E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাঙালির অস্তিত্বে একুশে ফেব্রুয়ারি 

২০২১ ফেব্রুয়ারি ১৯ ১৬:১৩:৫৫
বাঙালির অস্তিত্বে একুশে ফেব্রুয়ারি 

আবুল কালাম আজাদ : বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর ভাষাকে বাদ দিয়ে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করেছিল উর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা। আর সেই ঘোষণায় রুখে দাঁড়িয়েছিল বাঙালি। মাতৃভাষার জন্য রুখে দাঁড়ানোর সেই দিনটি ছিল ১৯৫২-র ২১ ফেব্রুয়ারি। তবে এর সূচনা ছিল অনেক আগেই। 

আদতে পাকিস্তানি শাসকরা ক্ষমতা রক্ষার মূল খুঁটি হিসেবে প্রথম থেকেই ধর্মের ব্যবহার করেছে। মুসলিম লীগ বিভাজনের কুমন্ত্রই সাধারণের কানে দিয়েছিল। যে মন্ত্রে হাজার বছরের ভরসা রাখা বাঙালি তাদের নিজস্ব পরিচয় ভুলে ধর্ম পরিচয়ে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। তবে ১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের কয়েকদিন পরেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ পরিষ্কার ভাবেই বুঝেছিলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র কখনোই এই বাঙালিদের জন্য কল্যাণকর হয়ে উঠবে না। আর সেটা হয়ওনি। সে কারণেই ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাংলার বদলে সেখানকার ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রের ভাষা বানানোর ষড়যন্ত্র শুরু করে। সংখ্যার দিক থেকে বাঙালিরা বেশি থাকলেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা সেই বাঙালির সংস্কৃতিকে আঘাতের সূচনা তার শিকড় ‘ভাষা’কে দিয়েই করল।

কিন্তু এই জনপদের মানুষই সেই দিন হয়ে উঠেছিলেন প্রতিটি বাংলা অক্ষরের পাহারাদার। বুকের রক্তে রুখে দিয়েছিল পাকিস্তানিদের অপচেষ্টা । মিছিলে নেমে এসেছিল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব স্তরের পড়ুয়ারা। সঙ্গে ছিল মাঠের কৃষক, কারখানার মজদুর থেকে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী— সবাই। ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে ছাত্রদের মিছিলে গুলি চললে ঢাকা নয়, পুরো জনপদ জুড়েই হয়েছিল জনবিষ্ফোরণ। যে বিষ্ফোরণ সামাল দেওয়ার ক্ষমতা কোনও শাসকেরই কখনো ছিলনা।

প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিশ্বজুড়ে ভাষা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সচেতনতা বাড়ানো এই দিবসটি উৎযাপনের মূল উদ্দেশ্য। ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে এটি ইউনেস্কো দ্বারা সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক ভাবে মাতৃভাষার ঘোষণা করা হয়েছিল। তার পর থেকে প্রতি বছর দিবসটি প্রতিটি দেশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একুশের লড়াই দেশের সীমানা অতিক্রম করেছে। ভাষার লড়াইটা হয়েছিল ঢাকাতে—কিন্তু সেই লড়াইয়ের বিস্তৃতি আজ গোটা বিশ্বে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ইউনেস্কো এবং জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থাগুলি বিশ্বজুড়ে সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বৈচিত্র্য প্রচার করতে অংশ নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমাদের দেশের মানুষ ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং স্মৃতিসৌধে ফুল ছিটিয়ে শহীদ মিনারে যান। এই সময়টি আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং বাংলার জাতীয় ভাষা উৎযাপন করার জন্য।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের দেশের শহীদ শিক্ষার্থীর স্মৃতিতে উৎযাপিত হয় যারা আমাদের মাতৃভাষার জন্য লড়াই করার সময় নিহত হয়েছিল। মাতৃভাষা উচ্চারণ করতে চাওয়া প্রতিটি মানুষের নিরন্তর যে লড়াই— তাতে সে দিন পাকিস্তানিদের বুলেটে হত রফিক, সালাম, জব্বার, বরকতেরা আজ বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে ভাষার জন্য শহিদ। ১৯৫২-র সেই জীবনদান বৃথা যায়নি। আর সে কারণে আফ্রিকার সিয়েরালিয়েনের শিশুরাও আজকের দিনে গেয়ে ওঠে— আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...!

(একে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test