E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রায় বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির ঝাড়ুদার শকুন 

২০২১ ফেব্রুয়ারি ১৭ ১৬:৫১:১১
প্রায় বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির ঝাড়ুদার শকুন 

আবুল কালাম আজাদ : অন্যান্য পাখিদের তুলনায় শকুন খুব ভালো শিকারি পাখি। শকুন তার দৃষ্টি দিয়ে খুব সহজেই পরিবেশ দূষণকারী জঞ্জালগুলো শিকার করে নেয়। শকুন মূলত মৃত প্রাণীর ওপরই নির্ভরশীল। তাই শকুন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, প্রকৃতির ঝাড়ুদার, পরিবেশ রক্ষাকারী পাখি নামে পরিচিতি পায়।

এরা মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে বেঁচে থাকে। সাধারণত এরা অসুস্থ ও মৃতপ্রায় প্রাণীর চারদিকে উড়তে থাকে এবং প্রাণীটির মরার জন্য অপেক্ষা করে। এই পাখিগুলো সাধারণত তীক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী। শকুনের গলা, ঘাড় ও মাথায় কোনো পালক থাকে না। প্রশস্ত ডানায় ভর করে আকাশে উড়ে। লোকচক্ষুর আড়ালে বড় বড় প্রাচীন বৃক্ষরাজিতে সাধারণত শকুন বাসা বাঁধে। গুহায়, গাছের কোটরে বা পর্বতের চূড়ায় ১-৩টি সাদা বা ফ্যাকাসে ডিম পাড়ে।

লাখ লাখ বছর ধরে শকুন প্রকৃতি থেকে মৃতদেহ সরানোর কাজ করে রোগব্যাধী থেকে মুক্ত পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। গবাধি পশুর মৃতদেহের রোগ-জীবাণু মরে না। এগুলো সংক্রমিত হয়। শকুন এগুলো খেয়ে ফেললে রোগ বিস্তার রোধ হয়। সারা বিশ্বে মোট ১৮ প্রজাতির শকুনের মধ্যে ৭ প্রজাতিই বাংলাদেশে পাওয়া যেত। তার মধ্যে বাংলা শকুন সবচেয়ে বেশি পরিচিত। কিন্তু হতাশার কথা, বিগত ৩ দশকে বাংলাদেশে প্রায় ৯৯ ভাগ শকুন মারা গেছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের আগেও বাংলাদেশে প্রায় ৫০,০০০ এর চেয়ে বেশি শকুন ছিল। এখন হাতে গোনা ৫০০ শকুনও নেই।

গবাদিপশুর ব্যথানাশক চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক' ও কিটোপ্রোফেনের' এর ব্যবহার শকুন বিলুপ্তের প্রধান কারণ। এসব গরু, মহিষ, ছাগলের মৃতদেহ খেয়ে কিডনি নষ্ট হয়ে অল্প সময়ের মধ্যে শকুন মারা যায়। ডাইক্লোফেনাফ' ও কিটোপ্রোফেন' ওষুধ এতই মারাত্মক যে এর মাত্র ৩০ মিলিলিটার দিয়ে ৫০০ শকুন মারা সম্ভব। এছাড়া নগরায়নের ফলে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে প্রাচীন বনাঞ্চল। ফলে শকুনের আবাসস্থল হয়ে উঠছে হুমকিস্বরূপ।

বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, শকুন না থাকার কারণে বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্স, যক্ষ্মা, ক্ষুরা রোগ ইত্যাদি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার এবং জলাতঙ্ক রোগ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে। শকুন না থাকায় গবাধিপশুর মৃতদেহ এখন শিয়াল, কুকুর, ইঁদুর, কাক, চিলসহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী খাচ্ছে। এদের পেটে রোগ জীবাণু নষ্ট না হওয়ায় জঙ্গল ও জনপদে ছড়িয়ে পড়ছে এসব মারাত্মক ব্যাধি।

এই মহাবিপন্ন পাখিটি রক্ষায় কিছুটা টনক নড়েছে প্রশাসনের। শকুন সংরক্ষণে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। নিষদ্ধি করা হয়েছে ডাইক্লোফেনাক'। কিন্তু কিটোপ্রোফেন' এখনও নিষদ্ধি না করায় শকুনের প্রজাতি এখনও নিরাপদ নয়। তবে শীঘ্রই কিটোপ্রোফেন' বন্ধ করা হবে এবং মেলোক্সিক্যামসহ অন্যান্য বিকল্প ওষুধ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে বলে আশা ব্যক্ত করেছে প্রশাসন। বিভিন্ন সভা, সেমিনারের মাধ্যমে শকুন রক্ষায় কি করণীয় এবং শকুনের উপকারিতা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা প্রশাসন ও সাধারণ জনগণের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। পালন করা হচ্ছে ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ব শকুন-সচেতনতা দিবস। বর্তমানে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংস্থা (আইইউসিএন, বন বিভাগ, বাংলাদেশ বন্য প্রাণী ট্রাস্ট ও বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাব) শকুন সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। সিলেট ও সুন্দরবনের কিছু অঞ্চলে এখনও যে কিছু সংখ্যক শকুন বেঁচে আছে তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ কতটুকু ফলপ্রসূ হবে এটাই এখন দেখার বিষয়।

আগে মৃত প্রাণী পড়ে থাকলে শকুনে ভোরে উঠত চারপাশ। এখন ৫-৬টি শকুন একসাথে দেখা প্রায় একটি অবিশ্বাস্য ব্যাপার। খুব দ্রুত শকুন সংরক্ষণে যদি জোরালো উদ্যোগ না নেয়া হয় তবে অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে এই মহাউপকারী শকুন।

(একে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test