E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১০ বছরে ১১টি জাতীয় পুরষ্কারের রেকর্ড

২০২০ অক্টোবর ২০ ১৬:২৭:০৩
১০ বছরে ১১টি জাতীয় পুরষ্কারের রেকর্ড

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : নাম নৈঋতা হালদার, দশম শ্রেণির ছাত্রী; বাবা অরিন্দম হালদার ও মাতা চিনো রাণী বিশ্বাস। টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনস আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি মাত্র ১০ বছরের শিক্ষা জীবনে নৈঋতা ১১টি জাতীয় পুরষ্কার পেয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। মেধাবী নৈঋতা হালদার এবার স্কাউট প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ পদক প্রেসিডেণ্ট’স স্কাউট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। জেলা শহরে থেকে এটি অত্যন্ত কঠিন ও বিরল ঘটনা। দেশে টাঙ্গাইলের মুখ উজ্জ্বল করায় তাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শিক্ষানুরাগীরা। 

জানা যায়, নৈঋতার জন্ম ২০০৫ সালের ৪ মে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বহনতলী গ্রামে মামার বাড়িতে। পেত্রিক নিবাস মাদারিপুরে। মা বঙ্গের আলীগড় খ্যাত সরকারি সা’দত কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। মায়ের চাকুরির সুবাদে নৈঋতার বেড়ে ওঠা টাঙ্গাইলেই। নৈঋতা হালদার চতুর্থ শ্রেণিতে থাকাকালে ২০১৪ সালে অভিনয়ে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ, অষ্টম শ্রেণিতে ২০১৮ সালে শ্রেষ্ঠ এবং নবম শ্রেণিতে ২০১৯ সালে ২য় স্থান অধিকার করে। ২০১৫ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালীন জাতীয়ভাবে উপস্থিত বক্তৃতা এবং কবিতা আবৃতিতে ২য় হয়।

২০১৯ সালে নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন লোকনৃত্যে ৩য় ও দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন চলতি সালে স্কাউটের প্রতিভা অণ্বেষনে উচ্চাঙ্গ নৃত্যে ১ম হয়েছে। স্কাউটিং এ ২০১৫ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালীন শাপলা কাব, অষ্টম শ্রেণিতে ২০১৮ সালে সমাজ উন্নয়ন এবং দশম শ্রেণিতে প্রেসিডেণ্ট’স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ পেয়েছে। নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন ২০১৯ সালে দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীর মুকুট তিনিই অর্জন করে। বিষ্ময়কর বিষয় ২০১৯ সালে এক বর্ষে জাতীয়ভাবে ৩টি পদে পুরষ্কার পাওয়া দেশের একমাত্র শিক্ষার্থী নৈঋতা হালদার। ফ্রান্সের প্যারিসে আন্তর্জাতিক ডিজিটাল আর্ট প্রতিযোগিতায় তার আর্ট মনোনীত হয়েছে।

বিগত ২০১৫ সালে কুর্নি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মির্জাপুর উপজেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। এরপর টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনস আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ এবং ট্যালেণ্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্ত হন। প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে তার ক্লাসের রোলনং ১।

২০১৯ সালের সৃজনশীল মেধা অন্বেষন প্রতিযোগিতায় ভাষা ও সাহিত্যে টাঙ্গাইল জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এছাড়া জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে পেয়েছেন অসংখ্য পদক-পুরষ্কার। নৈঋতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শিক্ষামন্ত্রীর হাত থেকে ৪ বার পুরষ্কার গ্রহণ করেছেন। সরকারি শিক্ষা সফরে বিদেশ গিয়েছেন।

জানা যায়, কোন নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন একবারেই অপছন্দ নৈঋতার। কিন্তু সময়ের মূল্য পুরোপুরি দিতে অভ্যস্ত। বিদ্যালয়ের পড়া শেষ না করে বসে পড়ে ছবি আঁকতে, আবার ছবি আকাঁ শেষ না করেই মগ্ন হয়ে যায় গান-নৃত্যে। বড়ই মন খুশি মেয়ে নৈঋতা।

এই বয়সে বাংলা ইংরেজির পাশাপাশি আয়ত্ব করেছেন- হিন্দি, উর্দু ও জাপানী ভাষা। বই পড়ে কিছুটা কোরিয়ান ভাষাও বলতে পারেন। অবসরে কবিতা-গল্প লিখতে পছন্দ। ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারিতে নৈঋতার লেখা ‘ময়না আমার বাবুই সোনা’ নামে একটি গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে। টাঙ্গাইলের জেলা শিল্পকলা একাডেমী, সিডিসি ক্লাব এবং জেলা শিশু নাট্য দলের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত গান, নাচ ও অভিনয় চর্চা করে থাকেন।

পুলিশ লাইনস আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বলেন, নৈঋতার মতো সব বিষয়ে এতো মেধাবী শিক্ষার্থী আমাদের স্কুলে কখনও আসেনি। আমার জানামতে এতোগুলো ইভেন্টে জাতীয় পুরষ্কার পাওয়া দেশের একমাত্র ছাত্রী নৈঋতা।

বাংলাদেশ স্কাউট টাঙ্গাইল জেলার কমিশনার ওয়াজেদ আলী খানশুর (লিডার ট্রেইনার) বলেন, নৈঋতা শব্দের অর্থ মহীয়সী নারী। মেধার সাথে অক্লান্ত পরিশ্রম এবং রতœগর্ভা মায়ের প্রচেষ্টায় সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েটি। ওর সাফল্যে স্কাউটসহ আমরা অত্যন্ত খুশি।

নৈঋতার গর্বিত মা চিনো রাণী বিশ^াস আবেগময় কন্ঠে বলেন ‘ও যেনো মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করতে পারে সেই কামনা করি। সবার কাছে আশির্বাদ চাই’।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার ও পুলিশ লাইনস আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, নৈঋতা দেশের সম্পদ। ওর প্রতিভা বিকাশের সুযোগ ও পরিবেশ আমাদের তৈরি করে দিতে হবে। বড় হলে দেশের জন্য মেধাকে কাজে লাগাতে হবে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক আতাউল গণি বলেন, দেশের অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের পেছনে ফেলে টাঙ্গাইলের মেয়ের এ অর্জন অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। সে টাঙ্গাইলবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে। এতে অন্য শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হবে। আমরা নৈঋতা হালদারকে আরো উৎসাহ দিব। আমার বিশ^াস মেধা ও কর্ম দ্বারা একদিন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে নৈঋতার সুনাম বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবে।

কৃতি ছাত্রী নৈঋতা হালদার বলেন, এ প্রাপ্তিতে আমি খুবই খুশি। আর সকল কৃতিত্ব আমার মায়ের। যিনি আমাকে বন্ধুর মতো সব কিছুতেই আগলে রাখেন। নিজের স্বপ্ন নিয়ে নৈঋতা দৃঢ় কন্ঠে বলেন, আমি বড় হয়ে পররাষ্ট্র সচিব হতে চাই। আমার প্রিয় বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। বিশ্বের সাথে আমাদের কুটনৈতিক সম্পর্ক যত শক্তিশালী এবং পারস্পারিক বিনিময় তরান্বিত হবে এদেশ ততই উন্নত হবে। আমি সেই কাজে অংশ নিতে চাই। বড় হয়ে আমি অসহায় মানুষের জন্য কাজ করবো। অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে নৈঋতা বলেন, আমি কখনও সময় অপচয় করি না। প্রকৃতিকে ভালোবাসি প্রকৃতিকে নিয়ে লিখি। এতে মন উদার হয়।

(আরকেপি/এসপি/অক্টোবর ২০, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test