেয়ে আসছে।

আর যারা পাচ্ছে না বা ত্রাণ আনতে যাচ্ছে না লোক লজ্জার ভয়ে তারা কিন্তু এর বাইরেই থেকে যাচ্ছে। তবে প্রশাসনের মনিটরিং এর কারণে এঅবস্থা অনেকটাই কাটানো সম্ভব হয়েছে। মোট কথা হলো রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা যাই বলি না কেন সবক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষকে হতে হবে সচেতন। দুপক্ষের মাঝে যে পক্ষ থেকেই সহায়তা প্রদান করা হউক না কেন তার মধ্যেও ব্যাক্তিগত দায়বদ্ধতা থাকতে হবে।

তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা অনেকাংশেই যথেষ্ট সন্তোষজনক নয় বলেই প্রতীয়মান হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী মোবাইলের মাধ্যমে ৫০ লক্ষ কর্মহীন মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করছেন। কারন এসহায়তা প্রদানে প্রধানমন্ত্রী কোনো মধ্যস্বত্বভোগী রাখতে চান না বলেই মনে হয়। সঠিক পরিকল্পনা মাফিক সামনের দিকে না গেলে সকল পদক্ষেপই ব্যর্থ হবে।

দীর্ঘদিন লকডাউন থাকলে বাড়বে বেকারত্ব তৈরি হবে অভাব। অন্যদিকে আর একটি বিষয় হলো ত্রাণ প্রদানের মাধ্যমে এসমস্যা সমাধান করা যাবে না। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধের সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো জনগণ যেন সুস্থ্য থাকে আবার যেন অনাহারেও না থাকে। আজকে যারা অধিক সময় লকডাউনের কথা চিন্তা করছি তারা কিন্তু একপক্ষের আলোচনা নিয়েই ব্যস্ত আছি। তাই এই ত্রাণ প্রদান প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত না করে সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লক ডাউন প্রত্যাহার করে স্বাভবিক জীবনে জনগণকে ফিরিয়ে আনতে পারলেই দায়বদ্ধার জায়গাটি অটুট থাকবে।

লেখক : শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test